নিজস্ব সংবাদদাতা • চুঁচুড়া |
এ বার বেশি জমিতে চাষ হওয়ায় আলুর দাম পাওয়া নিয়ে চিন্তিত ছিলেন রাজ্যের কৃষি দফতরের কর্তারা। কিন্তু চাষিমহলে এখন খুশির হাওয়া। কেননা, বাজারে আসতে শুরু করেছে ‘জলদি আলু’। আর তার ভাল দামও মিলছে। তবে, খেতের আলু এখনও পুরোপুরি ওঠেনি। তা উঠলে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, তা নিয়ে চাষিদের কেউ কেউ সংশয়ে থাকলেও আলু ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, শুরুর পরিস্থিতি দেখে অনেকটাই বিচার করা যায়। এই অবস্থা কিছুটা বদলালেও চাষিরা এ বারও আলুর ভাল দাম পাবেন।
বেশ কয়েকটি মরসুমে দাম না-পেলেও গতবার আলুর ভাল দাম পেয়েছিলেন এ রাজ্যের চাষিরা। সেই উৎসাহে তাঁরা এ বারে বেশি পরিমাণ জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১-১২ মরসুমে এ রাজ্যে ৩ লক্ষ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। এ বার চাষ হয়েছে ৪ লক্ষ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। এই অতিরিক্ত জমির চাষই এ বার চিন্তায় ফেলেছিল কৃষি দফতরের কর্তাদের। |
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মরসুমে জমির আলু এখনও পুরোপুরি ওঠেনি। প্রাথমিক ভাবে ‘পোখরাজ’ এবং ‘এস-৬’ আলু বাজারে আসতে শুরু করেছে। যা ‘জলদি আলু’ নামেই চাষিমহলে পরিচিত। তবে, এই এই আলু রাজ্যের সর্বত্র চাষ হয় না। মূলত, হুগলি, বাঁকুড়া এবং পূর্ব মেদিনীপুরে বিচ্ছিন্ন ভাবে সেচসেবিত এলাকায় এই আলুর চাষ হয়। এ বার জমিপ্রতি আলুর ফলন (প্রতি কাঠায় ২০০ কেজি) ভাল হয়েছে।
এ বার হুগলির তারকেশ্বরে চাষিরা ‘জলদি আলু’র দাম পাচ্ছেন প্যাকেটপিছু (৫০ কেজিতে এক প্যাকেট) ২৭০-২৮০ টাকা। বিঘেপ্রতি তাঁদের চাষ করতে খরচ হয়েছে ১০-১১ হাজার টাকা। গতবার এই সময়ে চাষিরা ‘জলদি আলু’র দাম পেয়েছিলেন গড়ে প্যাকেটপিছু ২০০-২১০ টাকা।
তারকেশ্বরের কেশবচক গ্রামের চাষি শ্যামল পাল এ বার আট কাঠা জমিতে ‘জলদি আলু’র চাষ করেছিলেন। বাকি জমিতে অবশ্য অন্য আলুর চাষ করেছেন। তাঁর কথায়, “আমি প্যাকেটপিছু ২৮০ টাকা দরে আলু বেচেছি। এ বার আলুতে ভাল দাম পাওয়া যাচ্ছে।” ভাগচাষি সুকুমার মালিক এ বার ২৩ কাঠা জমিতে ‘জলদি আলু’ ফলিয়ে ছিলেন। তিনিও প্যাকেটপিছু ২৮০ টাকা দরে আলু বিক্রি করেছেন।
তবে, ‘জলদি আলু’র চাষ রাজ্যের বেশি জমিতে হয় না বলেই ভাল দাম ভাল পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করছেন চাষিরা। তাঁদের মতে, ‘চন্দ্রমুখী’ বা ‘জ্যোতি আলু’র চেয়ে ‘জলদি আলু’ চাষে বিঘেপ্রতি খরচ অনেকটা কম। ভাল দাম পাওয়ার সেটাও একটি কারণ। এখন হিমঘরের পুরনো আলু শেষ হয়ে গিয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাজ্যের সব হিমঘর এখন বন্ধ। ফেব্রুয়ারির পরে খুলবে। তাই রাজ্যের ৯ কোটি মানুষকে জোগান দিতে এখন নতুন আলুই ভরসা।
|