শেষমেশ মাটি উৎসবে লোক টানল প্রশাসনের নামানো বিশেষ বাস।
উৎসব উদ্বোধনের পরের দিন রবিবার হওয়া সত্ত্বেও যখন স্টলের পর স্টল ফাঁকা পড়ে থেকেছে, এখন একেবারে উল্টো ছবি। এক ধাক্কায় ভিড় বেড়ে গিয়েছে কয়েক গুণ।
মাটি উৎসব যেখানে হচ্ছে, সেই বিরুডিহার দূরত্ব দুর্গাপুর থেকে ১৫ কিমি, পানাগড় থেকে ৩ কিলোমিটার। অধিকাংশ বাস সেখানে দাঁড়ায় না। পথের এই কাঁটা উপড়ে ফেলতে সোমবার থেকে বিশেষ বাস পরিষেবা চালু করেছে প্রশাসন।
গঙ্গাসাগরের জন্য যেমন হাওড়া, শিয়ালদহ, ধর্মতলা থেকে পুণ্যার্থী বোঝাই বাস ছাড়ে, তেমনই মাটি উৎসবের জন্য বিশেষ বাস ছাড়ছে দুর্গাপুর, বর্ধমান ও আসানসোল থেকে। দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম থেকে বাস ভাড়া নেওয়া হয়েছে। বাস অবশ্য ফ্রি নয়, টিকিট কেটেই উঠতে হচ্ছে। কিন্তু যাতায়াতের সমস্যা হবে না বুঝে অনেকেই মেলামুখো হয়েছেন।
মঙ্গলবার উৎসব প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন স্টলে উৎসাহীদের ভিড়। আর পাঁচটা মেলার মতো সকলেই কেনাকাটায় ব্যস্ত। মাটি উৎসবের তাৎপর্য বা ব্যাপকতা নিয়ে কারও আগ্রহ নেই। বরং পিঠে-পুলির স্টলে খাইয়েরা গুঁতোগুঁতি করছেন। ঢেঁকিতে চাল গুঁড়োনো থেকে পিঠে তৈরির পুরো প্রক্রিয়া হাতে কলমে দেখানোর ব্যবস্থাও রয়েছে এই স্টলে। দুর্গাপুরের শ্যামপুর থেকে আসা স্বস্তিকা মণ্ডলের গলায় তৃপ্তি, “এই পিঠের তাজা স্বাদ ভোলার নয়।” |
মাটি উৎসবে পিঠে গড়ছেন উত্তর ২৪ পরগনার হাবরা থেকে আসা সুনীতা দাস।
মঙ্গলবার ছবি তুলেছেন সুদীপ্ত ভৌমিক। |
সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়েছে ক্ষুদ্র ও বস্ত্র শিল্প দফতরের স্টলে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে সেই ভিড় আরও বেড়েছে। উদ্যোক্তাদের দাবি, সোমবার রাত পর্যন্ত প্রায় ৫ লক্ষ ১১ হাজার টাকার বিক্রি হয়েছে। এখানেই স্টল দিয়েছে ‘তন্তুজ’। শাড়ি বিক্রির ফাঁকে বর্ধমানের আধিকারিক প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, সবচেয়ে কম দামে পছন্দের শাড়ি মিলছে এখানেই। কেনার পরে গলদ ধরা পড়লে দুর্গাপুর বা বর্ধমানের স্থায়ী শো-রুমে গেলেই বদলে দেওয়া হবে।
অ্যাগ্রো-ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন লিমিটেডের স্টলে সাজানো রয়েছে জমি চাষ করার ‘পাওয়ার টিলার’, ধান ঝাড়াইয়ের ‘পাওয়ার রিপার’, ধান রোপনের যন্ত্র ‘ড্রাম সিডার’ ইত্যাদি। পাওয়ার টিলার ব্যবহার নতুন কিছু নয়। কিন্তু এই তল্লাটে পাওয়ার রিপার বা ড্রাম সিডার এখনও তত জনপ্রিয় নয়। স্টলে এসে যন্ত্রের গুণাগুণ দেখে-শুনে মুগ্ধ অনেকেই। কিন্তু বিক্রির ব্যবস্থা নেই। স্টলের কর্মীদের দাবি, অন্তত এক ডজন খদ্দের এসে ফিরে গিয়েছেন। দফতরের বর্ধমান অফিসের সিনিয়র মেকানিক প্রশান্ত দেব দাস, মেকানিক কাশীনাথ আদক, সহকারী মেহবুব হোসেনের মতো যাঁরা দিনভর স্টল আগলাচ্ছেন, কী ‘ব্যবসা’ মার গেল ভেবে তাঁরা বসে আক্ষেপ করছেন।
উৎসব প্রাঙ্গণ থেকে আসানসোলে ফেরার শেষ বাস ছাড়ছে রাত সাড়ে ৮টায়, বর্ধমানের শেষ বাস রাত ৯টায়, দুর্গাপুরের রাত সাড়ে ৯টায়। কেন গোড়া থেকেই এই ব্যবস্থা হল না, দু’দিন লাগল কীসে, সেই প্রশ্ন শোনা যাচ্ছে ইতিউতি। মাটির প্রকারভেদ আর ধান-মাছের তত্ত্বাবধান নিয়ে বেশির ভাগেরই তেমন উৎসাহ নেই। কিন্তু পড়ে পাওয়া মেলায় কার না ফূর্তি হয়? |