জল্পনা উড়িয়ে কংগ্রেসের প্রার্থী আব্দুর রহমান |
অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় • নলহাটি |
দেরিতে হলেও নলহাটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থী ঠিক করে ফেলল কংগ্রেস। গত কয়েকদিন ধরেই রাজনৈতিক মহলে জল্পনা চলছিল ওই কেন্দ্রের সম্ভাব্য প্রার্থী আগের বিধায়ক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের (বর্তমানে জঙ্গিপুরের সাংসদ) স্ত্রী চিত্রলেখা মুখোপাধ্যায়। কিন্তু সোমবারই সমস্ত জল্পনাকে উড়িয়ে ওই কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে স্থানীয় নেতা আব্দুর রহমানের (লিটন নামেই বেশি পরিচিত) নামই ঘোষণা করল প্রদেশ কংগ্রেস।
গত সাত বছর কংগ্রেসের মুরারই ১ ব্লকের সভাপতি আব্দুর রহমানের বাড়ি মুরারইয়ের ডুরিয়া গ্রামে। জেলা কংগ্রেসের সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি বলেন, “আব্দুরবাবু মুরারইয়ের বাসিন্দা হলেও তিনি আসলে নলহাটিরই ভূমিপুত্র। কারণ নলহাটিতেই তাঁর জন্ম।” এ দিন নাম ঘোষণার পর কংগ্রেসের নতুন প্রার্থীর প্রতিক্রিয়া, “নলহাটিতে কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি রয়েছে। এখানে তৃণমূলের তেমন কোনও সংগঠনই নেই। গত বার অভিজিৎবাবু কংগ্রেসীদের ভোটেই জিতেছিলেন। এখানকার মানুষ ফের কংগ্রেসের প্রার্থীকেই জিতিয়ে আনবেন।”
জেলা কংগ্রেসের একটি সূত্রের খবর, অনেকেই মনে করেছিলেন অভিজিৎবাবুর অবর্তমানে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পুত্রবধূ চিত্রলেখাদেবীকেই প্রার্থী করা হবে। জেলায় প্রাথমিক ভাবে কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের কাছেও সেই বার্তা পৌঁছেছিল। কিন্তু কেন্দ্র ও রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে দলের জোট ভেঙে যাওয়ায় সেই সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে যায়। তা ছাড়া কয়েকদিন আগেই জঙ্গিপুর থেকে মাত্র হাজার খানেক ভোটে অভিজিৎবাবু সাংসদ হিসাবে জিতেছেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাই নলহাটিতে ফের রাষ্ট্রপতির পরিবারের কাউকে প্রার্থী করার বিষয়ে সতর্ক হয়ে পড়েছিল কংগ্রেস। এ ছাড়াও স্থানীয় কাউকে প্রার্থী না করাই দলের নীচু স্তরে একটা ক্ষোভ তো ছিলই। একই সঙ্গে জেলা তৃণমূলও কংগ্রেসে ভাঙন ধরিয়ে সাধারণ সম্পাদক তথা প্রদেশ কমিটির সদস্য ত্রিদিব ভট্টাচার্যকে এবং নলহাটি ১ ব্লকের প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি আসাদুজ্জামানকে নিজেদের দলে টানতে সক্ষণ হয়েছে। দৃশ্যতই বেকায়দায় পরা কংগ্রেস নলহাটির উপ-নির্বাচনের প্রার্থী নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল।
দিশাহারা কংগ্রেস নেতৃত্ব তাই নলহাটি বিধানসভায় অক্সিজেন যোগাতে নতুন কোনও মুখের কথাই ভাবতে শুরু করে। জেলা কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “তৃণমূল প্রার্থী দিয়ে দেওয়ার পর নতুন এই রাজনৈতিক সমীকরণে যোগ্য প্রার্থী হিসাবে আব্দুরবাবুর নামই উঠে আসে। প্রদেশ নেতৃত্বের সমর্থনে এ দিনই তাতে শিলমোহর পড়ল।” রামপুরহাটে নির্মাণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আব্দুরবাবু ১৯৮৯-৯৩ পর্যন্ত চাতরা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন। তাঁর স্ত্রী শাহনওয়াজ বেগম মুরারই ১ পঞ্চায়েত সমিতির কংগ্রেস সদস্যা। আব্দুরবাবু সম্পর্কে মুরারইয়ের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক কামরে ইলাহির ভাগ্নে। গত বিধানসভা নির্বাচনে মুরারই বিধানসভার তৃণমূল প্রার্থী নুরে আলম চৌধুরীর হয়ে আব্দুরবাবু প্রচারেও নেমেছিলেন। মুরারইয়ের এই নেতা সে অর্থে নলহাটি বিধানসভা এলাকায় তেমন পরিচিত নাম না হলেও তাঁর দাবি, “জেলার মানুষ যে ভাবে আমাকে কংগ্রেসের একনিষ্ঠ কর্মী হিসাবে চেনেন, তেমনই নলহাটির মানুষও আমাকে ভাল ভাবেই চেনেন। তাঁরা আমাকে ঠিকই জিতেয়ে আনবেন।” |