কিছু দিন আগের বিধাননগর কলেজের মতোই ছবিটা। মূল গেট ভিতর থেকে তালা দেওয়া। ভিতরে টিএমসিপি। বাইরে এসএফআই। টিএমসিপি-র সমর্থকদের দাবি, বাইরের ভিড়টা বহিরাগতদের, তাঁদের ঢুকতে দেওয়া যাবে না। বাইরে থেকে এসএফআই সমর্থকদের পাল্টা দাবি, তাঁরা কলেজেরই ছাত্র। কলেজের ভিতরে বহিরাগতেরা, যাঁরা তাঁদের ঢুকতে দিচ্ছেন না।
এর মধ্যেই ডিরোজিও কলেজ চত্বরে এসে দাঁড়াল একটি গাড়ি। নামলেন একদল এসএফআই সমর্থক, সঙ্গে কয়েক জন ছাত্রছাত্রী। শুরু হল তারস্বরে চিৎকার, “আমাদের ভিতরে ঢুকতে দিতে হবে। মনোনয়নপত্র তুলতে এসেছি।” সঙ্গে সঙ্গেই ওই গাড়ির উপরে কার্যত ঝাঁপিয়ে পড়লেন কিছু লোক। শুরু হয়ে গেল মারপিট। রাস্তায় পুলিশ তখন কার্যত দর্শকের ভূমিকায় ছিল বলে অভিযোগ।
মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকেই কলেজ-নির্বাচনের মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে এ ভাবেই অশান্ত হয়ে উঠেছে রাজারহাটের ডিরোজিও কলেজ চত্বর। কলেজে তাঁদের ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগে রাজারহাট রোডে আধ ঘণ্টা অবরোধও করেন এসএফআই-সমর্থকেরা। টিএমসিপি এবং এসএফআই— দু’পক্ষেরই অভিযোগ, মনোনয়নপত্র জমা দিতে তাদের বাধা দেওয়া হয়েছে।
এসএফআই-এর অভিযোগ, তাদের চার জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র তুলতে গিয়ে কিল-চড়-ঘুষি খেয়েছেন। এমনকী, রড দিয়েও পেটানো হয়েছে। কিংশুক নস্কর, তাপস সর্দার, প্রিয়ঙ্কা বর্মণ ও মুনমুন চক্রবর্তী নামে ওই চার জনকে বাগুইআটি দেশবন্ধুনগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে কিংশুক ও তাপসকে সেখানে ভর্তি করা হয়েছে। অন্য দিকে, টিএমসিপি-র অভিযোগ, শুভজিৎ ও অমিত নামে তাদের দুই প্রার্থীকে রাস্তাতেই আটকে রাখে এসএফআই। তাঁদের মারধর করে মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।
দুই তরফেরই অভিযোগ, কলেজ চত্বরে বহিরাগতদের ঢুকিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করে গোলমাল পাকানো হয়েছে। কলেজের গেট কে বন্ধ করেছে— এর উত্তরে কলেজের অধ্যক্ষ দিব্যেন্দু তলাপাত্র বলেন, “কারা গেট বন্ধ করেছে জানি না। আমি এ রকম কোনও নির্দেশ দিইনি। কলেজের ভিতরে পরিস্থিতি ঠিকই ছিল। বাইরে কী হয়েছে, জানি না।”
কলেজ ও কলেজ চত্বরের বাইরে যে বহিরাগতেরা ভিড় করেছিলেন, তা স্পষ্ট। কলেজ চত্বরের আশপাশে বেশির ভাগই ছিলেন টিএমসিপি-র সমর্থক। আর কলেজের বাইরে একটু দূরে বাবলাতলায় লোকজন নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার সিপিএম চেয়ারম্যান তাপস চট্টোপাধ্যায়। তাপসবাবু অভিযোগ করেন, “এসএফআই-এর ছাত্ররা কলেজের গেটের সামনে গেলেই টিএমসিপি-র লোকজনদের পেটাচ্ছে। আমাদের প্রার্থীদের কিল, চড়, ঘুষি মেরে জখম করা হয়েছে।” অন্য দিকে, ওই কলেজে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক, টিএমসিপি-র প্রীতম ধর বলেন, “ওরা সকাল থেকে বহিরাগতদের নিয়ে এসে কলেজ দখলের চেষ্টা করছে। কোনও মতে আটকাতে পেরেছি। আমরা কাউকেই মারধর করিনি। যারা সত্যিই কলেজের ছাত্রছাত্রী, তাদের সবাইকে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে।”
এ দিন সকাল থেকেই ডিরোজিও কলেজ চত্বরে ছিল বিমানবন্দর ও রাজারহাট থানার পুলিশবাহিনী। ঘটনাস্থলে ছিলেন বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি সন্তোষ নিম্বলকর-সহ উচ্চপদস্থ পুলিশকর্তারা। সন্তোষবাবু বলেন, “কিছু বহিরাগত বাইরে থেকে কলেজে ঢোকার চেষ্টা করছিল। আমরা তাদের কলেজ চত্বরের বাইরে বার করে দিয়েছি।” এসএফআই সমর্থকেরা, যাঁরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসেছিলেন, তাঁদের পুলিশের জিপে করে কলেজ চত্বর থেকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়।
সোমবার থেকে বুধবার এই কলেজে মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা দেওয়ার দিন। কলেজ-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সোম ও মঙ্গলবার মিলিয়ে এসএফআই আটটি মনোনয়নপত্র জমা দিতে পেরেছে। তৃণমূল জমা দিয়েছে ২০টির মতো। বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনেও কলেজে গোলমালের আশঙ্কায় পুলিশ মোতায়েন করা হবে বলে জানা গিয়েছে।
|