ব্যাঙ্ক লকার |
আপনার গোপন সিন্দুক
নিজের সম্পদ লোকচক্ষুর আড়ালে রাখলেন আর দায়িত্ব
ফুরিয়ে
গেল, তা কিন্তু একেবারেই নয়। লকার ধরে রাখার
অনেক শর্ত আছে। আবার বিপদ থেকে বাঁচতে কিছু বিষয়ে
সতর্কও থাকতে হবে জানালেন অমিতাভ
গুহ সরকার |
|
|
চোর
বাটপাড়ের কপাল পুড়েছে, যবে থেকে লকারে সোনাদানা রাখার রেওয়াজ শুরু হয়েছে। ব্যাঙ্কের সেফ ডিপোজিট লকার হল, সোনা-গয়না এবং মূল্যবান দলিল-দস্তাবেজ নিরাপদে রাখার শ্রেষ্ঠ জায়গা। যে কোনও পরিবারের একটি লকার থাকা সেই গৃহস্থের কাছে বড় স্বস্তির। যাঁদের এই সুযোগ নেই, আশঙ্কা তাঁদের নিত্যসঙ্গী। বিশেষ করে সোনার দাম যে জায়গায় পৌঁছেছে, তাতে বাড়িতে বেশি গয়না ফেলে রাখা নিতান্তই বোকামি। তবে লকার ব্যবহার করার ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই তার সঙ্গে জুড়ে থাকা শর্তগুলি মাথায় রাখুন ও সাবধান থাকুন। তা হলে পরে খামোখা আর পস্তাতে হবে না।
|
চাইলেই পাওয়া যায় না |
একটা লকার পাওয়ার জন্য ওঁত পেতে বসে থাকতে হয়। যৌথ পরিবার ভেঙে অসংখ্য ছোট পরিবার সৃষ্টি হওয়ায় ভীষণ ভাবে বেড়ে উঠেছে এর চাহিদা। ব্যাঙ্কের সব শাখায় লকারের সুবিধাও থাকে না। ফলে বড় ফারাক সৃষ্টি হয়েছে চাহিদা-জোগানের মধ্যে। তাই একবার লকার পেলে সাধারণত কেউ ছাড়তে চান না। আর কাছাকাছি কোনও ব্যাঙ্ক লকারের সুবিধা-সহ শাখা খুললে তবেই তা পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
তীব্র চাহিদার সুযোগ নিয়ে অনেক ব্যাঙ্ক লকার দেওয়ার পরিবর্তে গ্রাহকের থেকে মোটা টাকার আমানত দাবি করে। এমনকী আজকাল জীবনবিমা করার শর্তও আরোপ করা হচ্ছে। এই শর্তগুলি অবশ্যই অ-লিখিত।
|
|
গোড়ার কথা |
• লকার কেনা যায় না। • শর্তসাপেক্ষে ভাড়া নিতে হয়। • ভাড়া সব সময়েই আগাম দিতে হয়। • তা বকেয়া থাকলে কিন্তু ব্যাঙ্ক লকার ব্যবহার করতে নাও দিতে পারে। • যে ব্যাঙ্কে লকার খুলবেন, সেখানে একটি সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকা প্রয়োজন। ভাড়া সাধারণত সেই অ্যাকাউন্ট থেকে সময়মতো কেটে নেওয়া হয়। • ব্যবহারের সময় সাধারণত সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টো এবং দুপুর ৩টে থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। শনিবার শুধু দিনের প্রথম অর্ধেই লকার খোলার সুযোগ পাওয়া যায়। • বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিতে লকার ব্যবহারের সময় ভিন্ন হতে পারে। • কোনও ব্যক্তি নিজের নামে অথবা অন্য কোনও ব্যক্তির সঙ্গে যুগ্ম নামে ভাড়া নিতে পারেন। • নমিনেশনেরও সুবিধা নেওয়া যায়। গ্রাহকের লিখিত সম্মতি-সহ নমিনিও লকার ব্যবহার করার অনুমতি পেতে পারেন। • অন্য কিছু বলা না থাকলে, যুগ্ম নামের প্রত্যেকে একক ভাবে সেটি ব্যবহার করতে পারেন। • প্রয়োজনে গ্রাহক অন্য কোনও ব্যক্তিকে লিখিত ভাবে নিজের লকারটি ব্যবহারের অনুমতিও দিতে পারেন। তবে এই অনুমতি সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কে নথিবদ্ধ করাতে হবে। |
শর্ত না মানলে চুক্তি খারিজ |
• গ্রাহক তাঁর লকার অন্য কাউকে ভাড়া দিতে পারবেন না।
• সোনা, গয়না, দলিল-দস্তাবেজ ইত্যাদি মূল্যবান দ্রব্য লকারে রাখা যেতে পারে। নিষিদ্ধ বস্তু নয়।
• চাবি হারিয়ে গেলে তৎক্ষণাৎ জানান ব্যাঙ্ককে। লকার খোলা এবং নতুন চাবি তৈরির খরচ কিন্তু গ্রাহকেরই।
• যুগ্ম অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে এক জনের মৃত্যু হলে অন্য জন লকার ব্যবহার করার অধিকারী থাকবেন।
• একক অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে গ্রাহকের মৃত্যু হলে তাঁর উত্তরাধিকারীদের উপর এই অধিকার বর্তাবে।
• এই ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের নিয়ম মেনে তথ্যপ্রমাণ দাখিল করতে হবে।
• লকার নিয়ে ব্যাঙ্কের কাছে কোনও দায় থাকলে, সেখানকার বস্তুর উপর ব্যাঙ্কের বন্ধকী অধিকার জন্মায়।
• লকারের ভাড়া বাড়ানোর অধিকার ব্যাঙ্কের থাকবে।
• ভাড়া নেওয়ার শর্ত কোনও গ্রাহক না মানলে ব্যাঙ্ক চুক্তি খারিজ করে লকার প্রত্যাহার করতে পারবে।
• সময়ে সময়ে ব্যাঙ্ক শর্ত পরিবর্তন করতেও পারবে।
|
বিপদ এড়াতে সতর্ক থাকুন |
• বাড়ির যত কাছাকাছি লকার খোলা যায়, ততই ভাল। দূরে হলে মূল্যবান জিনিস নিয়ে যাতায়াতে চিন্তা বাড়ে।
• লকার যুগ্ম নামে খোলাই ভাল।
• চাবি রাখতে হবে অত্যন্ত সুরক্ষিত জায়গায়। হারিয়ে গেলে ঝক্কি অনেক। খরচও কম নয়।
• কোনও পাসওয়ার্ড থাকলে আগলে রাখতে হবে সেটিকেও।
• ঠিকানার পরিবর্তন হয়ে থাকলে তা দ্রুত জানাতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ককে।
• চাবি বাইরের কাউকে দেবেন না।
• সময়ের আগেই ভাড়া মিটিয়ে দিলে ভাল হয়। ভাড়ার টাকা আগেই জমা রাখা যেতে পারে লকারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।
• সবসময় কাজে লাগে এমন জিনিস লকারে না রাখাই ভাল।
• যে সব জিনিস রেখেছেন, তার তালিকা বাড়িতে রাখুন। কোনও জিনিস লকারে আছে কি না জানতে পরে তালিকাটি কাজে লাগবে।
• লকার বিভিন্ন মাপের হয়। কী ধরনের এবং কী পরিমাণ জিনিস রাখা হবে তা মাথায় রেখে নির্দিষ্ট মাপের লকার পাওয়ার চেষ্টা করুন।
• অনেকে লকারে অতিরিক্ত একটি তালা লাগান। এতে মানসিক শান্তি বাড়ে। তবে চাবি হারালে বিপত্তি।
• অতিরিক্ত তালা লাগানোর আর একটি কারণ হল, পাশের লকারের গ্রাহক যাতে ভুল করে আপনার লকারে তালা লাগাতে না পারেন।
• লকারে রাখা মূল্যবান জিনিসের বণ্টন-ব্যবস্থা আগে থেকেই লিখিত ভাবে করে রাখুন, ভবিষ্যতে অনেক পারিবারিক অশান্তি এড়ানো যাবে।
• যদি কোনও দলিল বা অন্য কোনও নথি লকারে রাখা হয়, তবে তার একটি ফটোকপি বাড়িতে রাখুন।
|
লেখক ম্যাকলিওড রাসেল ইন্ডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কোম্পানি সেক্রেটারি
(মতামত ব্যক্তিগত) |
|