সৌমিত্র মোহনকে সরানোর সুপারিশ
লেপচা পর্ষদ নিয়ে ক্ষুব্ধ মোর্চা, শনিবার বনধ পাহাড়ে
গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) গঠনের পরে সবে ছ’মাস কেটেছে। ফের একটি বন্ধের মুখে পড়তে চলেছে দার্জিলিং পাহাড়। বুধবার গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার তরফে জানানো হয়, জিটিএ-র সঙ্গে আলোচনা না-করে একতরফা ভাবে লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ গড়ার প্রতিবাদে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি, শনিবার জিটিএ-এর আওতা ভুক্ত এলাকায় ১২ ঘণ্টার বন্ধ ডাকা হয়েছে। গত বছর রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে এই প্রথম বনধ হবে পাহাড়ে। জিটিএ প্রধান সচিবের পদ থেকে দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনকে সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবও তুলেছে মোর্চা।
জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ সফরের সময় থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে মোর্চার সম্পর্কের ক্রমশ অবনতি হতে শুরু করে। লেপচাদের জন্য আলাদা পর্ষদ গঠনের কথায় মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে পাহাড়ে বিভাজন করার অভিযোগ তোলেন। সেই অভিযোগকে গুরুত্ব না দিয়ে রাজ্য সরকার মঙ্গলবার লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ক্ষুব্ধ মোর্চা এ বার সরাসরি বন্ধের রাস্তায় হাঁটল। মোর্চা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিনয় তামাং এই দিন বলেন, “লেপচা পর্ষদ নিয়ে আমরা আগেই আপত্তি জানিয়েছি। তা অগ্রাহ্য করা হয়েছে। তাই আমরা আপাতত একদিনের প্রতীকী বনধ ডাকতে বাধ্য হয়েছি।” মুখ্যমন্ত্রীর ওই সফরেই সৌমিত্র মোহনের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন গুরুঙ্গ। কিন্তু জিটিএ বিধি অনুযায়ী প্রধান সচিব পদে কাউকে নিয়োগ করার পরে তাঁকে দু’বছর সেই দায়িত্বে রাখতেই হবে। যদি কোনও গুরুতর কারণে তাঁকে সরাতেই হয়, তা হলে রাজ্য সরকারই কেবল তা পারে। জিটিএ কেবল সুপারিশ করতে পারে। জিটিএ এ দিন রাজ্য সরকারের নিযুক্ত প্রধান সচিব সৌমিত্র মোহনকে সরিয়ে দেওয়ার সেই প্রস্তাবই গ্রহণ করেছে। জিটিএ সভার চেয়ারম্যান ভূপেন্দ্র প্রধান বলেন, “জিটিএ প্রধান সচিব পদ থেকে সৌমিত্র মোহনকে সরানোর প্রস্তাব গ্রহণ করেছি।”
জিটিএ সূত্রে জানা গিয়েছে সৌমিত্র মোহনের জায়গায় তাঁরা ওই পদে আপাতত দায়িত্ব দিতে চান জিটিএ-রই অন্যতম এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ডন বস্কো লেপচাকে। এদিন দার্জিলিঙের ভানু ভবনে জিটিএ সভার বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ প্রত্যাহার করতে হবে। না হলে তা জিটিএ-এর আওতায় দিতে হবে। আগামী দিনে জিটিএ চুক্তিতে বেশ কিছু সংযোজন ও সংশোধনের প্রস্তাবও অনুমোদিত হয়েছে। জিটিএ-র বেশ কিছু পদাধিকারীকে আভ্যন্তরীণ পর্যায়ে বদলি করা হবে বলেও ঠিক হয়েছে। জিটিএ-এর ‘চিফ’ গুরুঙ্গের অভিযোগ, “কেন্দ্র-রাজ্য ও মোর্চার মধ্যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তির ভিত্তিতে জিটিএ তৈরি হয়েছে। ওই চুক্তির কোথাও লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ গড়ার উল্লেখ নেই। এটা একটা ষড়যন্ত্র। রাজ্য পাহাড়বাসীর মধ্যে বিভেদ তৈরি করে কর্তৃত্ব কায়েম করতে চাইছে। চুক্তি ভঙ্গ হলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হব।”
বিধি অনুযায়ী, কেন্দ্র ও রাজ্যের সঙ্গে কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরোধ হলে তা আলোচনার মাধ্যমে মেটানোর কথা। এ ক্ষেত্রে জিটিএ-এর তরফে সভা ডেকে সরাসরি সিদ্ধান্ত নিয়ে তা রাজ্য সরকারকে জানানো হল কেন? বিনয় তামাংয়ের দাবি, “রাজ্য সরকার জিটিএ-কে এড়িয়ে সরাসরি নিজেরাই লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ গড়ে আমাদের এমন প্রস্তাব গ্রহণ করতে বাধ্য করেছে। আশা করি রাজ্য সরকার আমাদের প্রস্তাব অনুমোদন করবে।”
এই অবস্থায় সৌমিত্র মোহনকে প্রধান সচিবের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি রাজ্য সরকার মেনে নিয়ে তাঁকে কি শুধু দার্জিলিঙের জেলাশাসকের পদেই রেখে দেবে? উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, “জিটিএ উন্নয়নমূলক কাজের ব্যাপারে স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে প্রধান সচিবকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সুপারিশ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সুপারিশ এলে তখন তা নিয়ে আলোচনা হবে। মনে রাখতে হবে, আলোচনার মাধ্যমেই মুখ্যমন্ত্রীর পাহাড়ের সমস্যা মিটিয়েছেন। আগামী দিনেও ফের আলোচনা হবে। তবে পাহাড়ের উন্নয়নে যাতে কোনও ভাবে বিঘ্ন না-ঘটে তা নিশ্চিত করাটাই মুখ্যমন্ত্রীর অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। তা ছাড়া নীতিগত ভাবে আমরা যে কোনও বন্ধের বিরোধী।” সৌমিত্র মোহনের বক্তব্য, “আমাকে সরকার যা বলবে, আমি তাই করব।”
বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু এই দিন শিলিগুড়িতে বলেন, “রাজ্য সরকারের উচিত জিটিএ-র সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত পাহাড়ের সমস্যা মিটিয়ে ফেলা।” সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “মাত্র ছমাসের মধ্যে জিটিএ-এর এমন অবস্থা হওয়া কখনই কাঙ্ক্ষিত নয়। আমরা পাহাড়ে শান্তি চাই।”
ঘটনাচক্রে, এদিনই মহাকরণে মোর্চা ঘনিষ্ঠ আদিবাসী নেতা জন বার্লা ও তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে জন বার্লা জানান, আদিবাসীদের নানা সমস্যা ও উন্নয়নের ব্যাপারে তাঁরা ১১ দফা দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.