|
|
|
|
সীতানগর প্রাথমিক স্কুল |
শিক্ষকদের সদিচ্ছায় নতুন উড়ান স্কুলের |
অভিজিৎ চক্রবর্তী • ঘাটাল |
রাজ্যের প্রাথমিক বিদ্যালয় বলতেই চোখের সামনে যে ছবি ভেসে ওঠে, এই স্কুল তার থেকে কিছুটা আলাদা। মিড-ডে মিলের আশায় এই স্কুলের খুদে পড়ুয়ারা আসে না, তাদের টানে গল্পের বই। আর তার রসদ জোগায় স্কুলের গ্রন্থাগার। এই ছবি চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের সীতানগর প্রাথমিক স্কুলের। নামে প্রাথমিক হলেও এই স্কুলের গ্রন্থাগারে এমন অনেক বই রয়েছে যা অনেক মাধ্যমিক স্কুলেও বিরল। শিশু পাঠ্যের পাশাপাশি সেখানে হাজির শরৎচন্দ্র, বিভুতিভূষণ-এমনই অনেকে। আর এই উদ্যোগের নেপথ্য কারিগর হলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও কয়েকজন সহ-শিক্ষক।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, চন্দ্রকোনা শহর সংলগ্ন এই স্কুলটির জন্ম ১৯৫৪ সালে। বর্তমান পড়ুয়া সংখ্যা ৮৪। স্থানীয় ভগবানবাটি, সীতানগর ও ফাঁসিডাঙা- মূলত এই তিনটি গ্রামের শিশুরাই এই স্কুলে পড়াশোনা করে। স্কুলের অধিকাংশ পড়ুয়াই তফসিলি জাতি ও উপজাতির। জানা গেল, আগে প্রতিদিন স্কুলের মোট ছাত্র-ছাত্রীর ৩০ শতাংশের কম স্কুলে হাজির হত। কিন্তু প্রধান শিক্ষক শঙ্খরাজ মণ্ডলের স্কুলে যোগদানের পরেই বদলে যায় এই ছবি। ধীরে ধীরে স্কুলের শিক্ষকদের উদ্যোগ, এলাকার মানুষের আর্থিক সাহায্যে স্কুলে গড়ে ওঠে সীতানগর শিশু গ্রন্থাগার। গত বছরের শেষের দিকে উদ্বোধন হয় গ্রন্থাগারটির। নতুন এই গ্রন্থাগারটির বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা ছাত্র-ছাত্রী বাদে প্রায় শতাধিক। কে কী বই নিয়ে যাচ্ছেন, তা ঠিকঠাক ফেরত আসছে কি না তা লিখে রাখছেন স্কুলের শিক্ষকরাই। |
|
স্কুলের সামনে পড়ুয়ারা।—নিজস্ব চিত্র। |
তবে শুধু গ্রন্থাগারই নয়, শিক্ষকদের উদ্যোগে স্কুলে তৈরি হয়েছে ফুলের বাগান। এমনকী সরকারি সাহায্য ছাড়াই রয়েছে পানীয় জলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও। আর স্কুলের এই উদ্যোগে খুশি এলাকার বাসিন্দারা থেকে পড়ুয়াদের অভিভাবকরাও। স্থানীয় বাসিন্দা তথা অভিভাবক উত্তম পাল, কাশীনাথ রুইদাস, লক্ষ্মীকান্ত রুইদাসেরা বলেন, “প্রধান শিক্ষক আসার পর ছেলে-মেয়েরা নিয়মিত স্কুলে যায়। প্রথম প্রথম ওরা স্কুলে না গেলে উনি বাড়িতে ডাকতেও আসতেন।” এলাকার বাসিন্দা তথা ওই স্কুলের গ্রন্থাগারের গ্রাহক শক্তিপদ ঘোষ, লক্ষীকান্ত হালদারেরা বলেন, “এই স্কুল আমাদের গ্রামের অহঙ্কার। আমরা নিয়ম করে স্কুলে গিয়ে বই নিয়ে আসি। আবার ফেরতও দিয়ে আসি। যাতে গ্রন্থাগাটি আরও বড় হয়-তার চেষ্টা করছি আমরাও।” ঘটনায় খুশি চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) জয়দেব হাজরা। তিনি বলেন, “শুনেছি সীতানগর প্রাথমিক স্কুলে নিজেদের উদ্যোগে গ্রন্থাগার তৈরি হয়েছে। পড়াশোনা ও পরিবেশের উন্নতির কথা শুনে ভাল লাগছে।” স্কুল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন স্থানীয় ব্লকের বিডিও সৈকত হাজরা। বিডিও বলেন, “প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকদের চেষ্টায় এত কিছু সচরাচর দেখা যায় না। এটা ব্যতিক্রম।” স্কুলের প্রধান শিক্ষক শঙ্খরাজ মণ্ডল বলেন, “এবার আমার ইচ্ছা স্কুলে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলার। কারণ, স্কুলের সব ছাত্র-ছাত্রীদের টাকা খরচ করে কম্পিউটার শেখার মতো ক্ষমতা নেই। এখন থেকেই এলাকার মানুষের সাহায্য নিয়ে সেই লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা করছি।” নেই-নেই হাহাকারের সময়ে ভরসা থাকুক এই সদিচ্ছাই। |
|
|
|
|
|