প্রায় চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছে গেল রূপনারায়ণপুরে হিন্দুস্তান কেবলস অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে চিঠি দিয়ে ভারী শিল্প দফতরকে জানানো হয়েছে, অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড ওই রুগ্ণ ইউনিট অধিগ্রহণে রাজি। তবে কয়েকটি শর্ত রয়েছে। আজ, বুধবার এ নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা। শর্তগুলি ভারী শিল্প দফতর মেনে নিলে কারখানার সুদিন ফিরতে আর বেশি অপেক্ষা করতে হবে না, এমনটাই আশা করছেন শ্রমিক-কর্মীরা।
হিন্দুস্তান কেবলস কারখানার রূপনারায়ণপুর ইউনিটের প্রধান বাসুদেব দে মঙ্গলবার বিকেলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সচিব ডি ওয়ারিয়ার পাঠানো ওই চিঠির কথা স্বীকার করেছেন। বাসুদেববাবু জানান, গত ৩ জানুয়ারি একটি বৈঠকে বিআইএফআর-এর কর্তারা ভারী শিল্প দফতরের আধিকারিকদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, হিন্দুস্তান কেবলস কারখানার পুনরুজ্জীবন বা অধিগ্রহণের বিষয়ে তাঁরা কী পদক্ষেপ বা চিন্তাভাবনা করছেন। ভারী শিল্প দফতরের কর্তারা সে দিন জানান, কারখানাটি অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির বোর্ড অধিগ্রহণ করতে চায়। কিন্তু তাঁরা যে অধিগ্রহণ করতে চায়, সে ব্যাপারে কোনও রকম সম্মতিপত্র ভারী শিল্প দফতরে জমা পড়েছে কি না, বিআইএফআর-এর পক্ষ থেকে তা জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তখনও পর্যন্ত এ রকম কোনও সম্মতিপত্র ভারী শিল্প দফতরের হাতে না থাকায় আধিকারিকেরা আরও এক মাস সময় চেয়ে নেন। |
সুদিনের অপেক্ষায় রূপনারায়ণপুরে এই কারখানা। —ফাইল চিত্র। |
সে দিনই ঠিক হয়, ১৩ ফেব্রুয়ারি বিআইএফআর কেব্লসের বিষয়ে ফের বৈঠকে বসবে ও অধিগ্রহণের সম্মতিপত্র দেখতে চাইবে। এই অবস্থায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের পক্ষে কেবলস অধিগ্রহণের ব্যাপারে সম্মতি জানিয়ে ভারী শিল্প দফতরকে চিঠি লেখায় সব দুশ্চিন্তার অবসান হল বলে মনে করছেন কারখানার আধিকারিক থেকে শ্রমিক-কর্মী, সকলেই। আজ, বুধবার বিআইএফআর-এর বৈঠকে ভারী শিল্প দফতর সেই চিঠি পেশ করবে বলে কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে।
কারখানা সূত্রে জানা যায়, অধিগ্রহণের প্রশ্নে যে শর্তগুলি অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের তরফে রাখা হয়েছে সেগুলি হল, ওই কারখানার প্রায় ৩৩০০ কোটি টাকার দায় ও শ্রমিক-কর্মীদের বকেয়া বেতন মেটাতে হবে ভারী শিল্প দফতরকে। কারখানা অধিগ্রহণের পরে উৎপাদনে যে বৈচিত্র্য আনা হবে তার অনুমতি ভারত সরকারের কাছ থেকে আদায় করবে ভারী শিল্প দফতর।
হিন্দুস্তান কেবলস কারখানা তৈরি হয় ১৯৫২ সালে। টেলিফোনের কেব্লই ছিল এর একমাত্র উৎপাদন। ১৯৯৫ থেকে কারখানা রুগণ হতে শুরু করে। ১৯৯৭ সালে তা বিআইএফআর-এ চলে যায়। ২০০৩-এ কারখানার ভাগ্য নির্ধারণের দায়িত্ব পড়ে বিআরপিএসই-র হাতে। বর্তমানে কারখানাটি উৎপাদন শূন্য। শ্রমিক-কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৯২৩ জন। তাঁদের ১১ মাসের বেতন বাকি। কারখানার জমির পরিমাণ প্রায় ৯০০ একর। কর্মী আবাসন প্রায় দু’হাজার।
বছর দশেক ধরে কারখানাটির সুদিন ফেরানোর প্রক্রিয়া চলছে। একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা অধিগ্রহণের আগ্রহ দেখিয়েও শেষ পর্যন্ত ফিরে গিয়েছে। গত বছর এপ্রিলে কারখানা পরিদর্শনে আসে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের একটি প্রতিনিধি দল। তার পরেও তারা কয়েকবার ঘুরে গিয়েছে। অবশেষে অধিগ্রহণের ব্যাপারে সম্মতি মেলায় স্বস্তি রূপনারায়ণপুরে। শ্রমিক-কর্মীরা অবশ্য না আঁচানো পর্যন্ত পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে নারাজ। |