প্রতিবন্ধকতা হারিয়ে দুনিয়া জয় পঞ্চমীর
স্কুলের পড়া বুঝতে অসুবিধা হত। মানসিক প্রতিবন্ধকতার আরও কিছু লক্ষণ ধরা পড়েছিল ছোটবেলাতেই। পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুরের প্রত্যন্ত সাতরাবাড় গ্রামের পঞ্চমী বর্মণকে নিয়ে তাই দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না বাড়ির লোকের। একদিন সেই মেয়েই যে দুনিয়া জয় করবেএমনটা বোধহয় স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি তাঁরা। যাবতীয় প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ফেলে আজ পঞ্চমীর গলায় স্পেশাল অলিম্পিকের স্বর্ণপদক দেখে তাই চোখে জল তাঁদের। স্পেশাল অলিম্পিক ওয়ার্ল্ড উইন্টার গেম ২০১৩-র ফ্লোর হকি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন ভারতীয় দলের একমাত্র বাংলার প্রতিনিধি পঞ্চমী সদ্যই ফিরেছেন বাড়িতে। এরপর থেকেই চলছে সংবর্ধনার পালা। বছর একুশের পঞ্চমী বিহ্বল হয়ে বলেন, “ভারতীয় দলে থাকতে পেরে আমি খুশি। আমার সাঁতার ও হকি দুটোই ভাল লাগে। তবে আমি আরও ভাল করে হকি খেলতে চাই।”
পঞ্চমীর বাবা ক্ষিতীশ বর্মনের সম্বল বিঘে খানেক ধান জমি। নরঘাটে এক মাঠের আড়তে সামান্য বেতনের চাকরিতে সংসার চলা দায়। এমন অনটনের মধ্যে প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না ক্ষিতীশবাবু। পরে পরিচিত এক জনের কাছ থেকে খবর পান তমলুকের নিমতৌড়ির এক প্রতিবন্ধী আবাসিক হোমের। ১৪ বছর বয়সে বাবা-মার হাত ধরে সেখানেই এসেছিলেন পঞ্চমী। দু’বছর হোমে থাকার পর স্পেশাল স্কুলে ভর্তি করা হয় তাঁকে। মানসিক বুদ্ধিতে দুর্বল হলেও খেলায় পঞ্চমীর আগ্রহ নজরে পড়ে প্রশিক্ষকদের।
পদক হাতে পঞ্চমী। —নিজস্ব চিত্র।
দৌড়, সাঁতার, হকি খেলায় দক্ষতার প্রমাণ দেয় আপাত লাজুক মেয়েটি। এখান থেকেই উত্তরণ শুরু। পড়াশোনার পাশাপাশি সমান তালে চলে সাঁতার কাটা, দৌড় ও হকির অনুশীলন। ২০০৮ সালে হরিয়ানার কারনালে প্যারা অলিম্পিকের জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় সাঁতারে চারটে বিভাগে যোগ দিয়ে তিনটিতে সোনা ও একটিতে রুপো জেতেন পঞ্চমী। হকিতেও নজর কাড়েন সকলের। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে সিমলায় ফ্লোর হকির প্রাথমিক বাছাই পর্বে উত্তীর্ণ হন তিনি। অগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে দিল্লিতে চূড়ান্ত বাছাই পর্বে ১৯ জনের ভারতীয় দলে স্থান করে নেন হকির মাঠে ফরোয়ার্ডে দাপানো পঞ্চমী। পঞ্চমীর তিন প্রশিক্ষক জয়দেব অধিকারী, শিউলি ভুঁইয়া, শ্যামলী মান্না জানান, স্পেশাল অলিম্পিকে ভারতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়ে কঠোর অনুশীলন করেছিলেন পঞ্চমী। পরিশ্রমের ফল মিলেছে হাতেনাতে। দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়ং চং-এ (২৯ জানুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি) স্পেশাল অলিম্পিক ওয়ার্ল্ড উইন্টার গেম ২০১৩-র ফ্লোর হকি প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলায় কেনিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারতীয় দল।
মেয়ের এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত ক্ষিতীশবাবু বলেন, “আমরা প্রথমে পঞ্চমীকে ঠিক বুঝতে পারিনি। এই হোমে না পাঠালে মেয়ের প্রতিভার কথা জানতেও পারতাম না। আশা করি, পঞ্চমী দেশের হয়ে খেলে আরও পদক জিতবে।” পঞ্চমী যে আবাসিকে থেকে পড়াশোনা-খেলাধুলো করেছে সেই তমলুক উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক যোগেশ সামন্ত বলেন, “আমরাও চাই পঞ্চমীকে দেখে অন্য প্রতিবন্ধী ও তাঁদের পরিবার এগিয়ে আসুক।”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.