|
|
|
|
টাকা তুলে বেপাত্তা আর্থিক সংস্থা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
চড়া হারে সুদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা তুলে রাতারাতি অফিস বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল একটি আর্থিক সংস্থার বিরুদ্ধে।
পুলিশ সূত্রের খবর, সংস্থাটির নাম ‘সানমার্গ’ (সুরাহা মাইক্রোফিনান্স)। প্রধান কার্যালয় ডায়মন্ড হারবারে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে অফিস খুলে টাকা তুলত তারা। দু’বছর আগে বেলেঘাটায় তারা একটি অফিসও খোলে। এজেন্টকে ১০০ টাকায় ১৬ টাকা কমিশনের লোভ দেখিয়ে সেখানেই তারা কয়েক কোটি টাকা তুলেছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন এজেন্টরা। এজেন্টদের দাবি, তাঁদের মাধ্যমে আমানতকারীদের চড়া সুদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও গত ডিসেম্বর থেকেই সংস্থার কর্মীরা উধাও। মঙ্গলবার ওই সংস্থার বিরুদ্ধে বেলেঘাটা থানায় এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন জনা পঞ্চাশেক এজেন্ট। এই অভিযোগের ব্যাপারে সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর দিলীপরঞ্জন নাথের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সারা দিনই তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ মিলেছে। |
|
সংস্থার অফিসের সামনে এজেন্ট ও গ্রাহকেরা। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র। |
বুধবার ওই সংস্থার বেলেঘাটা অফিসের সামনে জড়ো হন এজেন্টরা। জানান, নিম্নবিত্তদের থেকে টাকা তুলে সংস্থার অফিসে তাঁরা তা জমা করেছেন। এখন সংস্থার কর্মীরা উধাও হওয়ায় বিপদে পড়েছেন তাঁরা।
পড়াশোনার ফাঁকে কিছু রোজগারের আশায় ওই সংস্থায় এজেন্ট হিসেবে নাম নথিভুক্ত করেছিলেন ইংরেজিতে এমএ পাঠরতা রবীন্দ্রভারতীর ছাত্রী সোনি বাসফোর, এমএসসি পাশ প্রমিতা দাস, বেলেঘাটার গৃহবধূ শুক্লা সাহারা। সোনির কথায়, “ভেবেছিলাম, পড়াশোনার সঙ্গে কিছু আয়ও হবে। সংস্থার ম্যানেজার বলেছিলেন, জমা টাকা জীবনবিমা নিগমে খাটানো হয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কিছু নথিও দেখানো হয়েছিল। এখন বুঝছি, সে সবই জাল।” সোনি জানান, তাঁর হাত দিয়ে প্রায় দু’লাখ টাকা জমা পড়েছে। ১৫ জন মেয়াদ-অন্তের টাকা পাননি। গৃহশিক্ষকতা করে তাঁদের টাকা ফেরত দিতে শুরু করেছেন সোনি।
প্রমিতা বলেন, “প্রায় ৯৫ হাজার টাকা জমা দিয়েছি। সংস্থার ঝাঁপ বন্ধের খবর শুনে ইতিমধ্যেই বাড়িতে ভিড় করছেন আমানতকারীরা। সংস্থাটির মালিক তথা ম্যানেজিং ডিরেক্টর দিলীপরঞ্জন নাথকেও ফোনে ধরার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তাঁর ফোন বন্ধ।” আমানতকারীদের জমা দেওয়া পাঁচ লক্ষের দায় নিয়ে বিপদে পড়েছেন বেলেঘাটার প্রতিমা বিশ্বাস। বললেন, “সংস্থার মালিক জানিয়েছিলেন, ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সবার টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু কিছুই হয়নি। এখন এত টাকা আমরা কোথায় পাব!”
অফিস বন্ধের পর থেকে এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন ম্যানেজার (বেলেঘাটা) জুবেইর আলি। ফোনে তিনি বলেন, “সারা দেশে ওই সংস্থার ৪১৩টি শাখা আছে। বেলেঘাটা শাখাতেই মাসে ১০ লক্ষ টাকা করে জমা পড়ত। মূল অফিস ডায়মন্ড হারবারে। এখন সব শাখাই বন্ধ। মালিকের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছি না।” বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই এজেন্টরা। প্রতিমাদেবী জানান, স্থানীয় বিধায়ককে বিষয়টি জানাতে বলা হয়। এ দিন বেলেঘাটার বিধায়ক পরেশ পালকে পুরো ঘটনার কথা জানান তাঁরা। পরেশবাবু বলেন, “বহু মানুষকে ঠকিয়েছে ওই সংস্থা। প্রলোভনে পা দিয়ে বিপদে পড়েছেন অনেকেই।” এ ব্যাপারে অবিলম্বে পুলিশের হস্তক্ষেপ দাবি করেন তিনি। |
|
|
|
|
|