আরও এক বার মুখ পুড়ল তৃণমূল কংগ্রেসের।
গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজে ছাত্রভোট নিয়ে গোটা এলাকা যখন উত্তেজনায় টানটান, সেই অবস্থায় সোমবার রাতে কলেজের প্রায় উল্টো দিকেই পাহাড়পুর রোডের একটি নির্মীয়মাণ তেতলা বাড়ি কেঁপে উঠল বিস্ফোরণে। স্থানীয় বাসিন্দা এবং পুলিশ দোতলায় উঠে দেখেন, তিন যুবক ঝলসে গিয়েছেন বোমায়। তাঁদের মধ্যে এক জনকে চিনতে পারলেন অনেকেই। তিনি স্থানীয় (১৩৩ নম্বর ওয়ার্ড) তৃণমূল কাউন্সিলর রঞ্জিত শীলের ছেলে অভিজিৎ শীল। তাঁর শরীরের উপরের অংশ পুড়ে গিয়েছে। তিন জনকেই নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। পিজি সূত্রের খবর, তিন জনের শরীরের ৫০% পুড়ে গিয়েছে। অভিজিতের দগ্ধ হওয়ার মাত্রা সব চেয়ে বেশি। শুধু হাত নয়, তাঁর শরীরের ঊর্ধ্বাংশের অনেকটাই পুড়ে গিয়েছে। ঝলসে গিয়েছে মুখ। একটি চোখও ক্ষতিগ্রস্ত।
পুলিশ জানায়, অভিজিতের সঙ্গে আহত অন্য দু’জনের নাম নুর আলম ও অরিজিৎ বসু। তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশের দাবি, বোমা বানাতে গিয়ে তা ফেটে গিয়েছিল। তাতেই আহত হন তিন যুবক। হরিমোহন কলেজের নির্বাচনের জন্যই বোমা বানানো হচ্ছিল বলে স্বীকার করেছেন আহতদের এক জন।
মঙ্গলবার বিকেলে বার্ন ইউনিটের শয্যায় শুয়ে অভিজিৎ অবশ্য দাবি করেন, তিনি এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন। তাঁর কথায়, “ওই ঘরে বোমা বাঁধা হচ্ছিল। আমি ঢুকে পড়েছিলাম। তখনই বোমাটা ফাটে। আর কিছু মনে নেই।” তিনি ওই ঘরে ঢুকেছিলেন কেন? অভিজিৎ আর কোনও কথা বলতে চাননি। আহত নুর ও অরিজিতের সঙ্গে কথা বলতে দেননি চিকিৎসকেরা। পুলিশি সূত্রের খবর, ওই দু’জন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মী। বোমা বানানোর সময় উপস্থিত বুড়ো নামে অন্য এক তৃণমূলকর্মী পরে পালিয়ে যান বলে জানায় পুলিশ।
অভিজিতের বাবা, তৃণমূল কাউন্সিলর রঞ্জিতবাবু যা বলছেন, তার সঙ্গে পুলিশ ও অভিজিতের বয়ান মিলছে না। রঞ্জিতবাবুর অভিযোগ, “ভোটে দাদাগিরি করতে চায় ছাত্র পরিষদ। ওদেরই আশ্রিত দুষ্কৃতী মোক্তার আমার ছেলেকে বোমা মেরেছে।” মোক্তার কী ভাবে দোতলায় উঠে হামলা চালাল, তার ব্যাখ্যা দিতে পারেননি কাউন্সিলর। তিনি বলেন, “ঘটনাটা কখন ঘটেছে, বলতে পারব না। আমি তখন ছিলাম না।” মোক্তারের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাননি রঞ্জিতবাবু। কেন? তিনি কি চান না, ছেলের উপরে হামলাকারীরা ধরা পড়ুক? তৃণমূল কাউন্সিলর বলেন, “সময় পাইনি। ছেলেকে নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম।”
রঞ্জিতবাবুর দাবি অবশ্য পুরোপুরি অস্বীকার করছে পুলিশ। তাদের বক্তব্য, বোমা তৈরির সময়েই কোনও ভাবে বিস্ফোরণ ঘটে। বম্ব স্কোয়াড ঘটনাস্থলে দু’টি তাজা বোমা ও দু’টি মোবাইল পেয়েছে। যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) পল্লবকান্তি ঘোষ জানান, তদন্ত চলছে। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে আহতদের জেরা করা হবে।
গার্ডেনরিচের বাসিন্দাদের অভিযোগ, হরিমোহন কলেজে প্রতি বারেই নির্বাচনে অশান্তি হয়। বোমাবাজিতে রাতে ঘুম হয় না। বাম আমলে এসএফআই তাণ্ডব চালাত। তাদের মূল প্রতিপক্ষ ছিল ছাত্র পরিষদ। পরিবর্তনের পরে এসএফআইয়ের জায়গা নিয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি। তাদেরও মূল প্রতিপক্ষ ছাত্র পরিষদ। স্থানীয় তৃণমূল নেতারা বলছেন, কংগ্রেস অস্তিত্ব বাঁচাতে সিপিএমের সাহায্য নিচ্ছে। সিপিএমের দুষ্কৃতী মোক্তার যোগ দিয়েছে কংগ্রেসে। এলাকার এক শিক্ষক বলেন, “কলকাতার অন্য কোথাও কংগ্রেসের পায়ের তলায় মাটি না-থাকলেও এই এলাকায় তারা যথেষ্ট শক্তিশালী। বাম আমলে সিপিএম তাতে ভাগ বসানোর চেষ্টা করেছিল। আর এখন সেটাই করছে তৃণমূল।” তবে এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন হরিমোহন কলেজের পাশের গলির বাসিন্দা, বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন গোলমাল বাধার কিছু আগে, সকাল ১০টা নাগাদ বিধানসভায় যান তিনি। রাতে বলেন, “আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।” |