সমর্থকরা চান বলেই চলছে বিষোদ্গার
গরিবরা এখনও ও-দিকে ঝুঁকে,
মত সিপিএমের
মতা সরকার সম্পর্কে রাজ্যবাসীর একাংশের মধ্যে মোহভঙ্গের একটা প্রক্রিয়া শুরু হলেও সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন, তাঁদের দলকে আবার বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করতে এখনও প্রস্তুত নয় মানুষ। সম্প্রতি কলকাতায় অনুষ্ঠিত পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির আলোচনাতেও সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব জানিয়েছেন, কলকাতা শহরে মধ্যবিত্ত, অভিজাত উচ্চবিত্ত নাগরিক এবং পেশাদারি সমাজের একটা বড় অংশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে হতাশ হলেও এই শহরের গরিবরা এখনও তাঁকে পরিত্যাগ করতে রাজি নন।
সিপিএমের এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, “মাত্র দেড় বছরের মধ্যে একটা সরকারকে সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলতে এখনও তৈরি নয় গ্রামীণ বাংলা এবং শহুরে গরিব মানুষ। তাঁরা এই সরকারকে আরও সময় দিতে চাইছেন। এই কারণেই আমাদের দায়িত্ব আরও অনেক বেড়ে গিয়েছে। এখনও অনেক পথ চলা বাকি।” বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিমান বসুর মতো নেতারা জেলাওয়াড়ি স্থানীয় নেতাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, সর্বশক্তি দিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। সিপিএমের হৃত রাজনৈতিক মর্যাদা পুনরুদ্ধারের সব রকম চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু এই নির্দেশ অনুসারে কাজ করতে গিয়েও প্রবল বাধার সন্মুখীন হচ্ছে দল। কারণ, যে পেশিশক্তি, দলতন্ত্র, দাদাগিরি চৌত্রিশ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার ফলে দলীয় অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল, এখন সেই পরিস্থিতিতে আকস্মিক বদল এসেছে। সেই পেশিশক্তির ধারক এবং বাহকেরা এখন তৃণমূল শিবিরে যোগ দিয়েছে। সিপিএমের অবস্থা এমন যে, বহু জায়গায় তাঁরা প্রার্থী দিতে পারছেন না। সম্প্রতি এই কারণে সিপিএম নেতৃত্ব কর্মীদের কাছে নির্দেশ দিয়েছেন, দলীয় প্রতীক দিতে না পারলেও আপনারা প্রতীক ছাড়াই নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে তৃণমূলকে পরাস্ত করার চেষ্টা করুন। এমনকী, এই কথাও বলা হয়েছে যে, যেখানে তা-ও সম্ভব হবে না, সেখানে দল প্রয়োজনে কংগ্রেসকে সমর্থন করার কথা বলবে।
তবে সিপিএম নেতারা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর যতটা হতাশ ছিলেন, এখন আর ততটা হতাশ নন। বরং তাঁরা অনেকটাই উজ্জীবিত। তাঁরা বলছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনটাই আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়। লোকসভা ভোট এবং তার পরে বিধানসভা ভোটে ঘুরে দাঁড়ানোটাই লক্ষ্য। এ ব্যাপারে সিপিএম নেতাদের সিদ্ধান্ত, তৃণমূলের বদলে আবার তাঁদের দলকে মানুষের কাছে কাঙ্ক্ষিত তুলতে গেলে সবচেয়ে আগে কর্মীদের মানসিকতায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। কিছু দিন আগেই রাজ্য স্তরে এবং পলিটব্যুরোয় দলীয় কর্মীদের জন্য শুদ্ধিকরণের নথি তৈরি করা হয়। সেই কমর্সূচি তিন বার প্রয়োগের চেষ্টাও হয়। কিন্তু খুব বেশি সাফল্য পাওয়া যায়নি। দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, মতাদর্শ লঙ্ঘনের দায়ে ক’টা পরিচিত মুখকে তাঁরা বহিষ্কার করতে পেরেছেন? যাঁরা বহিষ্কৃত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ক’জন কর্মী, ক’জন নেতা? রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু জেলায় জেলায় গিয়ে দলীয় কর্মীদের কাছে বলেছেন, চৌত্রিশ বছর ধরে যে মানসিকতা দলের ঘাড়ে চেপে বসেছে, তাকে আগে বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করুন। তার পর এক দিকে সাবেকি কমিউনিস্ট মূল্যবোধকে ফিরে পেতে হবে। অন্য দিকে, মান্ধাতা আমলের ধ্যানধারণা বর্জন করে আধুনিক ভারতের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নতুন সিপিএম মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে।
সিপিএম নেতারাও তাই তাড়াহুড়ো করতে চাইছেন না। দলের অভ্যন্তরীণ কলহ এখন অনেক কম। বিমান, নিরুপম সেন, সূর্যকান্ত মিশ্র, গৌতম দেব একজোট হয়ে কাজ করছেন। ইমামের ভাতা বাড়লেও সংখ্যালঘু মানুষের চাকরি না হলে যে তাঁরা বেঁকে বসবেন, এই বিশ্লেষণের ভিত্তিতে দলে আবার সক্রিয় হয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহম্মদ সেলিম, হান্নান মোল্লা, মইনুল হাসানরা।
সিপিএম নেতারা বুঝতে পারছেন, সংখ্যালঘু ও তফসিলি ভোট এবং নিম্নবর্গের গ্রামীণ ভোটই হচ্ছে মমতার জিয়নকাঠি। কিন্তু বুদ্ধ আর নিরুপমের মতো নেতারা মনে করছেন, উত্তরপ্রদেশ-বিহারে মুলায়ম-লালু যে সামাজিক পুনর্বিন্যাস (সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং) করে থাকেন, তা করে পশ্চিমবঙ্গে শেষরক্ষা না-ও হতে পারে। বুদ্ধ-বিমানের মতো নেতারা মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গে এখন প্রয়োজন শিল্পায়ন ও উন্নয়নের। বিমান বসু বলেন, “বড় শিল্প হলে ছোট শিল্পও হবে। তাতেই মানুষের চাকরি হবে। সেই চেষ্টাই আমরা শুরু করেছিলাম। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ধর্ম ও জাত বিষয় নয়। রাজ্যের উন্নয়ন হলে সামগ্রিক ভাবে রাজ্যবাসীর উন্নয়ন হবে।” এই প্রেক্ষাপটে সিপিএম আবার ব্যবহার করতে চায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সৎ, পরিচ্ছন্ন এবং সংস্কারমুখী ভাবমূর্তিকেই।

এই সংক্রান্ত খবর
সিপিএম-কে ঝাঁটা, জুতো, লাথির নিদান



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.