পোলিও টিকাকরণের পথে বাধা ভাঙা সেতু |
শিশুদের নীরোগ রাখতে দেওয়া চাই পোলিও টিকা। কিন্তু টিকা খাওয়াতে গিয়েই শিশুদের প্রাণ বিপন্ন হচ্ছে। এমনই সমস্যা দেখা দিয়েছে হাওড়ার পাঁচলার শাহপাড়ায়।
এলাকার বুক চিরে দীর্ঘ পথ চলে গিয়েছে রাজাপুর খাল। প্রায় পাঁচশো ফুট চওড়া এই খালের উপরে ছিল কাঠের সেতু। কিন্তু সংস্কারের অভাবে তার অস্তিত্ব প্রায় নেই। সেতু সংস্কারে গ্রামবাসীর দাবি বিফলে যাওয়ায় খাল পারাপার করতে তাঁরা নিজেদের মতো বন্দোবস্ত করে নিয়েছেন। খালের দু’পারে দড়ি বেঁধে ভেলায় রোজ পারাপার করেন বাসিন্দারা। খালে পড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে আকছার। কিন্তু বিকল্প না-থাকায় এই সমস্যা নিয়েই চলতে হচ্ছে এলাকার মানুষকে। আর তা থেকেই গ্রামবাসীর মধ্যে পোলিও টিকাকরণে অনীহা দেখা দিয়েছে। |
এ ভাবেই চলে রোজের পারাপার। ছবি: সুব্রত জানা। |
দীর্ঘদিনের কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে এসে পোলিও টিকাকরণের উপকারিতা নিয়ে তাঁরা সচেতন হলেও জীবন বিপন্ন করে গ্রামের প্রায় কোনও মহিলাই তাঁর বাচ্চাকে নিয়ে বিপজ্জনকভাবে খাল পেরিয়ে টিকাকরণ কেন্দ্রে আসতে চান না। ফলে সেতু তৈরিতে সরকারি গাফিলতিতে গ্রামের অনেক শিশুই পোলিও টিকাকরণের বাইরে থেকে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দা সাবির আলি শাহ, আলমগীর শাহ বললেন, ‘‘খাল পার হয়ে আমরা দ্রুত গাববড়িয়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে রোগীদের নিয়ে যেতে পারি। কিন্তু সেতুর অভাবে ভেলায় প্রসূতিদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। এমনকী ভেলায় প্রসব হওয়ার নজিরও রয়েছে।’’ গ্রামবাসীরা জানান, সরকার সেতু মেরামত না-করায় তাঁরাই চাঁদা তুলে ভেলায় পারাপারের ব্যবস্থা করেছেন।
এলাকায় সেতুটির গুরুত্ব অপরিসীম। সেতু পার হয়ে শাহপাড়ার একটি অংশের বাসিন্দারা সহজে মান্নাপাড়ার উপর দিয়ে যাতায়াত করতে পারতেন গাববেড়িয়ায়। সেখান থেকে রানিহাটি-আমতা রোড থেকে বাস বা ট্রেকার ধরে তাঁরা যাতায়াত করতে পারতেন কলকাতা এবং শহরতলিতে। মান্নাপাড়া এবং শাহপাড়ার অন্য অংশের বাসিন্দারা খাল পার হয়ে আসতে পারতেন দোকান, বাজার, স্কুলে। ২০১০ সালে শাহপাড়ায় তিন বছরের রুকসার খাতুনের দেহে মেলে পোলিও-র ভাইরাস। সে সময় গ্রামের বহু মানুষ শিশুদের পোলিও টিকাকরণ করাতেন না। রুকসারের ঘটনা সকলের চোখ খুলে দেয়। বর্তমানে ওই গ্রামে পোলিও টিকাকরণ কর্মসূচি প্রায় সফল। গ্রামবাসীর অভিযোগ, সেতুর কারণে শাহাপাড়ার একটি অংশের বেশ কিছু পরিবার চাইলেও টিকাকরণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে পারেন না। কারণ ভেলায় চাপিয়ে বিপজ্জনকভাবে শিশুদের টিকারকণ কেন্দ্রে আনার ঝুঁকি নিতে চান না তাঁরা। গত ২০ জানুয়ারি পালস পোলিও টিকাকরণ শিবিরে খাল পার করে টিকাকরণ করানো হয়েছিল মাত্র একজন শিশুকে। এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী অসিত পাত্র বলেন, “শিবিরের পরে দু’দিন ধরে স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আমরা ওই এলাকায় বাড়ি বাড়ি শিশুদের টিকাকরণ করিয়েছি। সেতু থাকলে এই অসুবিধা হত না।”
পঞ্চায়েত প্রধান নার্গিস বেগম বলেন, “যে সব পরিবার ভেলায় চাপিয়ে তাঁদের বাড়ির শিশুদের টিকাকরণ শিবিরে আনতে চান না তাঁদের আমরা বোঝাতে গেলে তাঁরা বলেন ‘‘সেতু করে দাও তবে শিবিরে যাব। ওভাবে পারাপার করতে গিয়ে বিপদ ঘটলে কী সরকার দেখবে?” সেচ দফতরের উলুবেড়িয়া সাব ডিভিশনের এসডিও স্বপন দত্ত অবশ্য বলেন, “কাঠের সেতুটি আমরা এখনই তৈরি করে দিতে পারি। কিন্তু গ্রামবাসীরা চান পাকা সেতু। সে জন্যও সমীক্ষা হয়েছে। কিন্তু টাকা না থাকায় সেতুর কাজে হাত দেওয়া যাচ্ছে না।”
|