সম্পাদকীয় ১...
ভিন্ন চর্চা ভিন্ন উপাধি
কাজটি শুরু করিয়াছিলেন কপিল সিব্বল, শেষ করিতে চলিয়াছেন বর্তমান কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী পল্লম রাজু। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট বিল প্রায় প্রস্তুত হইয়া আসিল বলিয়া— যাহার মাধ্যমে এই ঐতিহ্যশালী গরিমামণ্ডিত প্রতিষ্ঠান এখন হইতে ডিপ্লোমার পরিবর্তে ডিগ্রি প্রদান করিতে পারিবে। এত দিন অবধি ভারতের শিক্ষা-মানচিত্রে উৎকর্ষের নিরিখে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় এই প্রতিষ্ঠান কেবলমাত্র ডিপ্লোমাই দিতে পারিত। সংসদীয় আইন দ্বারা গঠিত না হইয়া ‘সোসাইটিজ রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট’-এর মাধ্যমে ‘সোসাইটি’ হিসাবে তৈরি হইবার কারণে এই প্রতিষ্ঠানগুলির এত দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমতুল্য স্থান ছিল না, এমনকী ডিমড্ বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবেও ইহারা পরিগণিত হইত না। ঠিক একই পরিস্থিতি ছিল ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি বা আইআইটি-গুলিরও, কিয়ৎকাল আগে পর্যন্ত। ২০১১ সালে নূতন আইআইটি বিল পরিস্থিতির পরিবর্তন আনিয়াছে। তাহার পর হইতেই আইআইএম’গুলির দাবির প্রাবল্য বাড়িয়াছে, এবং সেই দাবির সম্মুখে ২০১২ সাল হইতে তৎপরতা শুরু হইয়াছে, একই পথে আইআইএম বিল পাশের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানের অবস্থান পরিবর্তনের লক্ষ্যে। বিলটি তৈরি হইলে আইআইএম-এর অতি-লোভনীয় শিক্ষার্জনের শেষে ‘পিজিডিএম’-এর বদলে ‘এমবিএ’ ডিগ্রি আসিবে, ‘ফেলোশিপ’-এর স্থলে আসিবে পিএইচ ডি।
কিন্তু, ডিপ্লোমা বা ডিগ্রি— নামে কী আসিয়া যায়? আইআইএম বা আইআইটি’গুলির নাম-পরিবর্তনের জন্য এই আত্যন্তিক অধীরতার কারণ কী? ইহারা ডিপ্লোমা প্রদান করিয়া চলিলে অসুবিধাই বা কী? শোনা যায়, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যখন স্নাতকোত্তর স্তরে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট পড়াইয়া মাস্টার্স ডিগ্রি প্রদানের ক্ষমতা রাখে, তখন আইআইএম যদি ডিগ্রির বদলে ডিপ্লোমা দেয়, তাহা হইলে একটা অসাম্যের পরিস্থিতি উদ্ভূত হয়। শিক্ষকদের অভিযোগ, অনেক ছাত্রছাত্রী ভুল বুঝিয়া এই প্রতিষ্ঠানে আগ্রহ দেখায় না। এই যুক্তিটি কিন্তু মানিয়া লওয়া মুশকিল। প্রথমত, আইআইটি কিংবা আইআইএম যে প্রতিষ্ঠানই হউক, দেশের মধ্যে তাহার উৎকর্ষের মান্যতা, স্বীকৃতি কিংবা প্রতিপত্তি, নিতান্ত প্রশ্নাতীত। প্রবেশিকা পরীক্ষাগুলির জন্য আবেদনপত্রের আকাশ-ছোঁওয়া সংখ্যাই তাহার প্রকৃষ্টতম প্রমাণ। যে সকল ছাত্রছাত্রী এহেন স্বীকৃতি বা প্রতিপত্তি দেখিয়াও এই সব প্রতিষ্ঠানে আগ্রহী হয় না, তাহারা ডিপ্লোমার বদলে ডিগ্রি দিলেই দৌড়াইয়া চলিয়া আসিবে বলিয়া মনে হয় না। আর বিদেশের কথা ধরিলে, কান পাতিলেই কিন্তু শোনা যায় ভারতের বাহিরে পশ্চিমি দেশগুলিতে ভারতের দুইটি মাত্র প্রতিষ্ঠানের নামই সর্বত্র গুঞ্জরিত: আই আই টি এবং আই আই এম। সেখানেও ডিগ্রি-নামে উত্তরণের সাহায্যে নূতন কিছু অর্জন করিবার সম্ভাবনা কম। গত অর্ধশতক জুড়িয়া প্রতিষ্ঠান দুইটি স্বীয় উৎকর্ষবলেই দেশবিদেশে মান্যতা অর্জন করিয়াছে, তাহাদের ডিপ্লোমা প্রদান-রীতি সত্ত্বেও!
আসল কথা, নামে কিছুই আসে যায় না, নাম লইয়া এই অতি-সংবেদনশীলতা নিতান্ত ভারতীয় বায়নাক্কা। সুতরাং এই হইচই অনর্থক। ভ্রান্তও বটে। ডিগ্রি ও ডিপ্লোমার মধ্যে একটিমাত্র পার্থক্য: তাহা প্রতিষ্ঠানের মান-সম্পর্কিত নহে, পাঠ্যবিষয়ের মান-সম্পর্কিত। ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা ম্যানেজমেন্ট এই প্রতিষ্ঠানগুলিতে যত উত্তমরূপেই পড়ানো হউক, ওই সব বিষয়বস্তু উচ্চশিক্ষামুখী নহে, প্রযুক্তি-মুখী কিংবা প্রয়োগমুখী। ইহাদের লক্ষ্য সারস্বত চর্চা নহে, বরং প্রয়োগকুশলতায় উৎকর্ষ অর্জন। এই দুয়ের মধ্যে মৌলিক চারিত্রিক তফাত আছে। ‘ডিপ্লোমা’ এই প্রয়োগমুখিতা বা কৌশলতত্ত্বের ইঙ্গিতবাহী, ‘ডিগ্রি’ বুঝায় কোনও বিশেষ স্তরের সারস্বত চর্চার যোগ্যতা। এই মৌলিক পার্থক্য জোর করিয়া আইন পাশ করিয়া মুছিয়া ফেলা সম্ভবও নহে, উচিতও নহে। বরং এই গোটা প্রয়াসের মধ্যে যে স্পর্শকাতর দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশিত, প্রয়োজন এখনই সেই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। প্রযুক্তিবিদ্যা বা কৌশলতত্ত্ব, সুসভ্যতার বিকাশে দুটি বিষয়ই নিজ নিজ মর্যাদায় যথাযোগ্য অন্বিত, সারস্বত চর্চার উচ্চতা বা বিশিষ্টতা না-থাকিবার জন্য তাহার মানের কোনও হানি হয় না। ডিগ্রির কাছে ডিপ্লোমারও নিচু বোধ করিবার কারণ নাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.