দক্ষিণ দিনাজপুরে প্রাচীন আমলের ঐতিহ্যবাহী দিঘি গুলি সংস্কারের অভাবে মজে যেতে বসেছে। তপন ব্লকে তপনদিঘি, গঙ্গারামপুরে কালদিঘি ও ধলদিঘি, বংশীহারীতে মালিয়ানদিঘি, আলতা দিঘি, জোড় দিঘি, ধুমসাদিঘির, হরিরামপুরে বামনাদিঘির মতো অন্তত ১০টি দিঘি সরকারি অবহেলায় বেহাল হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ। অথচ দিঘি ঘিরে পর্যটন ক্ষেত্র এবং মাছ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনার কথা চিন্তা করে বেশ কয়েক বছর আগে জেলা প্রশাসন থেকে রাজ্যের পর্যটন দফতরে প্রস্তাব পাঠানো হলেও কাজের কাজ হয়নি।
পাশাপাশি, দিঘির শহর বলে পরিচিত কোচবিহারেই জলাশয় বিপন্ন। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তারাও সরব হয়েছেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, কোচবিহার শহরে রাজ আমলে প্রচুর দিঘি ও জলাশয় খনন করা হয়। সাগরদিঘি, লালদিঘি, ধোবাদিঘি, মুস্তাফিদিঘি, শিববাড়ি দিঘি, কাইয়া দিঘি, নরসিংহ দিঘি, মরাপোড়া দিঘি, লম্বা দিঘি, মালি দিঘি কালিকাদাস দিঘি, বৈরাগি দিঘি ও মহাজনের পুকুরের মত জলাশয় অন্যতম রক্ষনাবেক্ষণ হচ্ছে না। |
অভিযোগ, প্রশাসনের উদাসীনতায় ওই সব দিঘি দূষণে জেরবার। কয়েকটি জায়গায় জলাভূমি ভরাট করে নির্মাণের বিস্তর অভিযোগও রয়েছে। কোচবিহার হেরিটেজ সোসাইটির সম্পাদক অরুপজ্যোতি মজুমদার বলেন, “দিঘির শহর বলে একসময় কোচবিহারের খ্যাতি ছিল। সেখানে রাজ আমলের দিঘিগুলির মধ্যে মরাপোড়া দিঘির অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন হয়েছে। অর্ধেক ভরাট করা হয়েছে মুস্তাফি দিঘি। রাজবাড়ি স্টেডিয়াম ও বাসস্ট্যান্ড এলাকাতেও জলাভূমি ভরাট করে নির্মাণ হয়েছে। প্রশাসন পুরসভা কোন মহল থেকেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।” জলাশয়গুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন কোচবিহার নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সম্পাদক রাজু রায়। তিনি বলেন, “জবর দখল হয়ে যাওয়া জলা ফের পুরনো অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছি। দিঘিগুলির দূষণ রোধেও কড়া ব্যবস্থা দরকার।” |
বর্তমান সিপিএম নিয়ন্ত্রিত দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের অধীনে থাকা দিঘি সংস্কার করে পর্যটন ক্ষেত্র গড়ার প্রস্তাব পাঠানো হলেও সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ। তপন পঞ্চায়েতের সহ সভাপতি আনিসুর রহমান অভিযোগ করেন, “তপন দিঘিটি সংস্কার করে এখানে পর্যটন কেন্দ্র, পক্ষীনিবাস ও মাছ চাষের প্রস্তাব জেলা পরিষদ এবং জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে সাড়া মেলেনি। সংস্কারের অভাবে ইতিহাস বিজরিত এই বিশাল দিঘিটি বেহাল হয়ে পড়েছে।” দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি মাগদালিনা মুর্মু অবশ্যই অর্থাভাবের কারণে কাজ হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “টাকার অভাব রয়েছে। তবে ১০০ দিনের প্রকল্পে দিঘি সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।” |
যদিও দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামী জানান, দিঘি এবং বানগড় সহ জেলার ঐতিহাসিক স্থান ঘিরে নতুন করে প্রায় ৮৫ কোটি টাকার খসড়া প্রকল্প সম্প্রতি রাজ্যের পর্যটন দফতরে পাঠানো হয়েছে। তাঁর দাবি, “১০০ দিনের প্রকল্পে কুশমন্ডির মহিপাল দিঘি সংস্কারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। হিলি ব্লকে প্রায় মজে যাওয়া শ্রীনদী ও ভালুকা বিল খনন এবং কুমারগঞ্জের জামিরবাড়িতে নতুন করে ৪টি জলাশয় এবং তপনের কাশিয়া খাড়ি খননের কাজ চলছে।” একইভাবে কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী জানান, গ্রামাঞ্চলে ‘জল ধর জল ভর’ প্রকল্পের কাজ চলছে। ১০০ দিনের প্রকল্পে জলা খনন ও সংস্কারে জোর দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। জেলা প্রশাসনের দাবি এক বছরে জেলায় নতুন পুকুর খনন ও পুরানো পুকুর সংস্কার মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার।
এ দিকে, মালদহ জেলায় সরকারিভাবে জলাভূমি রয়েছে ২১৪ টি। প্রায় ৮২০০ একরের জলাভূমি। মালদহের ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক সঞ্জীব চাকী বলেন, “৫ একরের বেশি যে সমস্ত জলাভূমি রয়েছে, সেগুলি জেলা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিকের অধীনে রয়েছে। ৫ একরের কম জলাভূমিগুলি পঞ্চায়েত সমিতির অধীনে রয়েছে। প্রায় ৯৬ টি জলাভূমি। প্রশাসনের দাবি, সব জলাভূমি সংরক্ষণের জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। |