দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
মোহনবাগান-১ (অনিলকুমার)
ভবানীপুর-১ (ব্যারেটো-পেনাল্টি) |
সারা জীবন লাল-হলুদ জার্সি গায়ে খেলার পর শেষ মরসুমে মহমেডানে সই করেছিলেন আমেদ খান। সাদা-কালো জার্সি গায়ে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে পেনাল্টি বাইরে মেরে চোখের জলে মাঠ ছেড়েছিলেন তিনি। পুরনো ফুটবল বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলেন, প্রিয় দলের বিরুদ্ধে পেনাল্টি মারতে হবে বলে সে দিন নাকি ইচ্ছে করেই তা বাইরে মেরে চাপমুক্ত হয়েছিলেন আমেদ।
মঙ্গলবার হোসে রামিরেজ ব্যারেটো অবশ্য আমেদ খান হননি। কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে সুপার নাইনের ম্যাচে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে অবশ্য ভবানীপুরের ব্যারেটো পেনাল্টিটা বাইরে মারেননি। বরং যুবভারতীতে ৭৮ মিনিটে পেনাল্টি থেকে সমতা ফিরিয়ে সতীর্থদের সঙ্গে উল্লাসে মাতলেন একদা মোহনবাগান সমর্থকদের প্রিয় ‘সবুজ-তোতা’। প্রিয় দলের বিরুদ্ধে পেনাল্টিতে গোল করতে গিয়ে আবেগ বাধা হচ্ছিল কি? খেলা শেষে ছেলে জোয়াওকে কোলে নিয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে ব্যারেটো বরং অবাক করে বললেন, “তা হবে কেন? তা হলে তো পেনাল্টিটা বাইরে চলে যেত। চার ম্যাচ পরে নেমে নিজেকে প্রমাণ করার একটা লড়াই ছিল আজ।” ব্যারেটো-পত্নী ভেরোনিকার গলাতেও একই সুর। |
টোলগেকে আটকাতে ডিফেন্ডারের ভূমিকায় ব্যারেটো।
মঙ্গলবার যুবভারতীতে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
আই লিগে অবনমন বাঁচাতে দরকার সঙ্ঘবদ্ধ মোহনবাগান। আর তার জন্য কলকাতা লিগ জয় সবুজ-মেরুন কোচ করিম বেঞ্চারিফার ‘টেস্ট পেপার’। দলের তাগিদ যখন এতটাই তখন ওডাফা দর্শকাসনে। মোহন কোচ বলছেন, “ওডাফার কাফ মাসলে চোট। তাই বিশ্রামে।”
ব্যারেটোদের বিরুদ্ধে তিন পয়েন্ট আনতে ৪-৩-৩ ছকে দল সাজিয়েছিলেন করিম। যেখানে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার ডেনসন। আর তাঁর বাঁ দিক এবং ডান দিকে কুইন্টন এবং মণীশ মৈথানি। এই তিনজনের না আছে গতি এবং না আছে ফরোয়ার্ড পাস। গোটা ম্যাচে বাগানের তিন মিডফিল্ডারই আক্রমণে উঠে নীচে নামতে দেরি করলেন বারবার। ফলে চাপ বাড়ছিল মাঝমাঠে। বাধ্য হয়ে করিম দ্বিতীয়ার্ধে গোলদাতা অনিল কুমারের জায়গায় রাকেশ মাসিকে নামিয়ে চলে গেলেন ৪-৪-২ ছকে। ব্যারেটোদের নবাগত ব্রাজিলীয় কোচ জুলিয়ানো এ সব দেখে একটা চালই দিলেন ধুরন্ধর করিম বেঞ্চারিফার বিরুদ্ধে। নামিবিয়ার রিচার্ডকে লাগিয়ে দিলেন টোলগের পিছনে। এতে বাগানের অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার বাঁদিকে সরে গিয়ে একদম নিষ্প্রভ হয়ে গেলেন। ফলে সাবিথ এবং তাঁর পরিবর্ত দীপেন্দুর সঙ্গে টোলগের পনেরো-বিশ গজের দূরত্ব তৈরি হয়ে যাওয়ায় চাপ পড়ল না ব্যারেটোদের রক্ষণে। উল্টে অরুণ পান্ডিয়া, উত্তম দেবনাথ, জগন্নাথ সানাদের পা ঘুরে মাঝমাঠ থেকে ব্যারেটোর পায়ে বল এলেই বারবার কেঁপে যাচ্ছিল বাগান রক্ষণ। এই সময়েই ৬৬ মিনিটে ব্যারেটোর ফ্রি-কিক পোস্টে লেগে না ফিরলে সমস্যা বাড়ত বাগানে।
এ রকম দিশাহীন ফুটবল খেলায় ৩৪ মিনিটে অনিল কুমারের গোলে এগিয়ে গিয়েও তাই জিতে ফেরা হল না করিমের দলের। দু’ ম্যাচে চার পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকায় আপাতত পঞ্চম স্থানে মোহনবাগান।
|
মোহনবাগান: শিল্টন, আইবর, ইচে, মেহরাজ (খেলেম্বা), স্নেহাশিস, মণীশ মৈথানি, ডেনসন, কুইন্টন, সাবিথ (দীপেন্দু), অনিলকুমার (রাকেশ মাসি), টোলগে। |