সকালে ইন্টারনেট ঘাঁটতে ঘাঁটতে একটা জিনিস চোখে পড়ল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ হোক কিংবা এফ এ কাপ, সাম্প্রতিক কালে দেখলাম স্যর অ্যালেক্স ফার্গুসনের টিম কোথাওই বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি। গত পাঁচ-ছ’বছরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অবস্থা বেশ খারাপ। যা দাপট, শুধু ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে। আগে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড মানে ছিল, বেকহ্যাম। রোনাল্ডো। বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ বিশ্বের সমস্ত বড় ক্লাব এক সময় ফার্গুসনের টিমকে দেখে কাঁপত। আর এখন দেখুন, রুনি ছাড়া সে ভাবে কেউ নেই। টিমটার ‘ব্র্যান্ড ভ্যালু’ পড়ে গিয়েছে। ভাল ফুটবলারের সংখ্যা কম, কেউ কেউ আবার বেশ বুড়ো। যেমন ফার্দিনান্দ।
আর বুড়ো ডিফেন্ডার দিয়ে সি আর সেভেনকে আটকানো যায়?
একে তো রিয়ালের টিমটাই দুর্ধর্ষ, সঙ্গে আবার জীবনের সেরা ফর্মের রোনাল্ডো। তার উপর বুধবার বের্নাবউয়ে হচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ প্রি কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম পর্ব। নিজেদের স্টেডিয়াম, প্রবল জনসমর্থন, চেনা মাঠ সব মিলিয়ে অবশ্যই রিয়াল কয়েক মাইল এগিয়ে।
|
কোচ হিসেবে স্যর অ্যালেক্স ফার্গুসনকে আমি অসম্ভব শ্রদ্ধা করি। বিশ্বাস করি, ওঁর মতো কোচ বিশ্ব ফুটবলে খুব কম এসেছে। বাকিদের চেয়ে ওঁর ফুটবল-দর্শন আলাদা। দীর্ঘ একুশ বছর ধরে কোচিং করাচ্ছেন। উনি টিম করেন দেশের স্বার্থ দেখে। ইংল্যান্ড ফুটবলের জন্য প্লেয়ার তুলতে। মোরিনহোর মতো বিশ্বের সেরা টিমগুলোর সেরা প্লেয়ারদের হাজির করিয়ে চ্যাম্পিয়নশিপ যুদ্ধে নামেন না। কিন্তু মুশকিল হল, এই ম্যাচে ফার্গুসনের মতো চাণক্যের স্ট্র্যাটেজিও ম্যাঞ্চেস্টারকে বাঁচাতে পারবে বলে মনে হয় না।
সোজাসুজি বলি, ম্যাচে রিয়াল ৬০-৪০ এগিয়ে। ফলাফল রোনাল্ডোদের পক্ষে ২-১ বা ৩-১ হতে পারে।
কেন বলছি?
জায়গা ধরে ধরে বলি। রিয়ালের ফরোয়ার্ড লাইন দেখুন। রোনাল্ডো, দি’মারিয়া। সঙ্গে বেঞ্জিমা নইলে ইগুয়াইন। লা লিগার শেষ ম্যাচে বেঞ্জিমা মোটেই ভাল খেলেনি। তাই ওর জায়গায় ইগুয়াইনকে শুরু করতে দেখলে অবাক হব না। তা ছাড়া ইগুয়াইনের স্কিল অনেক বেশি। |
পাশাপাশি ম্যাঞ্চেস্টারের ফরোয়ার্ড লাইনে কারা? রুনি, ওয়েলবেক, ফান পার্সি। রুনিকে এখনও আগুনে মনে হচ্ছে না। স্বমূর্তিতে ফিরতে ওর সময় লাগবে। ওয়েলবেক তুলনাতে আসে না। শুধু ফান পার্সিই বিশ্বের যে কোনও ক্লাবে খেলার ক্ষমতা ধরে। আর শুধু ফরোয়ার্ড লাইন নয়, মিডফিল্ড, ডিফেন্স কোথাওই ফার্গুসনের টিম এগিয়ে নেই। ম্যাঞ্চেস্টার ডিফেন্সে ভিডিচ, ফার্দিনান্দ, জোন্স থাকবে মনে হয়। তবে ওরা যদি ‘টিপ অব দ্য বক্স’ ডিফেন্স করতে যায়, ভোগান্তি আছে। বক্সের সামনে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থেকে নব্বই মিনিট রোনাল্ডোকে আটকানো যাবে না। ফাঁকা জায়গা পেলে রোনাল্ডো কিন্তু মারাত্মক। ওর গতি সামলাতে পারবে না ফার্দিনান্দরা। আটকাতে হলে মাঝমাঠে আটকাতে হবে রোনাল্ডোকে।
|
|
রোনাল্ডোর আবার একটা পুরনো হিসেবও মেটানোর আছে। সেটা ফার্গুসনের সঙ্গে। কোচের সঙ্গে ঝামেলার কারণে ম্যাঞ্চেস্টার ছাড়তে হয়েছিল রোনাল্ডোকে। নিজের পুরনো টিমকে পেলে ও কি আর ছেড়ে দেবে? সব মিলিয়ে যা দেখছি, তাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রেকর্ড, টিম, ফুটবলারদের ফর্ম, বয়স সবই রিয়ালের দিকে যাচ্ছে। দেখেশুনে ম্যাচের একটাই সম্ভাব্য নির্যাস মাথায় আসছে।
মোরিনহোর আক্রমণ বনাম ফার্গুসনের রক্ষণ। |