দু’-দু’বার এগিয়ে, হাফটাইমেও ২-১ এগিয়ে থেকে ভারত ম্যাচটা হারলেও নবিদের ফুটবলের মধ্যে একটা ঐকান্তিক চেষ্টা সারাক্ষণ দেখলাম।
বিদেশের জাতীয় দলের বিরুদ্ধে দু’টো গোল করতে পারা। হাফটাইমে এগিয়ে থাকাএর জন্যও অন্তত কোভারম্যান্সের ছেলেদের কৃতিত্ব পাওয়া উচিত। হাউটনের দলের চেয়ে এই দলের ফুটবলারদের দৌড়নোর ক্ষমতা বেশি। একা হিরো হওয়ার প্রবণতা নেই কারও। সবাই মিলেমিশে খেলে দলকে হিরো বানানোর চেষ্টা করে। দলে তরুণ ফুটবলারের সংখ্যা বেশি। সঙ্গে আবার ভাল অনুপাতে অভিজ্ঞ ফুটবলারও রয়েছে। টিভিতে প্যালেস্তাইন ম্যাচ দেখে মনে হল, ‘সেই তো হেরে যাব’ মানসিকতা এই ভারতীয় ফুটবল দলের মধ্যে নেই। |
তা বলে কি ঘরের মাঠে প্রচুর সমর্থন পেয়েও (কোচিতে বুধবার গ্যালারিতে ৪০ হাজার দর্শক ছিলেন) ভারতের চার গোল খাওয়া এ দেশের ফুটবলে আলোর সন্ধান দিল? স্বভাবতই না। শেষ পঁয়তাল্লিশ মিনিট ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১৫২ নম্বর দেশের বিরুদ্ধেও ভারতীয় দলে আন্তর্জাতিক ফুটবলের ব্যাপারে এত বেশি অনভিজ্ঞতা ধরা পড়ল যে, জুয়েল রাজা, বিনীথরা প্রায় উধাও হয়ে গেল। প্যালেস্তাইন ছেলেদের বিশাল শরীর টপকাতে বারবার ব্যর্থ ছোটাখাটো চেহারার সুনীল ছেত্রী। নবিকেই যা সারাক্ষণ উজ্জ্বল দেখাল। ম্যাচের আগে কোভারম্যান্সের হাত থেকে বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার বাবদ রুপোর ট্রফি আর দু’লাখ টাকার চেক পাওয়াটা নবিকে নিশ্চয়ই আরও উদ্বুদ্ধ করেছিল। ক্লিফোর্ড মিরান্ডা চমৎকার অনুমানক্ষমতায় ভারতকে এগিয়ে দেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে আশরাফ ১-১ করেছিল। কিন্তু মেহতাবের ইনসুইং কর্নারে নিখুঁত হেড দিয়ে নবি ৩৯ মিনিটে ফের ভারতকে এগিয়ে দেয়।
যদিও দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোল খেয়ে যাওয়ায় ভারত পিছিয়ে পড়তে থাকে। আসলে আমাদের জাতীয় দলে ওই ছয় আর সাতের দশক বাদে প্রায় সব সময় উচ্চতা, ওজনের অভাব। চুনীদাদের সময় কম করে ছ’-সাত জন ফুটবলারের গড় উচ্চতা ছ’ফুট ছিল। থঙ্গরাজ থেকে শুরু করে অরুণ ঘোষ, জার্নেল, রহমান, প্রদীপদা, বলরাম...। সাতের দশকে প্রসাদ, নইম, মনজিৎ, মগন সিংহরা বেশ লম্বা ছিল। আন্তর্জাতিক ম্যাচে আমাদের বারবার মার খাওয়ার একটা বড় কারণ হাইট আর ওজনে খামতি। জাপানি আরাতা প্রথম বিদেশি ফুটবলার হিসেবে ভারতের হয়ে খেলে এ দেশের ফুটবলে ইতিহাস রচনা করল। কিন্তু ওইটুকুই। আরাতার মতো সাধারণমানের বিদেশিকে ভারতের জার্সি দিয়ে আমাদের ফুটবলের কোনও লাভ হবে না। বিকাশ ধরাসু হলে তবু লাভ ছিল। কিংবা চিমা-ব্যারেটোর টপ ফর্মে ওদের খেলাতে পারলে ভারতকে অনেক ম্যাচে ওরা হয়তো একাই জিতিয়ে দিত। নিয়মটা এ দেশে সেই চালু হল। কিন্তু অনেক দেরিতে।
এ দিন প্যালেস্তাইনের আশরাফ একটা পেনাল্টি সমেত হ্যাটট্রিক করে গেল। পেনাল্টিতে সন্দীপকে নড়তে দেয়নি। অন্য গোল দু’টো করার সময় ভারতের ডিফেন্সে ও প্রায় আনমার্কড। তা-ও সন্দীপ দু’বার একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে না বাঁচালে আরও গোল খেতে পারত ভারত।
ভারতের হয়ে খেলেন: সন্দীপ, গৌরমাঙ্গী, ডেঞ্জিল, রাজু, লেনি (আরাতা), অলউইন, ফার্নান্ডেজ, মেহতাব, ক্লিফোর্ড, নবি, সুনীল। |