কেউ অসুস্থ হলে সহানুভূতি, অসুস্থতার ভান করলে অভিসম্পাতএই মত যাঁর, তিনি আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। ২২ দিন বাদে সোমবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেন বর্ষীয়ান সিপিএম বিধায়ক। যাঁর প্রতি তাঁর এই মন্তব্য, সেই আরাবুল ইসলাম অবশ্য এখনও আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গত ৬ জানুয়ারি ভাঙড়ের কাঁটাতলায় রেজ্জাকের উপরে হামলা চালানোয় অভিযুক্ত আরাবুল। গ্রেফতার হওয়ার পরে ভাঙড়ের ওই প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়কের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রসঙ্গে রেজ্জাক মোল্লার বক্তব্য, “কেউ যদি অসুস্থ হন, তাঁর প্রতি সহানুভূতি রয়েছে। কিন্তু কেউ অসুস্থতার ভান করলে তাঁর প্রতি আমার অভিসম্পাত থাকবে। ওঁকে গ্রেফতার করা হল নামেই। সারাক্ষণ হাসপাতালেই কাটিয়ে দিলেন।” |
মুকুন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে এ দিন রাজ্যের প্রাক্তন ভূমি ও ভূমি সংস্কারমন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা ফেরেন ৪২ কিলোমিটার দূরে, জীবনতলার বাঁকড়ি গ্রামের পৈতৃক বাড়িতে। তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর দুই সদস্য মহম্মদ সেলিম এবং সুজন চক্রবর্তী। কিন্তু সিপিএম কর্মী-সমর্থক এবং সংবাদমাধ্যমের ভিড়ে রেজ্জাককে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলতে কালঘাম ছুটে যায় নিরাপত্তাকর্মী এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের। দুপুর আড়াইটে নাগাদ অ্যাম্বুল্যান্সটি হাসপাতাল ছেড়ে বেরোয়। এর পরে সোনারপুরের তেমাথা, ভাঙড়ের সুন্দিয়া মোড় এবং চন্দনেশ্বর বাজারে থমকে যায় অ্যাম্বুল্যান্স।
সব জায়গাতেই উৎসাহী জনতা প্রবীণ নেতাকে এক বার দেখতে চায়। উড়ে আসে ফুল। সোনারপুরে অ্যাম্বুল্যান্সের দরজাই খুলে ফেলার চেষ্টা করেন অত্যুৎসাহীরা। চন্দনেশ্বর বাজারে প্রায় শ’পাঁচেক মহিলা তাঁর আরোগ্য চেয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। রেজ্জাক বলেন, “মানুষ যে এ ভাবে রাস্তায় চলে আসবেন, ভাবিনি।”‘হামলা’র পরে শিরদাঁড়ার নীচের দিকের দু’টি হাড়ে চিড় ধরেছিল রেজ্জাক মোল্লার। এ দিন ছাড়া পেলেও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁকে তিন সপ্তাহ বিশ্রাম নিতে বলা হয়েছে। ওঠাবসা করা প্রায় বারণ। ছ’সপ্তাহ বাদে হাসপাতালে এসে আবার দেখিয়ে যেতে হবে। রেজ্জাকের বাড়ির কাছের বাঁধা মঞ্চে উপস্থিত মানুষকে রেজ্জাকের অসুস্থতা নিয়ে সচেতন করেন সুজন চক্রবর্তী। স্ট্রেচারে শোওয়া রেজ্জাক বাড়ি ঢোকা মাত্র জড়িয়ে ধরে চুমু খান তাঁর ৯২ বছরের মা রাজিয়া বেওয়া। বলেন, “ছেলেকে যারা এমন ভাবে মেরেছে, তারা শাস্তি পাবেই।” |