দীপের নীচে নয়, আলোর মধ্যেই অন্ধকার। ত্রিফলা কাণ্ডে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পুর উদ্যোগে ফের তার প্রমাণ মিলছে।
ট্রাইডেন্ট বা ত্রিফলা আলোর বরাত নিয়ে নিয়মবিরুদ্ধ কাজের অভিযোগে কলকাতা পুরসভার আলো বিভাগের বর্তমান ডিজি এবং এক এগ্জিকিউটিভ অফিসারকে তাঁদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে পুর সূত্রের খবর। সেই সঙ্গে সদ্য অবসর নেওয়া প্রাক্তন ডিজি (আলো) গৌতম পট্টনায়কের পেনশন আটকে দেওয়া হচ্ছে। এখানেই শেষ নয়। যে-সব ঠিকাদারকে ওই আলো লাগানোর বরাত দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের বিলের ২৫ শতাংশ কেটে নেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিচ্ছে পুর প্রশাসন। ত্রিফলা আলোয় যে অনিয়মের ঘোর অন্ধকার আছে, শাস্তি দেওয়ার এই পুর উদ্যোগ তারই পরোক্ষ প্রমাণ। পুর সচিবালয়ের এক অফিসার বলেন, “বৃহস্পতিবার মেয়র-পরিষদের বৈঠকে এই সব সিদ্ধান্ত অনুমোদন করানো হবে।”
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, মহানগরে ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ লাগানোর ক্ষেত্রে যে অনিয়ম হয়েছে, তা উল্লেখ করা হয়েছে পুরসভার অডিট রিপোর্টেই। এই বিষয়ে পুরসভার মুখ্য অডিটর বিপ্লব গুহরায়ের মতামত জানতে চেয়েছিলেন পুর কমিশনার খলিল আহমেদ। মুখ্য অডিটরও জানিয়ে দিয়েছেন, অডিট রিপোর্টের বক্তব্যের সঙ্গে তিনি একমত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রিফলা কেলেঙ্কারির কথা মানতে না-চাইলেও মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই অনিয়মের কথা মেনে নিয়েছেন। বিরোধী দল সিপিএম এবং কংগ্রেস ত্রিফলা-দুর্নীতির তদন্তে সিবিআই-কে ডাকার দাবিতে বারবার বিক্ষোভ দেখায় পুরসভায়। অবশেষে কিছু প্রাক্তন ও বর্তমান কর্তা এবং সর্বোপরি ঠিকাদারদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে চলেছে পুর-প্রশাসন।
পুর আলো বিভাগের ডিজি-র উপরে কোপ পড়ছে কেন?
পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, “ত্রিফলা আলো লাগানোর প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই আলো বিভাগের ওএসডি হিসেবে রয়েছেন মনোব্রত চৌধুরী। এখন অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে তিনি ছাড় পেতে পারেন না।” মুখ্য অডিটর বিপ্লববাবু লিখেছেন, কত বাতিস্তম্ভ লাগানো হয়েছে, তার সম্পূর্ণ তথ্য দেননি আলো বিভাগের ওই আধিকারিক। তা ছাড়া অডিট টিম বারবার চাওয়া সত্ত্বেও চার নম্বর জোনের কোনও ফাইল তাদের দেওয়া হয়নি। আলো বিভাগেরই এক অফিসারের কথায়, “ওই জোনেই সব চেয়ে বেশি গরমিল হয়েছে।” অডিট টিমকে নথি না-দেওয়ার অপরাধে ওই জোনের অফিসারের সঙ্গে সঙ্গে আলো বিভাগের ডিজি-ও সমান দায়ী বলে মনে করছেন পুর আধিকারিকেরা। পুর কমিশনারের নির্দেশে সোমবার অডিট রিপোর্ট ও চিফ মিউনিসিপাল অডিটরের রিপোর্ট নিয়ে বৈঠকে বসেন পুরকর্তারা। সেখানেই ত্রিফলা কাণ্ডে অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, তা নিয়ে আলোচনা হয়। শেষ পর্যন্ত কিছু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ওই বৈঠকে ঠিক হয়েছে। |