|
|
|
|
সাহসিকতার পুরস্কার |
প্রধানমন্ত্রী সামনে, আবেগে জড়াল টম-জেরির ভক্ত |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
যার জন্য বাড়িতে বকুনি খেতে হত, সেই কার্টুন দেখার দৌলতেই শেষ অবধি মণিপুরের অখ্যাত গ্রাম থেকে আট বছরের ছেলেটা সোজা চলে গেল দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে। সাহসিকতার জন্য পুরস্কার নিল প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে। দেশের উপ রাষ্ট্রপতি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও অন্যান্য ভিভিআইপি-দের পাশে বসে ‘ভিআইপি’ হয়ে দেখল প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ। এমন কী রাজ্যে ফেরার পরেও ঘটা করে সম্বর্ধনা অপেক্ষা করে ছিল কোরোউংগাম্বা কুমামের জন্য।
মইরাং বরাবরই সাহসিকতার জন্য খ্যাত। এখানেই স্বাধীন ভারতের প্রথম তেরঙা উড়িয়েছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। কাছেই অলিম্পিক ব্রোঞ্জজয়ী মেরি কমের বাড়ি। সেই মইরাং-এর বাসিন্দা কুমাম বাবুচাঁদ ও সোফিয়ার বড় ছেলে কোরোউংগাম্বা। বাবা মইরাং কলেজের শিক্ষক। ছেলে নিউ মডেল পাবলিক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। মেয়ের বয়স পাঁচ। কোরোউংগাম্বার পড়াশোনার চেয়েও ‘টম অ্যান্ড জেরি’-তেই আগ্রহ বেশি। দিনভর ইঁদুর-বেড়ালের চোরপুলিশ দেখতে থাকা ছেলেকে শাসন করেও বাগে আনতে পারেন না বাবা-মা। কার্টুনেই কোরোউংগাম্বা দেখেছিল, টমের গায়ে আগুন লেগে যাওয়ার পরে ছোট্ট জেরি কি ভাবে কম্বল জড়িয়ে সেই আগুন নেভায়। |
|
চোখের সামনে প্রধানমন্ত্রীকে দেখে আপ্লুত কুমাম। —ফাইল চিত্র। |
২০১১ সালের ১১ জুলাই। ভাইবোন বাড়িতে ছিল। বাবা-মা গিয়েছিলেন বাইরে। কী ভাবে যেন তাদের কাঠের বাড়িটিতে আগুন লেগে গিয়েছিল। ছোট্ট বোনের বিছানা অবধি আগুনের গ্রাসে চলে গিয়েছে দেখে, টিভিতে দেখা জেরির কীর্তি কোরোউংগাম্বার মনে পড়ে যায়। ঝটপট একটা কম্বল জোগাড় করে, অকুতোভয়ে আগুন ডিঙিয়ে ছোট্ট বোনকে মুড়ে ফেলে সে। তারপর কম্বল জড়ানো অবস্থায় জ্বলন্ত বাড়ি থেকে বোনকে টেনে বের করে আনে।
গত ২৪ জানুয়ারি দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ সাহসিকতার জন্য তার হাতে শংসাপত্র ও ২০ হাজার টাকার পুরস্কার তুলে দেন। সামনে প্রধানমন্ত্রীকে দেখে আপ্লুত কোরোউংগাম্বা তাঁকে জড়িয়ে ধরে। যে ২২ জন শিশু ও কিশোর এই বছর সাহসিকতার পুরস্কার পেল, তার মধ্যে কোরোউংগাম্বাই কণিষ্ঠতম। পুরস্কারের পাশাপাশি, ১৮ বছর অবধি তার লেখাপড়ার খরচ জোগাবে সরকার। মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং-এ কোটাও থাকবে তার জন্য। দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবন, কুচকাওয়াজ দেখার পাশাপাশি ন্যাশনাল সায়েন্স সেন্টার, ফান অ্যান্ড ফুড ভিলেজও ঘুরে এসেছে সে। কয়েকদিন আগে কোরোউংগাম্বা ইম্ফলে ফেরে। ইরাবত ভবনে তাকে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। ছোট্ট কোরোউংগাম্বা তার সাহসের পিছনে লুকানো কার্টুনকাণ্ডের গল্প শোনায় সকলকে। বলে, বড় হয়ে সে চিকিৎসক বা সেনা অফিসার হতে চায়। |
|
|
|
|
|