ইবনের সূত্রেই উত্থান সুহানের
বিস্ফোরণে জখম পাশের ওয়ার্ডের ওরা, তাই আসরে

দৃশ্য এক: মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা। কয়েকশো লোকের চোখের সামনে লাল ডোরাকাটা শার্ট পরা এক যুবকের ওয়ান শটার থেকে ছুটে আসা গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের সাব-ইনস্পেক্টর তাপস চৌধুরী। বিস্ময়ের প্রাথমিক ধাক্কা সামলে পুলিশ ধরেও ফেলল সেই যুবককে।
মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ফের বিস্ময়। পুলিশকর্মীরা দেখলেন, তাঁদের কর্তাদের সামনেই এক ব্যক্তি সদলবল এসে ছাড়িয়ে নিয়ে গেলেন তাকে! নিহত অফিসারের সহকর্মীরা তখনই বুঝে গেলেন, গোলমালের কুশীলব কারা। পুলিশের নিচুতলায় তত ক্ষণে ছড়িয়ে পড়েছে খবর লাল ডোরাকাটা শার্টকে ছাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছেন ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর, পুরসভার ১৫ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্না।
পুলিশের অবাক হওয়ার আরও অনেক কিছুই তখনও বাকি ছিল। তাপসবাবুর সহকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, যেখানে গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়েছিলেন তিনি, মিনিট পনেরোর মধ্যেই সেখান থেকে মিটার তিরিশেক দূরে দাঁড়িয়ে বরো চেয়ারম্যানের সঙ্গে হেসে গল্প করছিল লাল ডোরাকাটা শার্ট! সঙ্গে ছিল আরও দু’জন। পুলিশ কর্মীরা জানাচ্ছেন, গার্ডেনরিচ কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ওই লাল ডোরাকাটা শার্ট পরা যুবকের নাম শেখ সুহান। সঙ্গে ছিল তার কাকা ও এ দিনের ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত ইবনে এবং আরও এক অভিযুক্ত ফিরোজ।
তত ক্ষণে চ্যানেলে-চ্যানেলে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা ঘটনার ছবি। তাতে দেখা যায়, কয়েকশো লোকের চোখের সামনেই গুলি চালিয়েছে লাল শার্ট পরা যুবক, সুহান। তখনও কিন্তু সুহান-ইবনেদের ফের ধরার প্রয়োজন মনে করেননি ঘটনাস্থলে হাজির পুলিশের পদস্থ কর্তারা। ঘণ্টা তিনেক পর লালবাজারের শীর্ষস্তর থেকে নির্দেশ যায়, যে করে হোক, সুহান, ইবনে ও ফিরোজকে ধরতে হবে। কিন্তু তত ক্ষণে তারা পগার পার! শেষ পর্যন্ত সুহান, ইবনে এবং তাদের দুই সঙ্গী আবদুল মতিন ওরফে রাজু ও গোলাম তালিব ওরফে আফতাবকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তবে ফিরোজকে রাত পর্যন্ত ধরা যায়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, কাকা ইবনের হাত ধরেই উত্থান সুহানের। ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাতিকল এলাকার বাসিন্দা, ৩৭ বছরের ইবনের নাম গার্ডেনরিচ থানার ‘রাফ রেজিস্টার’ অর্থাৎ দুষ্কৃতী তালিকায় কয়েক বছর ধরে রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ইবনে বাতিকল এলাকায় তৃণমূলের শাখা সম্পাদক। তবে যে-কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নকে ঘিরে এই কাণ্ড, সেই হরিমোহন ঘোষ কলেজ কিন্তু তার এলাকা নয়। কলেজটি ১৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। কী এমন হল যে, পাশের ওয়ার্ডের গোলমালে জড়িয়ে পড়লেন বরো চেয়ারম্যান ও ইবনে-সুহানরা? পুলিশের বক্তব্য, সোমবার রাতে পাহাড়পুর রোডের নির্মীয়মাণ বাড়িতে বোমা বাঁধতে গিয়ে বিস্ফোরণ এবং ওই ঘটনায় ১৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রঞ্জিত শীলের ছেলে অভিজিৎ ও তার সঙ্গীদের জখম হওয়ার ঘটনাই সব হিসেব পাল্টে দিয়েছিল।
পুলিশ জেনেছে, এ বার হরিমোহন ঘোষ কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে মর্যাদার লড়াই হিসেবে নিয়েছিলেন রঞ্জিৎবাবু। গত বছর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছাত্র সংসদের দখল নিয়েছিল তৃণমূল ও কংগ্রেসের জোট। তার আগের বছর, ২০১১ সালে ছাত্র সংসদের নির্বাচনকে ঘিরে ওই কলেজে গণ্ডগোল হয় এবং সেই সময়ে ইবনেদের প্রতিপক্ষ দুষ্কৃতী-দলের পাণ্ডা, মোক্তার গুলিও চালায় বলে অভিযোগ। পুলিশের বক্তব্য, মোক্তার তখন ছিল সিপিএমের আশ্রয়ে। সে বার এসএফআই ছাত্র সংসদের দখল নেয়। পুলিশের বক্তব্য, মোক্তার এখন কংগ্রেসে যোগ দিয়েছে। তার পরেই ছাত্র পরিষদ এলাকায় টিএমসিপি-র সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
লালবাজার সূত্রের খবর, মূলত নিজের ওয়ার্ড নিয়ে ব্যস্ত থাকা মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্না এবং ইবনে-র মত ছিল, মনোনয়ন জমা করার সময়ে গণ্ডগোল না করাই ভাল। পুলিশের বক্তব্য, সোমবার রাতে অভিজিতরা জখম হওয়ায় বিপাকে পড়ে যান রঞ্জিতবাবু। আর তখনই ত্রাতা হিসেবে উদয় হয় মুন্না। সকাল থেকে খোলা পিস্তল হাতে দাপাদাপি শুরু হয় ইবনে, সুহানদের। এ সব দেখেও তখন দেখেনি পুলিশ। ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার এক অফিসারের কথায়, “সিনিয়র অফিসারদের নির্দেশ না-পেলে আমাদের কী করার আছে?”
পুলিশকে নিষ্ক্রিয় দেখে আসরে নেমেছিল মোক্তারও। তদন্তকারীরা জেনেছেন, মূল গণ্ডগোলের সূত্রপাত হয় ইবনের শাগরেদ ফিরোজ দু’টি বোমা ছোড়ার পর। ইবনরা রটিয়ে দেয়, ওই বোমা ছুড়েছে মোক্তার। পুলিশ সে দিকে ব্যস্ত হয়ে পড়লে ইবনে, সুহানরা পুরোদস্তুর অ্যাকশনে নামে। পাল্টা গুলি, ছোটাছুটি আতঙ্কের মধ্যেই গুলিতে লুটিয়ে পড়েন তাপস চৌধুরী। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অভিযোগ, সুহানের গুলিতেই মারা গিয়েছেন তাপসবাবু।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.