আক্ষরিক অর্থেই মিষ্টি মুখে নোভাক জকোভিচ তাঁর অস্ট্রেলীয় ওপেন খেতাব জয়ের হ্যাটট্রিক-উৎসব পালন করলেন!
গ্যালারি নিতে ওস্তাদ এই সার্বিয়ান টেনিস সুপারস্টার মেলবোর্ন পার্কে ফাইনাল শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রবেশ করেন বেশ কয়েক বাক্স চকোলেট নিয়ে। “একটা নয়, প্লিজ, দুটো নিন,” দেশ-বিদেশের প্রত্যেক সাংবাদিকের সামনে চকোলেটের বাক্স হাতে নিয়ে বলতে থাকেন গত তিন বারের অস্ট্রেলীয় ওপেন চ্যাম্পিয়ন। সাংবাদিকেরা তাঁর অনুরোধ রাখতেই ‘জোকার’-এর চিরাচরিত রসিকতা। “আরে, এ তো দেখছি, কেউই সুগার-ফ্রি ডায়েটের ধার ধারে না!” |
পরক্ষণেই জোকার যেন সিরিয়াস। গত দু’বার মেলবোর্ন দেখেছে, অস্ট্রেলীয় ওপেন ফাইনালের রাতভর পার্টিতে চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফি হাতে জকোভিচের উল্লাস। তার পরের সকালে ইয়ারা নদীতে তাঁর ফটোশু্যটের হিড়িক। বিশ্বের এক নম্বর এ বার ঠিক উল্টো মেজাজে। রবিবার নৈশপার্টিতে একটু সময় কাটিয়েই বেরিয়ে যান। এমনকী সোমবার ইয়ারা নদীতে বছরের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়নের প্রথামাফিক ফটোশ্যুটে অবধি যাননি জকোভিচ। ভোরের বিমানেই ফিরে গেলেন ইউরোপ। ফলে, ফটোশু্যট-ই বাতিল। জানিয়ে গেলেন, “সপ্তাহের শেষেই ডেভিস কাপ আছে। তার পর আমার লক্ষ্য, ক্লে কোর্ট মরসুমে ধারাবাহিক ভাল পারফরম্যান্স করতে-করতে একেবারে ফরাসি ওপেন জিতে থামা।”
ফরাসি ওপেন-ই গ্র্যান্ড স্ল্যামের মধ্যে একমাত্র জিততে পারেননি এখনও জকোভিচ। ২০১১-এ বাকি তিনটে গ্র্যান্ড স্ল্যাম-সহ এটিপি ট্যুরে মোট দশটা খেতাব জিতেছিলেন। ২০১২-এ সেখানে একটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম, মোট ছ’টা এটিপি খেতাব। কিন্তু ভুললে চলবে না, ফরাসি ওপেন আর যুক্তরাষ্ট্র ওপেন ফাইনাল খেলেছেন। জন ম্যাকেনরো বলছেন, “জকোভিচ টেনিস খেলাটাকে অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। ফেডেরার, নাদালও সেটা করেছিল। |
জকোভিচ তার থেকেও উঁচুতে তুলে দিয়েছে। ফেডেরার-নাদাল গ্রহে জকোভিচ এখন আর অনুপ্রবেশকারী নয়। সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন।” রবিবারের পর পুরুষদের শেষ ৩৪টা গ্র্যান্ড স্ল্যামের মধ্যে ৩৩টাই জিতল মাত্র চারজন ফেডেরার (১৭), নাদাল (৯), জকোভিচ (৬) এবং মারে (১)। পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, যতই তাঁদের বিশ্ব টেনিসের চারমূর্তি বলা হোক, রজার-রাফা-জোকারের বৃত্তে এখনও সম্পূর্ণ ঠাঁই হয়নি মারের। জকোভিচের ফিটনেস লেভেল টেনিস বিশেষজ্ঞদের মতে অবিশ্বাস্য। গত বার অস্ট্রেলীয় ওপেন সেমিফাইনালে মারেকে পাঁচ সেটে হারানোর আটচল্লিশ ঘণ্টা পরেই ফাইনালে নাদালের বিরুদ্ধে জকোভিচ সেই পাঁচ ঘণ্টা ৫৩ মিনিটের ঐতিহাসিক ম্যারাথন লড়াই জেতেন। এ বারও প্রি-কোয়ার্টারে ওয়ারিঙ্কার বিরুদ্ধে মেলবোর্নের সময় রাত দু’টো অবধি পাঁচ সেট খেলে জেতার পরপরই শেষ আট আর শেষ চারে প্রতিদ্বন্দ্বীকে উড়িয়ে দেন স্ট্রেট সেটে। এত দম! অথচ জকোভিচের টেনিসে না আছে ফেডেরারের মতো রেশম-টাচ, না আছে নাদালের মতো সুপার পাওয়ার। “আমার আছে প্রতিটা পয়েন্টের জন্য মরণপণ সংগ্রাম। আমি কখনও হাল ছাড়ি না। সে জন্যই আমি বিজয়ী,” বলেছেন জকোভিচ। |