বর্তমান রাজ্য সরকার শিল্প গড়তে তৎপর এবং সে কাজে জমি সমস্যা বাধা নয়। এমনটাই দাবি রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। বুধবার শিলিগুড়ির উপকন্ঠে ফুলবাড়ি ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশনের অত্যাধুনিক পরিকাঠামোর উদ্বোধন মঞ্চে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। পার্থবাবু বলেন, “আমরা জমি অধিগ্রহণ করব না। যে জমি পাওয়া যাবে তা ব্যবহার করতে হবে। শিল্পের জমিতে শিল্পই করতে হবে। আমরা শিল্প গড়ছি। একদিকে যেমন হলদিয়ায় অন্য দিকে তেমনই উত্তরবঙ্গে।”
শিল্পোদ্যোগীদের তিনি সঠিক নীতি এবং প্রকল্প নিয়ে যোগাযোগ করতে এ দিন পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “অনেকে বলছেন শিল্প করবেন যে জমি কোথায়? জমি আছে। আমারা সরকারে এসে এই সময়ে জমি নীতি নির্ধারণ করেছি। জমি বরাদ্দের নীতি প্রক্রিয়াও চলছে। ‘ল্যান্ড ব্যাঙ্ক’ তৈরি হয়েছে। সেখান থেকে জমি মিলবে।” তাঁর পরামর্শ, এ জন্য জন্য ‘পার্টি অফিস’-এ কাউকে ডাকার দরকার নেই। উদ্যোগীরা মহাকরণে যাবেন, রাজ্য শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমে যোগাযোগ করবেন। শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে যাবেন। শিল্প গড়তে নির্দিষ্ট নীতি নিয়ে চলতে হবে। যদি উদ্যোগীদের সঠিক নীতি থাকে, সঠিক প্রকল্প থাকে তাহলে সরকারই ডেকে নেবে। কেউ যদি ‘ভিক্টোরিয়ায়’ জমি চান বাস্তবেই তা দেওয়া সম্ভব নয়।
বর্তমান রাজ্য সরকারের শিল্পনীতি এবং তার জেরে রাজ্যের ভবিষ্যত নিয়ে মঙ্গলবার সংবাদ মাধ্যমের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বর্তমান সরকার জানিয়েছেন, তারা কোনও অবস্থাতেই জমি অধিগ্রহণ করবে না। তথ্য প্রযুক্তির শিল্পের প্রকল্পকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড)-এর ছাড়পত্র দেবেন না। সরকারের এই নীতিহীনতা এবং দিশাহীনতা নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করেন বুদ্ধবাবু। এ দিন নাম না করে উদ্বোধন মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শিল্পমন্ত্রী কার্যত ঠারেঠোরে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবই দিয়েছেন বলে মনে করছেন রাজনীতির কারবারীরা।
বুদ্ধবাবুর নাম না করে শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘‘৩৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থেকে শুধু সম্রাটের ভূমিকা পালন করে ওরা চলে গিয়েছেন। সেই দুর্ভোগ এখন পোহাতে হচ্ছে। কিন্তু ঘুম ভেঙে উঠলে যেমন হয় তেমনই অনেকে জেগে ওঠার চেষ্টা করছেন। এমন কথা বলছেন যেন এতদিন তাঁরা ছিলেন না। তাঁদের আমলে কতগুলি শিল্প হয়েছে তার তালিকা দিক।” শিল্পমন্ত্রীর কথায়, কিছু সংবাদ মাধ্যম সরকারের খারাপ দিকটি নিয়ে সমালোচনা করছে। কেবলই নেতিবাচক দিক তুলে ধরলে হবে না। ভাল দিকটিও বলতে হবে।
রাজ্যের শিল্পোন্নয়নে তাঁরা কী করছেন সে দিকটিও তুলে ধরতে সচেষ্ট হন পার্থবাবু। তিনি জানান, উত্তরবঙ্গে প্রচুর কাজ হচ্ছে। এখানে শিল্প, পর্যটন দফতরের তরফে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সে সব প্রতিটি প্রকল্পই হবে বলে আশ্বস্ত করেন। উত্তরবঙ্গে তথ্য প্রযুক্তি শিপ্ল গড়ে তোলার কথা এক সময় বলেছিলেন তিনি নিজে। সে কাজও এগোচ্ছে। মাটিগাড়ায় একটি তথ্য প্রযুক্তি হাব গড়ে তোলার কাজ হচ্ছে। কালিম্পং, কার্শিয়াং, দার্জিলিঙে তথ্য প্রযুক্তি হাব গড়ে তোলা হবে। এই অঞ্চলে, মূলত পাহাড়ে ইংরেজি জানা প্রচুর ছাত্র, যুব রয়েছেন। এই কাজের ক্ষেত্রে তাঁরা বাড়তি সুযোগ পাবেন। ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’-গুলি বড় করে গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে জোর দেওয়া হচ্ছে। শিলিগুড়িতে ফুড পার্কে ১৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। আনারস পার্ক হয়েছে। ড্রাইপোর্ট, টি পার্কের কাজ শেষ পর্বে। এ দিন ফুলবাড়ি বহির্বাণিজ্যের উন্নত পরিকাঠামোর উদ্বোধন হল। বাঁশ প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের উদ্যোগ। হলদিবাড়িতে ট্যামাটো প্রক্রিয়াকরণ শিল্প হচ্ছে।
বক্তব্যের মাঝে সমালোচনার সুরে তিনি বলেন, “শিলিগুড়িতে ‘হিমুল’ প্রকল্পের প্রচুর জমি আছে। হিমুলের জন্য না কি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পকেট থেকে টাকা দিয়েছেন। আমি বলি তাঁর পকেটই ছিল না তো টাকা দেবেন কোথা থেকে। রাজ্যকে ২ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকা দেনায় রেখেছেন তাঁরা। তাও বলছেন যা করেছেন ঠিক করেছেন।”
শিল্পমন্ত্রীর দাবি, সম্প্রতি ভিডিওকন সংস্থার কর্ণধার তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, এতদিন যাঁরা ছিলেন তাঁরা শুধু জমি দিয়েছেন। জমি দিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন। পার্থবাবু তা শুনে বলেছেন, ‘ওই গান আপনাদের গাইতে হবে না’। আপনারা এখনই সিদ্ধান্ত নিন। সেই মতো সল্টলেকে জমি নিয়ে ওই সংস্থা কাজ শুরু করেছে। শিলিগুড়িতেও তারা জমি নিয়েছেন । সেখানেও কাজ হবে। পূর্বতন বাম সরকারের সমালোচনা করে পার্থবাবু বলেন, “ওই সরকার ৪৭১০ টি প্রকল্পের চুক্তি করেছিস তার মধ্যে ৮৩৩ টি হয়েছে। আর ১৮/১৯ মাসে আমাদের সরকার ২৩০ টি প্রস্তাব নিয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ১ লক্ষ ১০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে।” শিল্পমন্ত্রীর দাবি, রাজ্যে জিন্দাল গোষ্ঠীও শীঘ্রই শিল্প গড়ার কাজ করবে। তাদের সঙ্গে কথাও হয়েছে। পাট্টার জমি, বনাঞ্চলের জমি যা আগে তারা নিয়েছেন সেগুলি নিয়ম মাফিক করতে বলা হয়েছে। পারিবারিক সমস্যার কারণে ওই শিল্পপতি আটকে রয়েছেন। কিছু দিনের মধ্যেই তাঁরা আসবেন। ১৬ বছর পরে বর্তমান রাজ্য সরকারের উদ্যোগে পানাগড়ে সার কারখানা হয়েছে। ‘হিন্দুস্থান গ্লাস’ কোম্পানি এসেছে। ২৬ হাজার কোটি টাকায় স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়ার কারখানা হচ্ছে। রাজ্যে শিল্প গড়ে উঠছে। আর তার অভিমুখ উত্তরবঙ্গের দিকে করতে চাইছে সরকার। শিল্পোদ্যোগীদের তাঁরা জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গেও যেতে হবে। উত্তরবঙ্গে ‘শক্তি’ উৎপাদন প্রকল্প, হোটেল ,স্বাস্থ্য, ইকো ট্যুরিজম নিয়ে তিনি কথা বলেছেন। কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তাদের শিল্পোদ্যোগীদের সুষ্ঠু নীতি এবং প্রকল্প নিয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। |