|
|
|
|
রাজ্যের মনোনয়ন নিয়ে ক্ষোভ |
জ্যোতিষী খুঁজতে হিমশিম খাচ্ছে আইন বিশ্ববিদ্যালয় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পশ্চিমবঙ্গে আইন পঠনপাঠনের অগ্রণী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ জুরিডিক্যাল সায়েন্সেস-এর এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিলে রাজ্য সরকার মনোনীত প্রতিনিধি এক জ্যোতিষীর হদিশ পেতে কর্তৃপক্ষ হিমশিম। তাঁর পুরো ঠিকানা চেয়ে রাজ্য সরকারের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
মাসখানেক আগেই রাজ্যের আইন দফতরের পক্ষ থেকে ওই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে মনোনীত তিন প্রতিনিধির নাম পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই তালিকাতেই রয়েছে নিমাই বন্দ্যোপাধ্যায় নামে ওই জ্যোতিষীর নাম। তাঁর পরিচিতি হিসেবে সরকারের তরফে লেখা হয়েছে, তিনি সমাজবিজ্ঞানের গবেষেক, জ্যোতিষে পিএইচডি। কিন্তু সরকারি নথিতে নিমাইবাবুর পুরো ঠিকানা না-থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর কাছে নিয়োগপত্র পাঠাতে পারেননি। পাশাপাশি, এক জন জ্যোতিষীকে কেন আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন পরিষদে পাঠানো হচ্ছে, সেই প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষা জগতে। প্রবীণ বিচারপতি থেকে বিশিষ্ট শিক্ষকদের অনেকেই সরকারের এই সিদ্ধান্তে বিস্মিত এবং ক্ষুব্ধ। এর আগে এই আইন বিশ্ববিদ্যালয়েরই অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যপদে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ শিল্পী শুভাপ্রসন্নের নাম প্রস্তাব করেছিল রাজ্য সরকার। তখনও প্রশ্ন উঠেছিল, আইন বিশ্ববিদ্যালয়ে এক জন চিত্রকরের কী ভূমিকা থাকতে পারে? শেষ পর্যন্ত শুভাপ্রসন্ন নিজেই ওই পদ নিতে অস্বীকার করেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর।
পরিচালন পরিষদে সরকারের প্রতিনিধিদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু করার নেই। রাজ্য সরকার যাঁদের নাম পাঠাবে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদেরই নিয়োগপত্র পাঠাবেন এটাই নিয়ম। নিমাইবাবুর মনোনয়ন প্রসঙ্গে এনইউজেএস-এর উপাচার্য পি ঈশ্বরভট্ট বলেন, “আইন দফতর তিন জনের নাম পাঠিয়েছে। এঁদের পরিচয় দিয়ে বলা হয়েছে, তাঁরা হলেন সমাজবিজ্ঞানের গবেষক এবং জ্যোতিষ শাস্ত্রের পিএইচডি নিমাই বন্দ্যোপাধ্যায়, বিচারপতি অমিত তালুকদার এবং বিজ্ঞানী অমিয় মজুমদার। এঁদের মধ্যে নিমাইবাবুর পুরো ঠিকানা সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে ছিল না। ফলে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। সরকারের কাছে চিঠি লিখে ওই ব্যক্তির পুরো ঠিকানা চাওয়া হয়েছে।” বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে অবশ্য খবর, রাজ্য সরকারের পাঠানো নথিতে বলা হয়েছে, ওই জ্যোতিষী ওড়িশার বাসিন্দা।
ঘটনাচক্রে ওড়িশার কটকের পিঠাপুরে নিমাই বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক জ্যোতিষী রয়েছেন, যাঁর কাছে এ রাজ্যের বহু রাজনীতিক যান গণনার জন্য। ওই নিমাইবাবু আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জ্যোতিষশাস্ত্রে পিএইচডি করেছেন বলে তাঁর ওয়েবসাইটের দাবি। এমনও দাবি করা হয়েছে যে, তিনি প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর উপরে হামলা, ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনা সম্পর্কে আগাম সাবধানবাণী দিয়েছিলেন এবং মমতা মুখ্যমন্ত্রী হবেন বলেও ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তবে আইন বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্যের প্রতিনিধি এই নিমাইবাবুই কি না, সে সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত নয়। নিমাইবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ ব্যাপারে কোনও চিঠি তিনি পাননি।
কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটক আইনমন্ত্রী থাকাকালীন নিমাইবাবুর মনোনয়ন হয়েছিল। রাজ্যের সিদ্ধান্তের যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন বা পাঠ্যক্রম তো পরিচালন পরিষদ ঠিক করে না। তার কাজ তা রূপায়ণ করা। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ের দিকপালরা থাকলে তো কাজ ভালই হবে।” তবে নিমাই বাবুকে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে চেনেনও না, এমনকী জ্যোতিষে বিশ্বাসও করেন না বলে জানিয়েছেন মলয়বাবু।
রাজ্যের বর্তমান আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য অবশ্য এই ব্যাপারে দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়ে বলেছেন, “ওই প্রতিনিধির মনোনয়ন আইন বিভাগ দেয় না। পশ্চিমবঙ্গ সরকার দেয়।” কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, আইন বিভাগ কি রাজ্য সরকারের অঙ্গ নয়।
রাজ্যের মনোনয়নের সমালোচনা করে প্রাক্তন বিচারপতি ভগবতীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এটি পুরোপুরি রাজনৈতিক নিয়োগ। অতীতে ভারতের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটেনি।” কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রাক্তন ডিন অমিত সেন বলেন, “আমি বিস্মিত! পরিচালন সমিতিতে সাধারণত আইনের লোকই থাকার কথা।” যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী বলেন, “এটা আমি একেবারেই সমর্থন করতে পারছি না।” বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ বলেন, “ভীষণ অবাক হচ্ছি! এ সব খুব ভুল হচ্ছে।” |
|
|
|
|
|