জলাভূমি বাঁচাতে বাধা অসাধু চক্র, অসচেতনতা
র্বত্রই জলস্তর কমছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বাড়ছে বিপদ। সে কথা বুঝেই রাজ্যের নতুন সরকার ‘জল ধরো, জল ভরো’ নীতিতে জোর দিয়েছে। কিন্তু গোড়াতেই থেকে গিয়েছে গলদ। জল সংরক্ষণ নিয়ে সচেতনতা বাড়েনি। বিধিনিষেধ উড়িয়ে দিব্যি চলছে পুকুর ভরাট করে ঘরবাড়ি তৈরির কাজ। উঠছে বহুতল। আইন বলছে, পুকুরের জায়গায় বাড়ি তৈরির অনুমতি মেলে না। যদি দিনের পর দিন আবর্জনা জমে পুকুর মজে যায়, তাহলেও অনুমতি মেলে না। অনুমতি পেতে হলে অন্যত্র সমপরিমাণ জলাভূমির ব্যবস্থা করতে হয়। কিন্তু, কোথায় কী! ভূমি দফতর এবং পুরসভার একাংশ আধিকারিকের যোগসাজশে নিয়ম না মেনেই জলাভূমি বুজিয়ে চলছে ঘরবাড়ি তৈরি।
জেলার সদর শহর মেদিনীপুর ও রেলশহর খড়্গপুর, দুই জায়গাতেই এই এক ছবি। জলাভূমি ভরাটের অভিযোগ যে ওঠে, তা মানছে ভূমি দফতরও। পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) অরিন্দম দত্ত বলেন, “এমন অভিযোগ এলে শুরুতেই বিএলআরওকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। সঙ্গে কাজ বন্ধেরও নির্দেশ দেওয়া হয়।” বৃহস্পতিবারই এমন এক অভিযোগের শুনানি হয়েছে জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে। পুকুর বোজানোর অভিযোগ এসেছিল ঝাড়গ্রাম থেকে। ভূমি দফতরের এক আধিকারিকের নালিশ, “শহর থেকে মাঝেমধ্যেই এমন অভিযোগ আসে। তদন্ত করা হয়। তবে তদন্তে পুরসভার সহযোগিতা মেলে না।”
আক্রান্ত। দুই শহরের প্রাণ এই কংসাবতী। পুজোর সময় এখানেই অবাধে চলে বিসর্জন। —ফাইল চিত্র।
অভিযোগ, প্রতিটি পুর-এলাকায় একাধিক চক্র সক্রিয়। এই চক্রই জমির চরিত্র পরিবর্তনে সাহায্য করে। এতে জড়িত একাংশ প্রোমোটারও। কী বলছেন পুর-কর্তৃপক্ষ? মেদিনীপুরের উপ-পুরপ্রধান এরশাদ আলি বলেন, “জলাভূমিতে বাড়ি তৈরির অনুমতি দেওয়াই হয় না।
এমন অভিযোগ পেলে দ্রুত পদক্ষেপ করা হয়। কাজ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।” খড়্গপুরের ভারপ্রাপ্ত পুরপ্রধান তুষার চৌধুরীর বক্তব্য, “ক’দিন আগে কৌশল্যা থেকে এমন একটি অভিযোগ পেয়েছিলাম। তদন্তও করি। তবে, কাগজপত্র থেকে দেখা যায়, জায়গাটি বাস্তু জমি বলেই উল্লেখ রয়েছে। নীচু জমি বলে জল জমে জায়গাটি পুকুরের মতো হয়।” তাঁর কথায়, “তদন্তে যদি দেখা যায়, সত্যিই জলাভূমি ভরাট হচ্ছে, তখন অনুমতি দেওয়া হয় না।”
দুই শহরে বাড়ি তৈরি করতে হলে এখন মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এমকেডিএ) অনুমতি নিতে হয়। পর্ষদ কর্তৃপক্ষও মানছেন, জলাভূমি ভরাটের অভিযোগ যে ওঠে না, তা নয়। পর্ষদের চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতি বলেন, “মেদিনীপুর শহরের নান্নুরচক, বেড় বল্লভপুর থেকে এমন অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত শেষেই বোঝা যাবে, অভিযোগ সত্যি কি না।” যদি সত্যি হয়? চেয়ারম্যানের জবাব, “সে ক্ষেত্রে বাড়ি তৈরির অনুমতি দেওয়া হবে না।”
জলাভূমি বাঁচাতে
মেদিনীপুর-খড়্গপুর ঘুরে আনন্দবাজারের প্রতিবেদন। বিস্তারিত...
আগে কি শহরে জলাভূমি বুজিয়ে বাড়ি হয়নি? পর্ষদের এক আধিকারিকের মন্তব্য, “হয়নি বললে ভুল হবে। এক সময়ের জলাভূমিতে ঘরবাড়ি তৈরি হয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে কেউ অভিযোগ জানাননি। অভিযোগ না এলে তো কারও কিছু করণীয় নেই। সে পুরসভা বলুন, ভূমি দফতর বলুন কিংবা উন্নয়ন পর্ষদ।” শহরবাসীর বক্তব্য, অভিযোগ আসেন না কারণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের একাংশ এমন অভিযোগ উঠছে দেখলে তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এই সব নেতারা ওই সব চক্রের সঙ্গে জড়িত। এঁদের ভয়ে স্থানীয় বাসিন্দারাও আপত্তি জানানোর সাহস দেখান না। দেখালে যদি কোনও গোলমালে জড়িতে পড়তে হয়, এই ভেবে। দুই শহরের জল-দূষণও চলছে পাল্লা দিয়ে। পুকুরের জলে কাপড় কাচা, বাসন মাজা থেকে কচুরিপানা, আগাছায় ছেয়ে যাওয়া, এই দৃশ্য চোখে পড়ে অনবরত। পুজোর মরসুমে দূষণ বাড়ে। নিষেধকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দুই শহরেই প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় পুকুরে বা অন্য জলাশয়ে। পুর-কর্তৃপক্ষ এ ক্ষেত্রে সব জেনেশুনে হাত গুটিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ। আর এখানে কাজ করে পুজো কমিটির পিছয়ে রাজনৈতিক নেতার মদত। সব মিলিয়ে সচেতনতার অভাব আর অসাধু চক্রের দাপটই জলাভূমি বাঁচানোর পথে বড় অন্তরায়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.