|
|
|
|
কোরনাটাঁড়ে ডিসি, আপ্লুত গ্রামবাসীরা |
প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় • রাঁচি |
শিঙা বাজছে। মাদল বাজিয়ে নাচছেন আদিবাসী তরুণ-তরুণীর দল। ধোপ-দুরস্ত পোশাক পড়ে উৎসাহী গ্রামবাসীরা দলে দলে ভিড় করছেন গ্রামের ফুটবল ময়দানে। সারা গ্রামে যেন উৎসব। সবাই তৈরি তাঁকে স্বাগত জানানোর জন্য। সকলে তাঁর অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। শেষ পর্যন্ত দুপুর দেড়টা নাগাদ তিনি এলেন গ্রামে।
না, দেশের প্রধানমন্ত্রী নন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নন, এমনকী রাজ্যের কোনও ছোট-খাটো মন্ত্রীও তিনি নন। বলিউডের কোনও নায়কও নন তিনি। তিনি স্রেফ একজন উচ্চ পদস্থ আমলা। জেলার ডেপুটি কমিশনার অর্থাৎ জেলাশাসক। স্বাধীনতার পর ৬৫টি বছর কাটতে চলল। কিন্তু এই ৬৫ বছরে এমন পদ মর্যাদার কোনও আমলা এই প্রথম পা দিলেন গিরিডির কোরনাটাঁড় গ্রামে। গ্রামবাসীরা এমন এক আমলাকে দর্শন করে ধন্য হলেন। সেই খুশিতেই কাড়া-নাকাড়া বাজিয়ে উৎসব। |
|
স্বাধীনতার ৬৫ বছর পর গ্রামে পা দিয়েছেন ডিসি। তাঁকে স্বাগত জানাতে তৈরি গ্রামবাসীরা। —নিজস্ব চিত্র। |
পঞ্চায়েত এলাকা পর্যবেক্ষণ করতে রবিবার গিরিডির দেরদুঙ্গা পঞ্চায়েতের কোরনাটাঁড় গ্রামে যান গিরিডির ডেপুটি কমিশনার দীপ্রভা লাকরা। তাঁকে চোখের দেখা দেখতে গোটা গ্রাম কার্যত জড়ো হয় গ্রামের ফুটবল মাঠে।
গ্রামের উন্নয়নের জন্য কী কী প্রয়োজন সে সব তাঁকে জানান গ্রামবাসীরা। এমন ঘটনায় ডেপুটি কমিশনার নিজেও অবাক। তিনি বলেন, “আমি নিজেও এই কথাটা শুনেছি গ্রামের মানুষের কাছ থেকে। আমিও অবাক। জানি না কেন এত বছরে ওই গ্রামে কোনও উচ্চ পদের সরকারি আধিকারিক যাননি। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন গ্রামে বিদ্যুৎ-এর সমস্যা রয়েছে। সেচের সমস্যাও রয়েছে। দেখা যাক কী করা যায়।” কোরনাটাঁড় ঘুরে আসার পরে আপাতত জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবিলম্বে সেখানে একটি স্বাস্থ্য শিবির করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান ডেপুটি কমিশনার।
দেরদুঙ্গা জায়গাটি প্রথমে পলামু জেলার একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল ছিল। দু’ বছর আগে সেটি গিরিডি জেলার অধীনে এসেছে বলে জানান গ্রামের মানুষ। পঞ্চায়েত প্রধান ঘনশ্যাম কোল জানান, দু’ বছর আগেই দেরদুঙ্গা পঞ্চায়েতের তকমা পেয়েছে। ফলে এখন ধীরে ধীরে সরকারি সুযোগ-সুবিধা আলাদাভাবে পেতে শুরু করেছেন দেরদুঙ্গা এলাকার মানুষজন। সব মিলিয়ে দেড় হাজার লোক বসবাস করেন ওই গ্রামে। ঘনশ্যামের কথায়, “পঞ্চায়েত হওয়ার আগে আমরাও সাধারণ গ্রামবাসীর মতোই নিজের নিজের কাজকর্ম নিয়ে থাকতাম। ফলে আমাদের নিয়েও কোনও স্তরে কোনও মাথাব্যাথা ছিল না। নিম্নস্তরের সরকারি অফিসাররা মাঝেমধ্যে গ্রামে আসতেন।
পঞ্চায়েত হওয়ার পরে বিভিন্ন সরকারি প্রশিক্ষণ শিবিরে গিয়ে আমরা জেনেছি ডেপুটি কমিশনারের কথা। তারপরে আমরা ওঁর কাছে যাই। তাঁকে আমাদের গ্রামে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাই। শেষ পর্যন্ত উনি আমাদের গ্রামে এসেছেন।”
আদিবাসী-প্রধান গ্রামটির সিংহভাগ মানুষই ধান চাষের উপর নির্ভরশীল। ধানের সময় চলে গেলে যাতে ডাল কিংবা আলুর চাষ করার যায়, তার জন্য এখন তাঁরা সেচের উন্নয়ন চাইছেন। ডেপুটি কমিশনার সাহেবের কাছে আবেদনও জানিয়েছেন। পাশাপাশি, বিদ্যুৎ এবং সড়ক নির্মাণের কাজও ঠিক ভাবে করার জন্য দেরদুঙ্গা পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ‘সাহেবের’ কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। আশা, এ বার হয়তো একটা সুরাহা হবে। |
|
|
|
|
|