পুলিশে-পুলিশে ছয়লাপ রাস্তাঘাট। যেন অঘোষিত কার্ফু চলছে। থানার চারপাশ ঘিরে রাজ্য ও কলকাতা পুলিশের কর্মীরা। তাঁদের হাতে লাঠি, মাথায় হেলমেট। থানার সামনে বড় রাস্তায় ইতস্তত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অসংখ্য জুতো ও কংগ্রেসের পতাকা। রাস্তায় নেই কোনও যানবাহন। কার্যত নেই কোনও পথচারীও। নিতান্তই প্রয়োজনে যাঁদের যাতায়াত করতে হচ্ছিল, মাথার উপরে হাত তুলে যাচ্ছিলেন তাঁরা। রাস্তার দু’পাশের দোকানপাট থেকে শুরু করে বন্ধ ছিল সব বাড়ির দরজা-জানলাও। তবে মাঝেমধ্যেই জানলা সামান্য খুলে ঘরের ভিতর থেকে উঁকি মেরে বাইরের পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছিলেন কেউ কেউ। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ এ রকমই চেহারা ছিল মেটিয়াবুরুজ থানা সংলগ্ন এলাকার। সরকারি ভাবে ঘোষণা করা না হলেও কার্যত ওই এলাকা ছিল ‘কার্ফু’র কবলে।
এর কিছু আগেই হরিমোহন ঘোষ কলেজের সামনে বোমা-গুলি চলার প্রতিবাদে মেটিয়াবুরুজ থানা ঘেরাও করেছিলেন কংগ্রেসের সমর্থকেরা। পুলিশ লাঠি চালিয়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে। ওই কলেজের পাশেই গলির ভিতরে বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি। সোমবার রাত থেকেই এলাকায় উত্তেজনা ছিল বলে পুলিশ সূত্রের খবর। তা চরম মাত্রা পায় এ দিন বোমা-গুলি চলায়।
কলেজ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র তোলার দিন থাকায় বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও কলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ‘টেস্ট’ পরীক্ষা থাকলেও আগেই তা পরিবর্তন করা হয়েছিল। তবে এ দিন গণ্ডগোলের জেরে কোনও ক্লাস বাতিল করা হয়নি বলে দাবি টিচার ইন-চার্জ বিজয় আচার্যের। তিনি আরও দাবি করেন, সকাল থেকেই কলেজের সামনে রাজনৈতিক দলের জটলা ও প্রচুর পুলিশ থাকায় অধিকাংশ পড়ুয়া ভয়ে কলেজে আসেননি। তাই কলেজ প্রায় ফাঁকাই ছিল। এই কলেজে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার।
|
চলছে পুলিশি টহল। দু’হাত তুলে সাবধানী যাতায়াত এলাকার
বাসিন্দাদের। মঙ্গলবার, গার্ডেনরিচে। ছবি: রণজিৎ নন্দী |
যে কলেজের ছাত্র সংসদের মনোনয়নপত্র তোলা নিয়ে এলাকায় এত বড় গণ্ডগোল, সেখানকার চেহারা এ দিন কেমন ছিল?
দুপুর তখন দেড়টা। কলেজের সামনে কংগ্রেস-তৃণমূলের বোমাবাজি ও গুলির লড়াই থেমেছে কিছুক্ষণ আগেই। তবে রাস্তায় তখনও পড়ে রয়েছে বোমার প্রচুর খোল। রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় বারুদের দাগ। চার দিকে টহল দিচ্ছে পুলিশ। কলেজ থেকে মনোনয়নপত্র তুলে বেরিয়ে যাচ্ছেন পড়ুয়ারা। ঠিক তখনই ঢোকা গেল কলেজের ভিতরে।
দোতলা কলেজের একতলায় ছিল পুলিশি পাহারা। সাংবাদিক পরিচয় দিলে তবেই ভিতরে ঢোকার অনুমতি মিলছে। কলেজের দোতলার টিচার্স রুমে তখনও চোখেমুখে আতঙ্ক নিয়ে বসে রয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। ততক্ষণে কলেজের গণ্ডগোলের ছবি টিভিতে সম্প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছে। আর তা দেখেই অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকার বাড়ি থেকে ফোন আসতে শুরু করেছে। জানতে চাওয়া হচ্ছে তাঁরা কেমন আছেন? উদ্বিগ্ন ভাবে শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানাচ্ছেন ‘আপাতত গণ্ডগোল থেমেছে।’ কেউ কেউ আবার নিজেরাই বাড়িতে ফোন করে জানাচ্ছেন তাঁদের খবর।
এ দিন টিচার্স রুমে বসে ওই কলেজের শিক্ষিকা অনসূয়া হালদার জানান, ২০১০ সালেও ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই কলেজে এ রকম গণ্ডগোল হয়েছিল। এ দিন ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বেশ কমই ছিল। তবে তিনি কলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছ’জন ছাত্রীকে নিয়ে ক্লাস করাচ্ছিলেন। নীচে প্রচুর পুলিশ দেখে গণ্ডগোলের আশঙ্কা করে ১১টা নাগাদ ওই ছাত্রীদের বাড়ি চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। আর এক শিক্ষিকা রুনা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ভয় তো একটা হচ্ছে। কখন বেরোতে পারব বুঝতে পারছি না।” |