|
|
|
|
বাবা জ্ঞান দিয়ো না |
|
আমি কেপ টাউন পোল ডান্স |
প্রায় মাসখানেকের কাছাকাছি দেশের বাইরে ছিলাম।
কেন? পোল ডান্স করছিলাম যে!
এ রকম আরও অনেক অদ্ভুত জিনিস করেছি, যেগুলো জীবনে কোনও দিন করব ভাবিনি।
একটা অ্যাডভেঞ্চার রিয়েলিটি শো শ্যুট করতে গিয়েছিলাম দক্ষিণ আফ্রিকায়। আর বিশ্বাস করুন, নানা নতুন আর বিস্ময়কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলাম।
শুধু তাই নয়। ফিরে এসেছি অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ এক মানুষ হিসেবে।
সব ভয়কে গো-হারান হারিয়ে দিয়েছি!
পরিচয় হয়েছে একদম অন্য ধরনের মানুষদের সঙ্গে। ভীষণ ইন্টারেস্টিং তাঁরা।
রিয়েলিটি শো’টার নাম ‘লাইফ মে এক বার’।
শো-টা করা হয়েছে সব হট মেয়েদের নিয়ে। যেমন বারবারা মোরি, ইয়ানা গুপ্ত, কিরণ ধক্কল আর আমি নিজে। পাঁচ জন মেয়ে এক জায়গায়? ভাববেন হয়তো প্রচুর ঝগড়া করেছি আমরা! তবে বিশ্বাস করুন, আমাদের মধ্যে কোনও ‘ক্যাট ফাইট’ হয়নি। বরং আমরা একে অপরকে যে ভাবে পারি সাহায্য করেছি।
আমাদের প্রত্যেকের ক্ষেত্র আলাদা আলাদা।
আর সবাই আমরা একই রকম ভয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলাম। নিজেদের এই সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কটা এনজয় করছিলাম।
আমি সাইকেল চালিয়েছিলাম একেবারে কেপ অব গুড হোপ পর্যন্ত।
রাস্তায় একটা গাড়ি ধাক্কা মেরেছিল আমাকে। ভালমতো আহত হয়েছিলাম। তবুও ফিরে এসেছিলাম ‘ওয়ারিয়র প্রিন্সেস’-এর মতই।
কেপ অব গুড হোপ পৌঁছনোর মুহূর্তে নিজের সব ব্যথা-বেদনা ভুলে গিয়েছিলাম। ওই রকম একটা দৃশ্য জীবনেও দেখিনি। সারা পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম সুন্দর শহর হিসেবে কেপ টাউনের খ্যাতি আছে। আমি অভিভূত হয়ে সেই মনোমোহিনী রূপ দেখে স্বগতোক্তি করেছিলাম যে ঈশ্বর যেন সব রকম বিলাসিতা দিয়ে তৈরি করেছে শহরটাকে। ‘বহুত ফুরসত সে বনায়ে হ্যায় কেপ টাউন।’
স্কাই ডাইভিং নিয়ে আমার ভয় ছিল সব চেয়ে বেশি। কয়েকটা মুহূর্তের জন্য যেন ‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’-র ফারহান আখতারের চরিত্র হয়ে গিয়েছিলাম।
দশ হাজার ফুট ওপর থেকে আমাদের স্কাই-ডাইভ করার কথা ছিল। |
|
ইয়ানা গুপ্ত |
প্লেনটা যখন দু’হাজার ফুট ওপরে পৌঁছেছে তখনও কিন্তু ভয় লাগেনি। আমাদের নির্দেশককে জিজ্ঞেস করি আমরা ওই উচ্চতা থেকেই লাফ দেব কি না। উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলেন, “এর পাঁচ গুণ বেশি উচ্চতা থেকে লাফাতে হবে!”
ঝাঁপ দেওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে ভয়ে সিঁটিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু হাওয়ায় ভেসে থাকার সময় টের পেলাম মুক্তির আনন্দ আসলে কী!
অন্য আর এক দিন একটা হাঙরের লেজের সপাট থাপ্পড় পড়ল আমার মুখে। এটাকে অদ্ভুত ঘটনা বললেও কম বলা হয়।
শুনে আমার মা তো কেঁদেকেটে একসা। কিন্তু আমি তো বদ্ধপরিকর যে, যে ভাবেই হোক ভয়কে জয় করতেই হবে। প্রত্যেকটা টাস্ক করার সুযোগ পেয়েছি। দারুণ খুশি আমি।
তবে সব চেয়ে খুশি বাকি মেয়েদের সঙ্গে দেখা করতে পেরে। ‘কাইটস’ সিনেমাটার রিলিজের সময় শুনেছিলাম বারবারা মোরি ক্যানসারের মতো কঠিন অসুখকে জয় করেছেন। শোয়ের সময় ওঁর সঙ্গে দেখা করতে পেরে খুব আনন্দ পেয়েছি। কী হাসিখুশি মেয়ে বারবারা! কোনও অহঙ্কার নেই ওঁর। কঠিন প্রাণঘাতী একটা অসুখকে এত অবলীলায় হারিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে ফিরে এসেছেন উনি! কী অসাধারণ ব্যাপার! ওঁর একটা পনেরো বছরের ছেলেও আছে। ক্যানসারকে তুড়ি মেরে হারিয়ে একটা অ্যাডভেঞ্চার রিয়েলিটি শো-তে অংশগ্রহণ করাটা মোটেই মজার কথা নয়। ওঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়ে সত্যিই আমি ভাগ্যবান।
|
বারবারা মোরি |
কেপ টাউনে ‘চেশায়ার হোমে’ ঘুরে আসার আইডিয়াটা বারবারার মাথাতেই এসেছিল। প্রথম দেখার ধাক্কাটা সামলে ওঠার পর কেঁদে ফেলেছিলাম। প্রতিবন্ধী মানুষদের সঙ্গে দেখা করলাম। খুব যত্নের প্রয়োজন ওঁদের। জীবনে কখনও এত কাঁদিনি। ওঁদের গল্প শুনতে শুনতে কেটে গিয়েছিল পাক্কা পাঁচ ঘণ্টা। আমার কথাবার্তা নাকি দারুণ ভাল লেগেছিল ওঁদের। ওঁরা আমাকে বলেছিলেন, “আমাদের কেউ স্বাভাবিক মানুষের মতো মনে করে না। হয় চিৎকার করে কথা বলে, নয়তো খুব ধীরগতিতে কথা বলে। মনে হয়, যেন সত্যিই আমাদের কোনও গণ্ডগোল আছে।” আমি ওঁদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশেছিলাম। আর এই ঘটনাটাই সব চেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছিল ওঁদের।
বারবারা এই পুরো সময়টাই আমাদের সঙ্গে ছিলেন। দেখেই বুঝতে পারছিলাম খুব দুঃখ পেয়েছেন। তবে কাঁদেননি। ফিরতি পথে আমাদের বলেছিলেন, “আমি দীর্ঘ দিন ধরেই এই কাজটা করছি।” বুঝতে পেরেছিলাম কী বলতে চাইছেন। ওঁর মুখে দেখেছিলাম একটা নির্বিকার নিস্তব্ধতা । দেখেছিলাম ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তাও। যা ওঁকে সাহায্য করেছে ক্যানসারের মতো মারণ ব্যাধিকে বধ করে এগিয়ে যেতে।
বারবারাকে যেমন আবিষ্কার করলাম, তেমনি এই ট্রিপটায় গিয়ে আবিষ্কার করলাম ইয়ানা গুপ্তকেও।
এ সেই ইয়ানা নয়, যাকে সব সময় আইটেম নাম্বার আর বিতর্ক ঘিরে থাকে। ওঁর জীবন এককথায় চমকপ্রদ। ইয়ানা চাইনিজ মেডিসিন আর অর্গ্যানিক খাবার নিয়ে চর্চা করেন।
কেকের ওপর আইসিং এর মতো মুহূর্ত ছিল সেই রাতটি, যে রাতে আমি পোল ডান্স করতে গিয়েছিলাম।
পৃথিবীর অনেক ডিস্ক আর পাবেই গিয়েছি আমি। কিন্তু পোল ডান্সিং করার চেষ্টা কখনও করিনি। দায়ান্দ্রা আমাদের একবার চেষ্টা করে দেখতে বললেন। প্রথমে আপত্তি ছিল একটু। কিন্তু আস্তে আস্তে দারুণ এনজয় করতে লাগলাম।
‘ঝলক দিখলা যা’-র দিনগুলো মনে পড়ছিল খুব।
পোল বেয়ে ওপরে উঠছিলাম। আবার পরমুহূর্তেই স্লিপ করে নেমে যাচ্ছিলাম নীচে। শরীরের ভাঁজে ভাঁজে পোলের সেই আলিঙ্গন এক অসাধারণ অনুভূতি এনে দিচ্ছিল। ওয়ার্ক আউট করতে গিয়ে জীবনে প্রথম বার এত সেক্সি মনে হচ্ছিল নিজেকে।
শু্যট শেষ। ভারতে ফিরে এসেছি। এখনও ওই ঘোরটা থেকে বেরোতে পারিনি। বেরোতে পারিনি অসম্ভব মানসিক দোলাচলের মুহূর্তগুলো থেকে! অনবদ্য সেই অভিজ্ঞতা।
পৃথিবীর সব চেয়ে ক্রেজি জিনিসগুলো করার জন্য পয়সা দেওয়া হয়েছে আমাকে। আর এই সুযোগটা পেয়ে আমি ধন্য। আর সব থেকে যেটা দরকারি, তা হল প্রাণে এখনও বেঁচে আছি। |
|
|
|
|
|