যে ইভেন্ট থেকে লন্ডন অলিম্পিকে দুটো পদক এসেছে ভারতের, যে ইভেন্ট ঘিরে তৈরি হচ্ছিল ভারতের ‘মিশন অলিম্পিক’, সেই কুস্তিকেই আচমকা ছেঁটে ফেলা হল অলিম্পিক থেকে।
আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ২০২০ অলিম্পিকে আর কুস্তি থাকবে না। সরকারি ঘোষণা হবে মে মাসে সিলমোহর পড়ার পর। সরকারি সিলমোহর একবার পড়ে গেলে শুধু আয়োজক দেশ চাইলেই তার পর কুস্তির অন্তর্ভুক্তি ঘটতে পারে অলিম্পিকে।
হঠাৎ করে কুস্তির উপর এই কোপ নেমে আসায় গোটা দেশের ক্রীড়ামহল স্তম্ভিত। খবরটা শুনে পর পর দুই অলিম্পিকে পদকজয়ী পালোয়ান সুশীল কুমার বলে ফেললেন, “কী বলছেন! কুস্তি অলিম্পিক থেকে বাদ! আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।”
তিন বছর বাদে রিও অলিম্পিকে শেষ বারের মতো লড়ার সুযোগ পাবেন সুশীল-যোগেশ্বররা। সুশীল বলছিলেন, “আধুনিক অলিম্পিকের শুরু থেকে কুস্তি রয়েছে। হঠাৎ এখন কেন এই সিদ্ধান্ত বুঝতে পারছি না।” একটু আগেই গুরু সতপাল সিংহের আখড়া থেকে বাড়িতে ফিরেছেন ভারতের সেরা কুস্তিগীর। একটু জিরিয়ে নিয়ে আক্ষেপের সুরে বললেন, “আমরা ভারতীয়রা যখন কুস্তিকে ফের জনপ্রিয় করে তুলতে পেরেছি, তখন এত বড় ধাক্কা খাব, কল্পনাও করতে পারিনি। ভারতে ক্রিকেট ছাড়া অন্য কোনও খেলাকে যারা পাত্তা দিত না, তারাও এখন কুস্তির প্রতি আগ্রহ দেখাত। এটাই আমাদের সাফল্য। কিন্তু এত সব কীসের জন্য করলাম?” |
এশিয়াডে সোনাজয়ী, বর্তমানে সুশীলদের কোচ সতপাল সিংহের সঙ্গে কথা বললেই পরিষ্কার হয়ে যায়, অলিম্পিকের নিরিখে ভারতের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ এই ইভেন্ট। যে পথে কুস্তি এগোচ্ছে এ দেশে, তাতে রিও থেকে ৬-৮টা পদক দেখতে পাচ্ছেন সতপাল। এবং তার পরের বার, অর্থাৎ ২০২০-তে সব কিছু ঠিকঠাক চললে নাকি আসতে পারত দশটারও বেশি পদক।
ভারতের আর এক অলিম্পিক পদকজয়ী কুস্তিগীর যোগেশ্বর দত্ত অবশ্য আশাবাদী। বলছিলেন, “বিশ্বের বেশির ভাগ দেশই কুস্তির সঙ্গে জড়িত। বাকি দেশগুলো এই সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না।”
টিভি রেটিং, টিকিট বিক্রির হার, ডোপিং বিরোধী নীতি, অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা ও সারা বিশ্বে জনপ্রিয়তার নিরিখে কুস্তিকে ২৬টি ‘কোর স্পোর্টস’-এর তালিকার বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইওসি এগজিকিউটিভ বোর্ড। সদস্যদের গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে এই সিদ্ধান্ত।
সরকারি সিলমোহর পড়ার আগে এই সিদ্ধান্ত বদল হওয়ার একটা রাস্তা অবশ্য আছে। মে মাসে সেন্ট পিটার্সবার্গে ফের বসবে আইওসি-র এগজিকিউটিভ বোর্ডের সভা। এই সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত বদলের আবেদন করতে হবে। এই আবেদন অবশ্য শুধু ভারত করলে হবে না, বিশ্ব কুস্তি সংস্থাকে করতে হবে। তবে শুধু কুস্তি নয়, আরও সাতটি খেলার জন্য এই একই আবেদন জানানো হবে। সেপ্টেম্বরে সেই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আটটির মধ্যে থেকে অলিম্পিকের জন্য বেছে নেওয়া হবে একটি খেলাকে। |
• ২০২০ -তে শেষ পর্যন্ত কুস্তি না থাকলে ওই অলিম্পিক বয়কট করা হোক। গীতা ফোগট (লন্ডন অলিম্পিকে অংশ নেওয়া মহিলা কুস্তিগীর)
• বুঝে উঠতে পারলাম না কেন এই সিদ্ধান্ত। আশা করছি বিশ্ব জুড়ে জনপ্রিয়তার কারণেই অলিম্পিকে কুস্তি থাকবে। সুশীল কুমার (লন্ডন অলিম্পিকে রুপো জয়ী কুস্তিগীর)
• আমার আখড়ায় এমন ১২-১৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে যারা আগামী দিনে অলিম্পিক থেকে পদক আনবে বলে আমার বিশ্বাস। কুস্তি বাতিল হয়ে গেলে ভারতের বিশাল ক্ষতি হবে। সতপাল সিংহ (সুশীল কুমারের কোচ)
• বর্তমান আইওসি প্রেসিডেন্ট জাক রগ কুস্তি সে ভাবে পছন্দ করেন না। কিন্তু আগামী দিনে তাঁর চেয়ারে যিনি বসবেন, তিনি কুস্তি পছন্দ করেন বলেই জানি। ইউরোপের কোনও দেশে ২০২০ অলিম্পিক হলে কুস্তি থেকে যাবে।
রাজ সিংহ (সর্বভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের মহাসচিব) |
|