সম্পাদকীয় ২...
আর কুসংসর্গ নহে
বাংলাদেশের আদালত মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যা, গণধর্ষণ ও গণধর্মান্তরের মতো ‘মানবতা-বিরোধী অপরাধ’-এর দায়ে জামাতে ইসলামির শীর্ষ নেতাদের বিচারান্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান দিয়াছে। দীর্ঘ চার দশক আগে সংঘটিত এই সব অপরাধের বিচারের প্রক্রিয়া নানা রাজনৈতিক কারণ ও বাধ্যবাধকতায় স্থগিত ছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা ওয়াজেদের আওয়ামি লিগ যে-সব প্রতিশ্রুতি দিয়া গত পার্লামেন্ট নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা অর্জন করে, তাহার মধ্যে অন্যতম প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল সেই স্থগিত বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করিয়া দোষীদের শাস্তিবিধান করা। গণতন্ত্রের সেই প্রত্যাশিত প্রক্রিয়াটিই এক্ষণে বাংলাদেশে চলিতেছে।
ঘটনাচক্রে এই অপরাধীদের অধিকাংশই বর্তমানে বাংলাদেশের বিরোধী জোটের শরিক জামাতে ইসলামির সদস্য, যে-জোটের নেতৃত্বে রহিয়াছে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি। জামাতে ইসলামি প্রতিবাদে রাস্তায় নামিয়াছে, হরতাল পালন করিয়াছে এবং প্রাণপণে অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করিতে হিংসা ও সন্ত্রাসের আশ্রয় লইতেছে। স্বভাবতই কিছুটা বিপাকে পড়িয়া গিয়াছেন বেগম জিয়া। এই অবস্থায় জামাতকে সমর্থন দেওয়ার অর্থ মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ ধামা-চাপা দেওয়া। বিএনপি সে পথে যায় নাই। জামাতের দাবি মোতাবেক অপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত বিশেষ ট্রাইবুনালগুলি রদ করার আহ্বানও সমর্থন করে নাই, বরং ওই সব আদালত ও তাহার বিচারপ্রক্রিয়া চালু থাকুক, ইহাই দাবি করিয়াছে। জোট-শরিক জামাতের সহিত নিবিড় ঘনিষ্ঠতার সম্পর্ক ক্ষুণ্ণ হওয়ার ঝুঁকিও বেগম খালেদাকে লইতে হইতেছে। সামনেই পার্লামেন্টের নির্বাচন। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি-বিজড়িত এই মামলা নূতন করিয়া সেই নির্বাচন-উত্তেজনায় ঘৃতাহুতি দিয়াছে। জামাতের হিংসা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপপ্রয়াসে অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ডের পাল্টা দাবিতে জনমত আলোড়িত হইতেছে।
এই সব কিছুর মধ্য দিয়া আবার বাংলাদেশের নবীন গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠান ও ঐতিহ্যগুলিকে সমাজে দৃঢ়তর করার প্রশ্নটি ওঠে। পাকিস্তানের মতোই বাংলাদেশেও সামরিক জেনারেলদের সহিত গণতন্ত্রীদের প্রতিযোগিতা অব্যাহত। গণতন্ত্র শেষ পর্যন্ত জয়ী হইবে কিনা, তাহা অনেকাংশেই নির্ভর করিবে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান (যেমন পার্লামেন্ট, বিচারব্যবস্থা) ও প্রক্রিয়াগুলির (যেমন অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠান, আইনের শাসন কায়েম থাকা) সাফল্যের উপর। জামাতপন্থীরা একদা পাকিস্তানের স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধে অন্তর্ঘাত চালাইবার পর এখন বিশ্বে রাজনৈতিক ইসলামের বাড়বৃদ্ধির সুযোগে জেহাদি ভাবধারা ও গোঁড়ামি উস্কাইয়া জঙ্গি সন্ত্রাসের নেপথ্য মদতদাতা। মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী গণঘাতক ও গণধর্ষকদের শাস্তি রদের দাবিতে তাহাদের নৈরাজ্য সৃষ্টির অভিযান। বিরোধী নেত্রী বেগম জিয়া ইহাদের সহিত সম্পর্ক ছেদের বিষয়টি বিবেচনা করিতে পারেন। তাঁহার প্রয়াত স্বামী জেনারেল জিয়াউর রহমানই তো বেতারে প্রথম মুক্তিযুদ্ধের আগমনী শুনাইয়াছিলেন!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.