নামনি অসম
পঞ্চায়েত ভোট বয়কট ঘিরে সংঘর্ষ, পুলিশের গুলিতে হত ১১
তৃতীয় পর্যায়ের পঞ্চায়েত নির্বাচনে আজ উত্তাল হয়ে উঠল নামনি অসমের গোয়ালপাড়া জেলা। রাভা বনাম অ-রাভা সম্প্রদায়ের সংঘর্ষ ও পুলিশের গুলিতে সরকারিভাবে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বেসরকারি সূত্রে সংখ্যাটি ১৬। জখমের সংখ্যা অন্তত ৫০। নিহতদের পরিবারপিছু ৫ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ ভোট পড়েছে কমবেশি ৬০ শতাংশ।
প্রায় মাসখানেক ধরে উত্তপ্ত রাভা-হাসোং এলাকা। পঞ্চায়েত নির্বাচন বাতিল করে অবিলম্বে রাভা-হাসোং স্বশাসিত পরিষদের নির্বাচন দাবি করছে রাভা-হাসোং যৌথ মঞ্চ। নির্বাচনের আগে গত ৪৮ ঘণ্টায় প্রায় ১৫টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র-সহ ২০টি সরকারি অফিস, স্কুল, একটি সিআরপি শিবিরে আগুন লাগানো হয়। গত কাল থেকেই রাভা-হাসোং স্বশাসিত পরিষদ এলাকাজুড়ে সব দোকানপাট বন্ধ। ৩৭, ৫১ ও ৬২ নম্বর জাতীয় সড়কে গাড়ি চলছে হাতেগোণা। কামাখ্যা-যোগিঘোপা লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ। ভোট বয়কট করে রাভা-হাসং যৌথ সংগ্রাম মঞ্চ আজ এলাকায় ‘জনতা কার্ফু’ ঘোষণা করে। এত কিছুর পরেও গোয়ালপাড়া, ধুবুরি, কামরূপে হিংসা-হত্যার ঘটনা সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের মন্তব্য, “নামনি অসম এমন অশান্ত হতে পারে তা আঁচ করা যায়নি।” খোদ মুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেস মেনে নেয়, পুলিশ ও গোয়ান্দাদের ব্যর্থতাতেই আজ গোয়ালপাড়ার অবস্থা সকাল থেকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এমনকী উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলিতে সেনা দূরের কথা, পর্যাপ্ত পুলিশ ও আধা সেনাও ছিল না।
গোয়ালপাড়ায় বিক্ষুব্ধ জনতা। মঙ্গলবার। ছবি: উজ্জ্বল দেব
সকালে ভোট শুরু হওয়ার পর থেকেই গোয়ালপাড়া, ধুবুরি, কামরূপের বিভিন্ন বুথ থেকে হামলার খবর আসতে থাকে। একের পর এক বুথ থেকে প্রিসাইডিং অফিসারকে বের করে দেওয়া হয়। দুধনৈতে এক প্রিসাইডিং অফিসারের পা ভেঙে দেওয়া হয়। তাঁকে ওই অবস্থায় প্রায় ৬ ঘণ্টা পড়ে থাকতে হয়েছে। গোয়ালপাড়ার হাঁহিমাতে প্রাথমিক স্কুল ও ডাকঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কৃষ্ণাইতে থানার সামনেই ভেঙে দেওয়া হয় সংবাদমাধ্যমের ওবি ভ্যান, পুলিশের দু’টি গাড়ি। খাতাড়িপাড়ায় প্রার্থীর বাড়িতে লাগানো হয় আগুন। বুধিপাড়া, কোচপাড়া, লালমাটিতে দা, লাঠি, কুড়ুল নিয়ে প্রতিবাদকারীরা একের পর এক বুথ দখল করে ব্যালট বাক্সে আগুন লাগাতে থাকে। আগিয়া, কুকুরাপাড়া, ডবকা, বকোর বাটাকুচি, ডেকাপাড়া, খাটালপাড়া, কোচপাড়া, ধুবুরির গোলকগঞ্জ, হাইলাকান্দির ৪২৪ নম্বর আনোয়ারপাড়া স্কুলেও ব্যালট কাড়া হয়। হাইলাকান্দির লালায় পুলিশ ছয় রাউন্ড গুলি চালায়। সেখানে ন’টি কেন্দ্রে ফের ভোট নেওয়া হবে। তুলনায় স্বল্প সংখ্যক পুলিশকর্মীর নীরব দর্শক হয়ে থাকা ভিন্ন উপায় ছিল না। প্রিসাইডিং অফিসাররা কোনও মতে প্রাণ হাতে পালান। বিভিন্ন স্থানে, মাঠে, বাঁশ কেটে রাখা হয়। পুলিশ এলেই সেই বাঁশ একের পর এক ছুড়ে মারা হয়। এরপরেই পুলিশ ও আধা সেনাও গুলি চালাতে শুরু করে। কাহিবাড়িতে এক মহিলাসহ ৩ জন, কাছাদলে ২ জন, ধনুভাঙায় ৩ জন মারা যান। রাক্ষসিনীতে রাভা ও অ-রাভাদের মধ্যে সংঘর্ষে ২ জনের মৃত্যু হয়। চিলুকে ১ জন, কাঠালমুড়িতে ২ জনের মৃত্যু হওয়ার খবর আসে। লক্ষ্মীপুরে পেট্রোল বোমা মারতে এসে গণপ্রহারে দুই যুবকের মৃত্যু হয়। সেখানে পুলিশের হাত থেকে দু’টি রাইফেল কেড়ে নেওয়া হয়। পোড়ে বহু বাস।
মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেন, “যা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এতটা বাড়াবাড়ি হবে ভাবা যায়নি। কারা কোথা থেকে এসে আক্রমণ করবে তা আগে থেকে জানা সম্ভব নয়। রাজ্য গণতন্ত্রের নিয়ম মেনেই ভোট করেছে। রাভা-হাসোং স্বশাসিত পরিষদে এরপরেই ভোটগ্রহণ হত। কিন্তু অযথা অশান্তি সৃষ্টি করা হল।” ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত হবে বলেও মুখ্যমন্ত্রী জানান। বহু এলাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে ভোট গ্রহণ হয়নি। নিহতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ ও জখমদের ৫০ হাজার টাকা সাহায্য দেওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন। বিরোধী দল অসম গণ পরিষদের সভাপতি প্রফুল্ল মহন্ত বলেন, “রাভা-হাসোং এলাকা কতটা উত্তপ্ত সকলেই জানত। আমার এই পরিস্থিতিতে সেখানে ভোট করতে নিষেধ করি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর জেদ ও অপরিণামদর্শিতার ফলেই এতগুলি জীবন গেল। ঘটনার নৈতিক দায় নিয়ে গগৈয়ের সরে যাওয়া উচিত।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.