মিউচুয়াল ফান্ড
ভারতে মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নির দুনিয়ায় কিছুটা নিঃশব্দেই বেশ বড়সড় এক বিপ্লব ঘটে গেল। ফান্ড কেনার পদ্ধতিতে চালু হয়ে গেল ‘ডিরেক্ট প্ল্যান’ বা সংস্থার থেকে সরাসরি ফান্ড কেনার সুবিধা। অর্থাৎ সাধারণ লগ্নিকারীরা এখন থেকে ফান্ড কেনার সময় কোনও ডিস্ট্রিবিউটর বা এজেন্ট (মধ্যস্থতাকারী)-এর সাহায্য না-ও নিতে পারেন।

ভোলবদল
ধরুন আপনি মিউচুয়াল ফান্ড প্রকল্প কিনতে আগ্রহী। ইচ্ছে হলে এখনও পাড়ার কোনও ফান্ড ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে যেতেই পারেন। তবে তাতে আর বিশেষ সুবিধা কিছু হবে না। বরং সরাসরি ফান্ড কেনার এই নতুন জমানায় অনেক বেশি বুদ্ধিমানের কাজ হবে, যদি আপনি কাছাকাছি কোনও সম্পদ পরিচালনাকারী সংস্থার (অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি) অফিস খুঁজে বার করতে পারেন। এবং সেখানে হাজির হন। আর একান্তই যদি সময় না-পান, তা হলে প্রযুক্তির সৌজন্যে এই জেট-যুগে লেনদেনের অন্য পথও খোলা আছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমেই সেরে ফেলুন কাজটা।

পরিবর্তন কেন?
অবশ্যই আপনার পকেট বাঁচানোর জন্য। আপনাকে ফান্ড কিনতে সাহায্য করার বদলে কমিশন পান ডিস্ট্রিবিউটররা। সেই টাকাটা ফান্ড চালানোর খরচের মধ্যে ধরা হয়। এর অর্থ, আপনার ফান্ডের ন্যাভে তার প্রভাব পড়ে। কাজেই মধ্যস্থতাকারীদের এড়ানোর জন্য সংস্থার কাছ থেকে সরাসরি ফান্ড কিনলে, তার পিছনে খরচ আপনা থেকেই কমে যাবে। আরও সহজ ভাবে বললে ফান্ডের টাকা সাশ্রয় হবে। এবং এই অংশটা লগ্নিকারী হিসেবে আপনার কাছেই আসবে। অর্থাৎ ন্যাভ ভাল হবে। রিটার্ন বাড়বে।
আপাতদৃষ্টিতে এই পরিবর্তনকে নিরীহ বলে মনে হচ্ছে। তবে একটু গভীরে গেলেই বোঝা যাবে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সেবির সাম্প্রতিক এই পদক্ষেপ কতটা শক্তপোক্ত এক ইমারতের ভিত তৈরি করে দিল। এতে যে লগ্নিকারীর ভাল হবে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এমনকী এখানে দাঁড়িয়ে আমি যদি বলি যে, আগামী দিনে ফান্ড কেনার চিরাচরিত পথটা আমূল বদলে যাবে, তা হলেও বাড়িয়ে বলা হবে না।

সাশ্রয় কতটা?
ডিরেক্ট প্ল্যানে ঠিক কত টাকা সাশ্রয় হতে পারে, সেটা এখনই নিশ্চিত ভাবে বলা মুশকিল। তার জন্য আরও কিছু দিন ধৈর্য ধরতে হবে। আমি এ সংক্রান্ত দু’টি প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব পাওয়ার অপেক্ষায় আছি।
১) ফান্ডের খরচ কতটা কমবে?
২) রিটার্ন কতটা বাড়বে?
এই দু’টি প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলেই লগ্নিকারীর লাভের আসল ছবিটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। বিশেষত, দীর্ঘ মেয়াদে ডিরেক্ট প্ল্যান মারফত লগ্নি করতে গেলে এই জবাব দু’টি পাওয়া খুব জরুরি। আমার ধারণা, আগামী দিনে লগ্নিকারীদের একটা বড় অংশ সরাসরি প্রকল্প কেনার পথে হাঁটতে শুরু করবেন।

বদলাবে মানসিকতাও
বাস্তব মানুষকে পরিণত করে। এই সত্যের আরও একটা প্রমাণ মিলতে পারে মিউচুয়াল ফান্ড কেনার প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতাকারীদের প্রয়োজন কমে যাওয়ার পর। দীর্ঘ মেয়াদি ফান্ড বিক্রিতে এই বিষয়টির প্রভাব পড়বেই। সে ক্ষেত্রে আমার মনে হয়, এই সব ডিস্ট্রিবিউটরদের একটা প্রভাবশালী অংশ এ বার গ্রাহকদের জন্য ব্যবসার আরও যুক্তিপূর্ণ ও ভাল মডেল
তৈরির কাজে মন দেবেন। অনেকেই ফি নিয়ে পরামর্শ দেওয়ার কাজ শুরু করতে পারেন। সাধারণ মানুষের জন্য আর্থিক পরিকল্পনা তৈরি করে দেওয়ার ব্যবসা নতুন করে গতি পাবে এর ফলে।
সবটাই অবশ্য নির্ভর করবে পরামর্শ পাওয়ার জন্য লগ্নিকারীরা যথেষ্ট খরচ করতে রাজি কি না, তার উপর। কারণ বহু বছর ধরেই এ দেশের বেশির ভাগ লগ্নিকারী বিভিন্ন মধ্যস্থতাকারীকে কমিশন বা ব্রোকারেজ দিয়ে আর্থিক পণ্য কিনতে অভ্যস্ত। এমনকী, কেমন ফান্ড কেনা উচিত বা কতটা টাকা কোথায় খাটানো জরুরি এই সব পরামর্শ পেতে টাকা খরচ করার তেমন চলও নেই এখানে।
তবে আশা করা যায়, আগামী দিনে মধ্যস্থতাকারী এবং সাধারণ গ্রাহক, সকলেরই মানসিকতা বদলাবে। আমার বিশ্বাস, অন্তত কিছু মধ্যস্থতাকারী খুব দ্রুত নিজেদের ব্যবসাকে উন্নত করার বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করে দেবেন। বাজারে টিকে থাকতে সঠিক ফান্ড কেনা, সেটির পারফর্ম্যান্স নজরে রাখা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী টাকা খাটানোর নানান খাতে সামঞ্জস্য আনার মতো বিষয়ে গ্রাহকদের সৎ পরামর্শ দেওয়ার কাজটা গুরুত্ব দিয়ে করবেন।

উদাহরণ
এ বার এই বিষয়টির উদাহরণ দিতে একটা খুব জনপ্রিয় ফান্ডের কথা তুলে ধরছি। তবে এ ফান্ডের প্রতি আমার কিন্তু বিশেষ পক্ষপাতিত্ব নেই। এটা স্রেফ উদাহরণ। কোনও রকম সুপারিশ বা পরামর্শ একেবারেই নয়।
ফান্ডের নাম: এইচডিএফসি ইক্যুইটি ফান্ড। সাধারণ প্রকল্পের সঙ্গেই রয়েছে এইচডিএফসি ইক্যুইটি ফান্ড ডিরেক্ট প্ল্যান।
বাছার সুযোগ: দু’টি প্রকল্পই বাজারে চালু। লগ্নিকারীকে জানাতে হবে কোনটি তিনি বেছে নিতে চান?
পার্থক্য:
১) সাধারণ প্রকল্পটির তুলনায় ডিরেক্ট প্ল্যানে খরচ কম হবে। কারণ ডিস্ট্রিবিউটরদের কমিশন নেই।
২) সাধারণ প্রকল্প ও ডিরেক্ট প্ল্যানের ন্যাভ-ও আলাদা হবে।
তহবিল বণ্টন: দু’টি প্রকল্পের তহবিল বণ্টনে কোনও পার্থক্য নেই। লগ্নির উদ্দেশ্য ও ঝুঁকির শর্ত এক। তফাত নেই ‘লোডের’ কাঠামোতেও।
বদলাতে চাইলে: যদি প্রথমে ফান্ডের সাধারণ প্রকল্পটি কেনার কিছু দিন পর সেটির ডিরেক্ট প্ল্যান-এ যেতে চান, সেই সুযোগও রয়েছে। সংস্থার কাছে নির্দিষ্ট আবেদন জমা দিতে হবে।
পরামর্শ জরুরি: তবে কর সংক্রান্ত জটিলতা এড়াতে আপনার চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের সঙ্গে কথা বলেই কিন্তু সব সিদ্ধান্ত নেবেন।

মাথায় রাখুন
এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডগুলিতে ডিরেক্ট প্ল্যানের সুবিধে নেই।

আবেদনপত্র ভরার সময় দেখে নিন ফান্ডের নামের সঙ্গে প্রকল্পের ধরন হিসেবে ‘ডিরেক্ট প্ল্যান’ বেছেছেন কি না।

একই ফান্ডের সাধারণ প্রকল্প থেকে পরে ডিরেক্ট প্ল্যানে যেতে চাইলে পরিবর্তন কিন্তু আপনাআপনি হবে না।
লেখক উইশলিস্ট ক্যাপিটাল অ্যাডভাইজর্সের ডিরেক্টর
(মতামত ব্যক্তিগত)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.