তীর্থের নেশা যে স্বামীর জীবন কেড়ে নেবে, প্রয়াগের সঙ্গমস্থলে পৌঁছে তা ভাবতে পারেননি নৈহাটির মায়া রায়। মৌনী অমাবস্যার পুণ্য তিথিতে প্রয়াগে স্নানের মোহই টেনে এনেছিল গঙ্গাপারের বাসিন্দা মায়াদেবী ও তাঁর স্বামী গোবিন্দ রায়কে (৬১)।
ইলাহাবাদ স্টেশনের ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার আগেই রবিবার সকালে শাহীস্নানে যাওয়ার পথে ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় গোবিন্দবাবুর। জখম হন মায়াদেবী-সহ কয়েক জন। পুণ্যার্থীদের ভিড়ের মধ্যে থেকে কোনও রকমে ওই দম্পতিকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান মেলার লোকেরা। গোবিন্দবাবুর দেহে তখন প্রাণ ছিল না। মায়াদেবীর চিকিৎসা হয় ওই হাসপাতালেই। এই দুর্ঘটনা অবশ্য চাপা পড়ে গিয়েছিল রবিবার সন্ধ্যায় ইলাহাবাদ স্টেশনে ভিড়ে পদপিষ্ট হয়ে ৩৬ জনের মারা যাওয়ার ঘটনায়।
|
মৃত গোবিন্দ রায়।
—নিজস্ব চিত্র । |
গোবিন্দবাবুর মৃত্যুর খবর পেয়ে রবিবার রাতেই তাঁর দুই জামাই-সহ চার আত্মীয় ইলাহাবাদে যান।
সোমবার ময়না তদন্তের পরে স্থানীয় রসুলবাগ শ্মশানে দাহ করা হয় তাঁর দেহ। মঙ্গলবার দুপুরে নৈহাটির বিজয়নগরে গোবিন্দবাবুর বাড়িতে ছিল শোকের ছায়া। দুই মেয়ে সোমা ও টুম্পা বারবার বলছেন,‘‘ইলাহাবাদ স্টেশনে দুর্ঘটনার খবরই সবাই দেখাচ্ছে। আমাদের পরিবারের এত বড় অঘটনের কথা প্রথমে জানতেই পারিনি। সরকারি ভাবে এখনও সাহায্য করা হয়নি। আশ্বাসও পাইনি।’’ এ দিন সন্ধ্যায় গোবিন্দবাবুর বাড়িতে যান স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক পার্থ ভৌমিক। পার্থবাবু বলেন, ‘উত্তরপ্রদেশ সরকার কী করে দেখব। আমাদের দিক থেকে সব রকম সাহায্য করতে আমরা প্রস্তুত।’’ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মায়াদেবীকে নিয়ে ট্রেনে চেপেছেন আত্মীয়েরা। স্বামী নেই, এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না ওই প্রৌঢ়ার। শনিবার হাওড়া থেকে রাজধানী এক্সপ্রেসে ওঠার পরেও ১২ বছর আগে যাওয়া কুম্ভমেলার স্মৃতি হাতড়েছেন দু’জনে। হরিদ্বার, গঙ্গাসাগর কত জায়গাতেই তো যাওয়া হয়েছে ভিড় ঠেলে। অস্ফূটে মায়াদেবী মাঝেমাঝে তাই বলছেন, ‘‘এমনটা তো হওয়ার ছিল না!’ |