নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
অবনমনের চাপ। কর্তাদের ফতোয়ায় ফুটবলারদের মুখে কুলুপ।
তার মধ্যেই চলছে মোহন কোচের ডার্বির পরিকল্পনা। |
এডে চিডিকে আটকাতে তাঁর টোটকা কী হবে প্রকাশ্যে আনতে চাইছেন না করিম বেঞ্চারিফা। ডার্বি শুরুর আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে মোহনবাগান কোচ বলে দিলেন, “চিডি গোল পাচ্ছে। ভাল খেলছে। কিন্তু ওকে নিয়ে আলাদা করে কিছু ভাবছি না। আমার ভাবনা শুধু আমার টিম নিয়ে। নিজেদের রক্ষণ নিয়ে। সেটা ঠিক মতো কাজ করলেই গোল আটকে যাবে।”
গত মরসুমেই করিমের কোচিংয়ে চিডি খেলেছেন সালগাওকরে। নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকারকে মরোক্কান কোচ চেনেন হাতের তালুর মতোই। ডার্বিতে চিডি-ই যে তাঁর রক্ষণের সামনে সবচেয়ে ভায়ঙ্কর হবেন সেটা করিম জানেন। মুখে কিছু না বললেও টিম সূত্রের খবর, চিডির জন্য জোনাল মার্কিং রাখবেন ঠিক করে ফেলেছেন মোহন-কোচ।
তবে ওডাফা-টোলগের সঙ্গে তিন নম্বর বিদেশি হিসাবে স্টপার ইচে না অ্যাটাকিং মিডিও কুইনটন কাকে খেলবেন তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেননি করিম। বুধবার যুবভারতীতে সকালের অনুশীলনে অবশ্য ওডাফা-টোলগে-সহ চার বিদেশিকেই এক দলে রেখে ম্যাচ খেলিয়েছেন করিম। বললেন, “ডার্বি আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইস্টবেঙ্গলকে হারাতেই হবে। এই ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট পেলে অবনমন বাঁচানোর ব্যাপারে অনেকখানি সুবিধা হবে।” |
আই লিগের কলঙ্কিত প্রথম ডার্বিতে করিমের টিমে ছিলেন না টোলগে। এ বার পরিস্থিতি অন্য। ওডাফা-টোলগে জুটি মাঠে ফেরার পর গোলও পাচ্ছেন। নিজেদের স্বার্থেই ফের মাঠে এবং মাঠের বাইরে ‘বন্ধুত্ব’ গড়ে তুলছেন। করিমের সঙ্গে কথা বলে মনে হল, এই ব্যাপারটা তাঁকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। “আগের ডার্বিতে টোলগে ছিল না। এ বার ওডাফার সঙ্গে টোলগেকেও পাচ্ছি। এটা পুরো টিমকেই আত্ববিশ্বাসী করে তুলেছে। খেলায় তার প্রভাব তো পড়ছে। টিম প্রতিদিন উন্নতি করছে।”
করিমের কথা যে ভুল নয় সেটা অনুশীলন দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। অবনমনের তীব্র চাপে থাকা বাগান বহু দিন পর চনমনে। ক্লাবের জারি করা ফতোয়ায় ফুটবলারদের কথা বলার উপর নিষেধাজ্ঞা আছে। তার মধ্যেই অনুশীলন থেকে বাড়ি ফিরে এক ফুটবলার বললেন, “আমাদের টোলগে-ওডাফা যদি আগের ম্যাচের ফর্মে থাকে ওদের আটকানোর ক্ষমতা ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের নেই।”
করিম অবশ্য এ সব বলে বাজার গরম করার লোক নন। বরং তিনি কথা বলার সময় প্রচণ্ড সতর্ক। বলে দিলেন, “ইস্টবেঙ্গল ভাল দল। চ্যাম্পিয়নের লড়াইয়ে আছে। আমরা অবনমনে আছি। তবে আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি ডার্বিতে এ সব কোনও কাজে লাগে না। সে দিনের পারফরম্যান্সের উপরে সব কিছু নির্ভর করে।”
ডার্বির আগে মোহন-কোচ নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন। কর্তারাও বিকেলে কর্মসমিতির সভায় সেই পথ অনুসরণ করলেন। আগে ঠিক ছিল, ২০১৩’১৪-র দল গঠন নিয়ে সভায় আলোচনা হবে। কিন্তু সেটা রুখে দিলেন কর্তারাই। শনিবারের ডার্বির কথা ভেবে। সচিব অঞ্জন মিত্র বললেন, “সবাই চাইছে ডার্বির আগে দল নিয়ে আলোচনা করা ঠিক হবে না। সে জন্যই আলোচনা হয়নি।” তবে ক্লাবের দু’জন নতুন ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হল। রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এলেন কমিটিতে। ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে অরূপ অষ্টম সদস্য। এ দিন বিকেলে ক্লাব লনে সাধারণ সভায় সামান্য কিছু বিতণ্ডা হলেও বড় ঝামেলা হয়নি। |
ডার্বির রণসজ্জা |
|
• ত্রিস্তর টিকিট পরীক্ষার ব্যবস্থা। প্রতি স্তরে টিকিট পরীক্ষা করবেন পুলিস, বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী ও স্কাউট অ্যান্ড গাইডের সদস্যরা। |
• জলের বোতল নিয়ে মাঠে ঢোকা যাবে না। কিনে নিতে হবে জলের পাউচ। ক্রিকেট মাঠে যেমন হয়। |
• প্রতি গ্যালারিতে সাদা পোশাকের পুলিসের কড়া নজরদারি থাকবে। |
• যুবভারতীর প্রতি গ্যালারিতে ক্লোজ সার্কিট টিভি ক্যামেরার মাধ্যমেও থাকবে নজরদারি। |
• সারা স্টেডিয়ামে মোট ন’টি ভাঙা জায়গা রয়েছে, যে পথ দিয়ে বিনা টিকিটের দর্শকরা প্রবেশ করে। সে পথগুলো বন্ধ থাকবে। |
|
• ৩০ হাজার আসনের টিকিট কম বিক্রি করা হয়েছে। অশান্তির আশঙ্কা কমাতেই এই ব্যবস্থা। |
• দর্শক কম হলেও পুলিসের সংখ্যা থাকছে বেশি। অন্যান্য বার যেখানে ১২০০ পুলিস থাকে, সেখানে এ বার দু’হাজার পুলিস মোতায়েন থাকছে। |
• দর্শকদের জন্য থাকবে ফুড স্টল। |
• খবরের কাগজ, ছাতা, লাঠি, আতসবাজি, মদের বোতল, কাঁচা-আম ও ডাবজাতীয় কঠিন ফল, ছুরি, ব্লেডজাতীয় ধারালো অস্ত্র, দেশলাই, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে যুবভারতীর গ্যালারিতে ঢোকা যাবে না। |
• মাঠে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা খেলার সময় সারাক্ষণ গ্যালারির দিকে তাকিয়ে থাকবেন। |
• যুবভারতীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার শহরে আসছেন মণিপুর ফুটবল সংস্থার সভাপতি ও প্রাক্তন পুলিস কর্তা বি কে রোকা। |
|