থানা ঘেরাও, পথ অবরোধ বামেদের |
অভিযানের নামে পুলিশি তাণ্ডবের অভিযোগ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আসানসোল |
দুষ্কৃতীদের ধরতে তল্লাশির নামে দলীয় কর্মীদের বাড়িতে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছে পুলিশ, এই অভিযোগে সোমবার বিকেলে বেশ কয়েক ঘণ্টা আসানসোল দক্ষিণ থানা ঘেরাও করল বামফ্রন্ট। ঘণ্টাখানেক জি টি রোডও অবরোধ করা হয়। বামফ্রন্ট নেতাদের অভিযোগ, ডামরা এলাকায় এই তাণ্ডব চালিয়েছে পুলিশ। অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশের পাল্টা দাবি, এই অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
পুলিশ জানায়, গত ২৩ জানুয়ারি ওই এলাকার একটি ডেকরেটারের গুদাম ও একটি ধানের পালুইয়ে আগুন লাগে। ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তেরা থানায় অভিযোগে জানান, তাঁরা তৃণমূলের কর্মী। সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই এই ঘটনার পিছনে রয়েছে বলে অভিযোগ তাঁদের। এলাকার তৃণমূল নেতা তথা আসানসোল পুরসভার চেয়ারম্যান জিতেন্দ্র তিওয়ারির নেতৃত্বে দলীয় কর্মীরা থানায় বিক্ষোভও দেখান। অভিযুক্তদের ধরতে রবিবার রাতে পুলিশ ডামড়া সংলগ্ন মুচিপাড়া ও কোটালডি গ্রামে অভিযানে যায়। সোমনাথ বাউড়ি নামে এক জনকে গ্রেফতারও করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। |
আসানসোলের ডামরা এলাকার একটি বাড়িতে তছনছ জিনিসপত্র। |
এর পরে সোমবার সকাল হতেই এলাকায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। এলাকায় যান বামফ্রন্ট নেতারা। তাঁদের অভিযোগ, তল্লাশির নামে তাদের সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে পুলিশ। আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র তথা পুরসভার বিরোধী নেতা সিপিএমের তাপস রায়ের বক্তব্য, “পুলিশ কোনও কিছু না শুনেই আমাদের সমর্থকদের বাড়িতে ঢুকে জিনিসপত্র তছনছ করেছে। মহিলাদের সঙ্গে অভব্য আচরণও করেছে।”
মুচিপাড়ার বাসিন্দা গেদি রুইদাস জানান, স্বামী কাজের জন্য বাইরে ছিলেন। অষ্টম ও দশম শ্রেণির ছাত্রী দুই মেয়েকে নিয়ে ঘরে শুয়েছিলেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, “পুলিশ জোর করে দরজা খুলিয়ে ভিতরে ঢোকে। তারা অনন্ত রুইদাস নামে কাউকে খুঁজছিল। এই নামে কাউকে চিনি না শুনে ঘরের জিনিসপত্র তছনছ করে চলে গেল।” ওই পাড়ার আরও কয়েকটি বাড়িতে পুলিশ দরজা খুলিয়ে তল্লাশি চালায় বলে দাবি বাসিন্দাদের। ঘণ্টাখানেক পরে পুলিশ পাশের কোটালডি গ্রামে চলে যায়। সেখানকার বাসিন্দা বেলা রায় জানান, তাঁর স্বামী পবিত্র রায় বাড়িতে ছিলেন না। রাতে কড়া নেড়ে পুলিশ দরজা খোলায়। বেলাদেবী বলেন, “স্বামী বাড়িতে নেই শুনে আমাকে গালিগালাজ করে পুলিশ। স্বামী বাড়ি ফিরে থানায় না গেলে ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে, এই হুমকি দিয়ে ফিরে যায় পুলিশ।” |
সোমবার বিকেল ৩টে থেকে থানায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বাম কর্মীরা। স্টেশন মোড় লাগোয়া এলাকায় জি টি রোডও অবরোধ করা হয়। ফলে শহরে যানজট হয়। আচমকা এই অবরোধে বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ। পুলিশ উপযুক্ত ব্যবস্থার আশ্বাস দিলে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বিক্ষোভ থামে। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) সুরেশকুমার চাডিয়ার অবশ্য দাবি, অভিযুক্তদের খুঁজতেই অভিযানে গিয়েছিল পুলিশ। নিরীহ মানুষজনের বাড়িতে ঢুকে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ ঠিক নয়। তাঁর পাল্টা বক্তব্য, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে এ সব অভিযোগ তোলা হচ্ছে।”
|