অবশেষে জলপাইগুড়ি পুরসভাকে কর্পোরেশনে উন্নীত করার পথে তৈরি হওয়া জট খুলল। বুধবার শহর লাগোয়া খড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যদের বৈঠকে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য জলপাইগুড়ি পুরসভায় সংযুক্তির প্রস্তাবের পক্ষে সায় দিয়েছেন। এর আগে গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত এলাকা সংযুক্তকরণের বিপক্ষে ছিল। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে বুধবার ফের বৈঠকে বসেন গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। ওই বৈঠকে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য প্রস্তাবের পক্ষে মতামত দেওয়ায় জলপাইগুড়ি পুরসভায় নতুন এলাকার অর্ন্তভুক্তি নিয়ে আর কোনও সমস্যা রইল না বলে মনে করছেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা।
গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে জানানো হয়েছে, এ দিনের বৈঠকে সিদ্ধান্তের প্রতিলিপি দ্রুত জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এর আগে জলপাইগুড়ি পুরসভা লাগোয়া পাহাড়পুর এবং অরবিন্দ গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ তাদের সম্মতির কথা লিখিত ভাবে প্রশসানকে জানিয়ে দিয়েছেন। এ বার খড়িয়ার সম্মতিও চলে আসায় পুরসভার ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত হওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করা হচ্ছে। ‘খ’ শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ার পরে পুরসভাকে কর্পোরেশন ঘোষণা করা সম্ভব হবে। সদর মহকুমাশাসক সাগর চক্রবর্তী বলেন, “জানুয়ারি মাসে জলপাইগুড়ি পুরসভার এলাকা সংযোজন নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে খড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। ওই কারণে তাঁদের ফের আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে বলা হয়। খড়িয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিলিপি চলে এলে নতুন এলাকা সংযোজনের ওই প্রস্তাব জেলাশাসকের দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।” ‘গ’ শ্রেণিভুক্ত জলপাইগুড়ি পুরসভাকে ‘খ’ শ্রেণিতে উন্নীত করতে মাস ছয়েক আগে থেকে প্রশাসনিক প্রস্তুতি শুরু হয়। গত জানুয়ারি মাসে যে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির এলাকা পুরসভায় অর্ন্তভুক্ত করা হবে তাঁর কর্তৃপক্ষকে ডেকে বৈঠক করে জেলা প্রশাসন। জলপাইগুড়ি পুরসভার প্রতিনিধিরাও সেই বৈঠকে ছিলেন। ওই বৈঠকে খড়িয়ার আপত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। বুধবার খড়িয়ার প্রধান স্বপন রায় বলেন, “গ্রাম পঞ্চায়েতের কোনও এলাকা পুরসভায় যাবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা প্রধানের একার নেই। ওই বিষয়ে আগের একটি বৈঠকে পঞ্চায়েত সদস্যরা বিপক্ষে মতামত দিয়েছিলেন। তবে আজ বুধবারের বৈঠকে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য পক্ষে মতামত দেন। সিদ্ধান্তের প্রতিলিপি জেলা প্রশাসনকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, খড়িয়ার যে ১১টি এলাকা পুরসভায় অর্ন্তভুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানকার ১০জন পঞ্চায়েত সদস্যের মধ্যে সাত জন এ দিনের বৈঠকে পুর এলাকায় সংযুক্তির পক্ষে মতামত দিয়ে সিদ্ধান্তে সই করেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন এলাকাগুলি সংযুক্ত হলে জলপাইগুড়ি পুরসভা খ শ্রেণিভুক্ত হবে। তারপরে কর্পোরেশন ঘোষণার প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
শতাব্দী প্রাচীন জলপাইগুড়ি পুরসভাকে কর্পোরেশনে উন্নীত করার দাবি বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের। ডান বাম সব দলের তরফে বিভিন্ন সময়ে ওই দাবি তোলা হয়েছে। পুরসভায় ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তথা পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “জলপাইগুড়িকে কর্পোরেশন করার দাবি পুরোপুরি অরাজনৈতিক। স্থানীয় বাসিন্দারা এর দাবিদার। দাবি পূরণের লক্ষ্যে পুরসভাও গত তিন বছর ধরে প্রশাসনিক প্রস্তুতি নিয়ে চলেছে। সম্প্রতি ওই বিষয়ে রাজ্য সরকার উদ্যোগী হয়েছে। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব শহরের উন্নয়নের স্বার্থে কর্পোরেশন ঘোষণা হোক।” তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি চন্দন ভৌমিক বলেন, “কর্পোরেশনের শর্ত পূরণ হলে অবশ্যই দ্রুত ঘোষণা চাই। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ি দুই শহরকে যমজ শহর প্রকল্পে আনতে চাইছেন। সেটাও কর্পোরেশন হওয়ার জন্য। জলপাইগুড়ি শহর ক্রমশ ঘিঞ্জি হয়ে পড়েছে। শহর সম্প্রসারণ করতে হবে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক কৃষ্ণ বন্দোপাধ্যায় বলেন, “আমরা আগে ওই দাবি জানিয়েছি। কর্পোরেশন ঘোষণা হলে শহরের পরিকাঠামোর উন্নয়ন হবে।” |