|
|
|
|
|
|
সিইও-র টেবিল থেকে |
সঞ্চয় আগে খরচ পরে |
রিলায়্যান্স লাইফের এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর ও প্রেসিডেন্ট মলয় ঘোষের সঙ্গে আলাপচারিতায় সুপর্ণ পাঠক |
বিমা সাধারণ মানুষের কাছে একটা সঞ্চয় প্রকল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব সঞ্চয়ের মধ্যে বিমার স্থান কোথায়, তা নিয়ে কোনও স্পষ্ট ধারণা গড়ে ওঠেনি। বিমা তো ঝুঁকি ঠেকানোর জন্য। কিন্তু ইউনিট লিঙ্কড বিমা কিনলে আবার একটা ঝুঁকিও নিচ্ছি আমরা। এজেন্টরা বিমা করান বিমাকারীর প্রিমিয়াম দিতে পারার ক্ষমতা দেখে। চাহিদা দেখে নয়।
সাধারণ মানুষ বলতে একটা প্রোফাইল তৈরি করা যাক। ইনি একজন মহিলা বা পুরুষ, যাঁর মাসিক রোজগার ধরা যাক ১৫ হাজার টাকা। পরিবারে স্বামী, স্ত্রী এবং দুই সন্তান। দায় রয়েছে। ধরা যাক বাবা এবং মায়ের জন্যও কিছু করতে হয় কারণ বাবা অবসরপ্রাপ্ত।
এই মানুষটি একটি চাকরি করেন, যেখানে তিনি অবসর নেবেন ৫৮ বা ৬০ বছর বয়সে। তাঁর আশা, অবসরের আগেই নিজের বাড়ি হবে। ছেলে এবং মেয়ের পড়াশোনাও শেষ হবে অবসরের আগেই এবং তারা চাকরিও শুরু করে দেবে। অবসরের পরে সন্তানের উপর নির্ভর করতে চান না একেবারেই। বরং তাঁর চেষ্টা, সন্তানের প্রথম জীবনে যাতে আর্থিক সাহায্য করা যায়।
অসুখ বিসুখ হলে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে নিতে পারবেন। সবকিছু ঠিকঠাক চললে তিনি মনে করেন যে, তাঁর অন্তত এক মাসের রোজগার তিনি যে কোনও সঞ্চয় প্রকল্পে রাখতে পারেন। এটা অবশ্যই তাঁর আবশ্যিক গ্র্যাচুইটি বা পি এফের বাইরে গিয়েই।
এই রকম একজন মানুষের অবশ্যই দরকার একজন সঞ্চয় উপদেষ্টার। প্রথমেই দেখা দরকার, তাঁর বাড়ির স্বপ্নটা কতটা জরুরি। তিনি সঞ্চয় ভাঙিয়ে ধার করে বাড়ি করতে চান, না কি বাড়ি ভাড়ার টাকায় ধারের মাসিক কিস্তি দিয়ে কর বাঁচানোর রাস্তা নিতে চান।
সঞ্চয় উপদেষ্টা তাঁকে ধারের পথেই হাঁটতে বলবেন। কেননা যত তাড়াতাড়ি ফ্ল্যাট বা বাড়ি তিনি কিনবেন, সময়ের সঙ্গে তার দাম বাড়ার সুযোগ তিনি নিতে পারবেন।
অন্য দিকে ভাড়ার টাকা তাঁর সম্পত্তি তৈরিতে খরচ হবে। এবং তাঁর যে করের টাকাটা বাঁচবে, সেটাকে লাভের ঘরেই রাখতে হবে।
এ বার তাঁকে উপদেষ্টা বলবেন বিমার কথা। যদি তাঁর কিছু হয়ে যায় ধার শোধ করার আগেই, তা হলে তো পরিবার পথে বসবে। তাই ধারের টাকা যাতে বিমার টাকাতে শোধ করা যায়, সেটা দেখতে হবে। বাজারে নানা প্রকল্প আছে, যা এই ধরনের ঝুঁকি এড়ানোর জন্যই তৈরি।
বিমার প্রথম ধারণাটার শুরুই এখান থেকে। একটা সম্পত্তি আপনি করেছেন। যার পুরো দাম আপনি চোকাননি। এ বার তা শোধ করতে না-পারার ঝুঁকি এড়াতেই আপনি বিমা করছেন।
এটা তো গেল বিমার প্রাথমিক ধারণার প্রসঙ্গ। কিন্তু সঞ্চয়ের বাকিটা?
হ্যাঁ। এক এক করে দেখছি। এ বার আসছি দ্বিতীয় ঝুঁকির প্রশ্নে। যা হল, আপনি এবং আপনার পরিবারের জীবনের ঝুঁকি। যেমন স্বাস্থ্য বিমা। আজকের ধারণা হল গোটা
পরিবারের জন্য ফ্লোটার নিন। এবং নিয়ম করে প্রিমিয়াম দিন, যাতে আপনার ‘কভারেজ’-এ কোনও ছেদ না পড়ে।
আজকাল নানা পলিসি তৈরি হয়েছে, যাতে সামগ্রিক প্রিমিয়াম কম হয়। যেমন জীবন বিমা ও স্বাস্থ্য বিমা একসঙ্গে। এই বিমার জন্য সংস্থার খরচ কম হয়। যার লাভ পান ক্রেতারাও।
এ বার আসছে পরবর্তী চাহিদার প্রশ্ন। আপনার মেয়ে আছে তার বিয়ের জন্য টাকা লাগবে। অথবা ছেলের উচ্চশিক্ষার জন্য টাকা সরিয়ে রাখতে হবে। আপনি যদি গোটা বছরের আয়ের ১০ শতাংশ সঞ্চয় করতে পারেন তার মধ্যে অন্তত তিন শতাংশ এর জন্য নির্দিষ্ট করতে হবে। ছয় শতাংশ টাকা আপনাকে অবসরের জন্য সরিয়ে রাখতে হবে।
অবসরের সঞ্চয়ের জন্য অবশ্যই মিউচুয়াল ফান্ড সব থেকে ভাল জায়গা। আর তার পরেই পছন্দের তালিকায় থাকা উচিত বিমা। তবে মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা রাখতে গেলে একটা শৃঙ্খলা বোধের প্রয়োজন। বিমার ক্ষেত্রে যেহেতু প্রিমিয়ামের একটা চাপ থাকে, তাই ওটা আপনা থেকেই
হয়ে যায়। |
|
কিন্তু এতেই তো সঞ্চয়ের দায় শেষ নয়?
হ্যাঁ। এ বার আসছি সঞ্চয়ের খিদের জায়গায়। আমাদের দৈনন্দিন নানা চাহিদা আছে। স্বল্পকালীন অথবা দীর্ঘকালীন। কেউ কেউ ধার করে কেনেন। কেউ বা সেই চাহিদা মেটান টাকা জমিয়ে। অনেকেই সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে আয় থেকে খরচের টাকা বাদ দিয়ে যা পড়ে থাকে তার উপর ভিত্তি করে সঞ্চয়ের হিসাব করেন। আমি বলি আগে সঞ্চয়ের প্রয়োজনীয়তা হিসাব করে সেটা আয় থেকে বাদ দিয়ে তার পরে যা পড়ে থাকে, তার থেকে খরচের অঙ্ক করুন।
এ বার যে সঞ্চয়ের অংশে আমরা আসছি সেখানে রয়েছে শেয়ার বা ঋণপত্রে বিনিয়োগের প্রশ্ন। তাই তো?
হ্যাঁ। বয়স অনুযায়ী এবং ঝুঁকি নেওয়ার খিদে অনুযায়ী কেউ শেয়ারে ৮০ শতাংশ আর বাকি ২০ শতাংশে বন্ডে লগ্নি করতে পারেন। তবে গোটা জীবন ধরেই সঞ্চয়ের এই বাক্স ঝাড়পোঁছ করতে হবে বাজার অনুযায়ী। যদি এটা করতে অসুবিধা হয় তাহলে মিউচুয়াল ফান্ডের রাস্তায় হাঁটাই ভাল।
আবার মিউচুয়াল ফান্ডেও সমস্যা রয়েছে। কখন বিক্রি করব বা কিনব। তার একটা খরচও আছে। এই অঙ্কটা করতে অসুবিধা হলে অবশ্যই বিমার রাস্তায় হাঁটতে হবে।
মানে আপনি এখন বলছেন ‘বিমা যখন সঞ্চয়’ তার কথা?
হ্যাঁ। এখানে ইউনিট লিঙ্কড পলিসি-র ভূমিকা রয়েছে। তবে এই পলিসির সমস্যা হল এখন মাসে ২০০০ টাকার কমে এই পলিসির প্রিমিয়াম হয় না। আগে মাসে ৫০০ টাকা প্রিমিয়ামেও পাওয়া যেত। কিন্তু তা এখন অতীত।
আপনি যদি এই টাকাটা খরচ করতে পারেন তাহলে দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়ের রাস্তা হিসাবে বেশ ভাল। এতে আপনি বাৎসরিক যে-প্রিমিয়াম দেন তার ১০ গুণ জীবন বিমা পাবেন। বছরে ২০ হাজার টাকার প্রিমিয়াম হলে ২ লক্ষ টাকার মতো বিমা। আপনি নানা ঝুঁকি মেটানোর বিমাও এক সঙ্গেই করিয়ে নিতে পারেন।
জীবন বিমা সংস্থার সমস্যা হচ্ছে আপনি আলাদা করে ‘রাইডার’ বা বিশেষ ঝুঁকি সামলানোর বিমা বিক্রি করতে পারবেন না। ধরুন অ্যাক্সিডেন্ট পলিসি। তাও আমাদের জীবন বিমার সঙ্গেই বিক্রি করতে হয়।
আমাদের একটা ‘ফ্যামিলি ইনকাম’ রাইডার আছে। যে কোনও জীবন বিমার সঙ্গে বিক্রি করা হয়। আমরা দেখেছি কোনও ব্যক্তি মারা গেলে, বিমার টাকা মৃতের দায় মেটাতেই শেষ হয়ে যায়। তার পরে যা পড়ে থাকে, তার থেকে কিছু হয় না। এই রাইডার কিনলে প্রতি মাসে সাম অ্যাশিওর্ডের এক শতাংশ টাকা মৃতের পরিবার একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পেতে থাকবেন।
আমার উপদেশ হল, একই বিমার মধ্যে বেশ কিছু চাহিদা মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা উচিত। যেমন সাধারণ বিমার সঙ্গে মেডিক্লেম। একটা পলিসিতেই দুটো লাভ। আমি বলি, মাসিক প্রিমিয়ামে যাওয়া উচিত। এখন এটা করা সম্ভব।
এ বার যে রকম চাহিদা বাড়বে সেই ভাবে টপ আপ করে যাওয়া। এটা এখন সম্ভব। কিন্তু সঞ্চয় ও চাহিদা মাঝে মাঝেই খতিয়ে দেখতে হবে।
কিন্তু যাঁরা এখন মধ্য পঞ্চাশে তাঁরা তো মান্ধাতার আমলের বিমা নিয়ে বসে আছেন?
দেখুন যাঁরা এই বয়সে, তাঁরা কিন্তু ইতিমধ্যেই কম বয়সে মারা যাওয়ার ঝুঁকি পেরিয়ে এসেছেন। বিমা দরকার কম বয়সীদের জন্য অনেক বেশি। এই বয়সে ঝুঁকি তো অনেক বেশি।
মধ্য পঞ্চাশে এসে তাই অঙ্কটা বদলে যায়। এই বয়সে তাই ‘টার্ম ইনশিওরেন্স’ নেওয়াটাই ভাল। তবে এই বয়সে বিমার খরচটা বেড়ে যায়। তাই প্রিমিয়ামটাও বেশি হয়ে দাঁড়ায়। তবে এই বয়সে এসে অন্য সঞ্চয়ও কিছু হয়েই থাকে।
তবে এই বয়সে এসে এই অঙ্কটা অত সহজ থাকে না। এটা প্রতিটি ব্যক্তির ক্ষেত্রে আলাদা হবে। আসলে স্বাস্থ্য বিমা একটা সমস্যা এই বয়সে। এই বয়সের মানুষদের বেশির ভাগই ব্যক্তিগত পলিসি নিয়েছেন। এটাকে ফ্লোটারে পরিবর্তন করুন।
অবসরের পরে রোজগারের জন্য জাতীয় অবসর ভাতা প্রকল্পে টাকা রাখা শুরু করুন।
প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা বাড়ান। দেখুন আপনি কর বাঁচানোর সব রাস্তা শেষ করেছেন কিনা। যদি না-করে থাকেন, তা হলে যে সব প্রকল্পে করছাড় মিলবে সেখানে টাকা রাখুন।
আর অ্যানুইটি কেনা শুরু করুন। |
|
|
|
|
|