|
|
|
|
কলেজে ভোটের দামামা, সদল হাজির তৃণমূল বিধায়ক |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
পাঁচ দিন আগেই কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমার সময়ে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর ও নেতৃত্বের উপস্থিতি নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছিল দমদমের সরোজিনী নাইডু কলেজে। অভিযোগ, মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি এসএফআই। বুধবার কার্যত তারই পুনরাবৃ্ত্তি দেখল বিধাননগর গভর্নমেন্ট কলেজ। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এ দিন কাউন্সিলর বা নিচুতলার নেতাদের মধ্যে আটকে থাকেনি। কলেজের দরজায় হাজির হলেন শাসক দলের এক বিধায়ক। তাঁর উপস্থিতিতেই গোলমাল ছড়াল কলেজের বাইরে। যদিও সংশ্লিষ্ট বিধায়ক সব্যসাচী দত্তের দাবি, কলেজের ভোটে ‘নাক গলাতে’ তিনি হাজির ছিলেন না। এসএফআই অবশ্য এ দিন মনোনয়নপত্র তুলতে পেরেছে।
আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি বিধাননগর গভর্নমেন্ট কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচন। বুধবার থেকে মনোনয়নপত্র তোলার কাজ শুরু হয়। এ দিন দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত কলেজের বাইরে হাজির ছিলেন রাজারহাট-নিউ টাউনের বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। কয়েক জন স্থানীয় তৃণমূল নেতা-নেত্রীকেও কলেজের বাইরে দেখা যায়।
কিন্তু কলেজ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র তোলার সময়ে বিধায়কের কী কাজ? সব্যসাচীবাবুর দাবি, “কলেজের ভোটের জন্য যাইনি। আমি বিধাননগর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান, তাই ওই এলাকায় একটি আইল্যান্ড তৈরির কাজ দেখতে গিয়েছিলাম। কলেজে সামনে গোলমাল দেখে দাঁড়িয়ে যাই, কী হয়েছে জানার জন্য।” কিন্তু পুরসভা সূত্রের খবর, ওই আইল্যান্ডের কাজ চলছে মেট্রো-কর্তৃপক্ষের অধীনে। |
কলেজের সামনে সব্যসাচী দত্ত। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র। |
এসএফআই-এর অভিযোগ, শ’দেড়েক বহিরাগতকে নিয়ে সকাল থেকেই কলেজের বাইরে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন ওই বিধায়ক ও তাঁর দলবল। কলেজের ভিতরে হামলা চালায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যেরা। পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও কলেজের গেটের বাইরে এসএফআই সদস্যদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
সকাল থেকেই উত্তেজনা ছিল বিধাননগর কলেজ চত্বরে। বাইরে পুলিশি ব্যবস্থাও ছিল চোখে পড়ার মতো। দুপুর একটা নাগাদ গোলমাল তুঙ্গে ওঠে। দু’টি দলের সংঘর্ষ হয়। ঘটনায় দলের চার ছাত্রী-সহ মোট আট জন আহত হয়েছেন বলে দাবি এসএফআই-এর। একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয় আহতদের দু’জনকে। এসএফআই নেতা সপ্তর্ষি দেবের অভিযোগ, “কলেজের ভিতরে হামলা চালিয়েছে টিএমসিপি। বাইরে দলবল সমেত হাজির ছিলেন স্বয়ং বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। তাঁর মদতেই গোলমাল ছড়াল। দুপুরে কলেজের গেটের মুখে আমাদের সদস্যদের মারধর করল। ভয়ে দীর্ঘ ক্ষণ কলেজ থেকেই বেরোতেই পারেনি ছাত্রছাত্রীরা।”
অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতৃত্বের দাবি, মঙ্গলবার থেকে লাগাতার তাঁদের সংগঠনের কর্মীদের হুমকি দিচ্ছিল এসএফআই। ফলে কলেজে এ দিন উত্তেজনা ছিল। কিন্তু তাঁরা কাউকে মারধর করেননি। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের উত্তর ২৪ পরগনার জেলা কমিটির কার্যকরী সভাপতি শাহনওয়াজ মণ্ডল বলেন, “দুপুরে একটি গাড়ি করে যাওয়ার সময়ে ওরা আমাদের দলের সদস্যদের কটূক্তি করে। কলেজের ছাত্রেরা প্রতিবাদ করলে তারা পালায়। এ ছাড়া কিছুই ঘটেনি।” তাঁর আরও দাবি, “কলেজ আমাদের দখলেই। আমরা শক্তি দেখালে এসএফআই কলেজে ফ্ল্যাগ, ফেস্টুন লাগাতে পারত না, মনোনয়নপত্রও তুলতে পারত না। নির্বাচনে হার নিশ্চিত জেনে ভিত্তিহীন কথা বলছে।” তৃণমূল ছাত্র পরিষদের আরও দাবি, গোলমালের সময়ে এ দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের নেত্রী রমলা চক্রবর্তী-সহ আরও কয়েক জন নেতা। তবে এ কথা অস্বীকার করেছে এসএফআই।
এ দিকে এসএফআই-এর দাবি উড়িয়ে ওই সরকারি কলেজের অধ্যক্ষা মণিমালা রায়ের দাবি, “কলেজের মধ্যে কোনও গোলমাল হয়নি। কলেজের বাইরে কী হয়েছে, তা জানি না। সেটা আমার এক্তিয়ারেও নয়। ছাত্রছাত্রীরা বাইরে বেরোতে ভয় পাচ্ছিল। পুলিশের সঙ্গে কথা বলে তাদের বেরোনোর ব্যবস্থা করা হয়।”
পুলিশের সামনে ছাত্রছাত্রীদের মারধর করা হলেও ব্যবস্থা কেন নেওয়া হল না, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। এই অভিযোগের কোনও স্পষ্ট জবাব অবশ্য মেলেনি পুলিশের তরফে। বিধাননগরের অতিরিক্তি ডেপুটি পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণকলি লাহিড়ী বলেন, “এমন অভিযোগ এলে নিশ্চিত ভাবেই খতিয়ে দেখা হবে।”
|
|
|
|
|
|