আরও পদের জায়গা রেখেই পরিষদীয় সচিব প্রথম ১৩ জন
প্রথম পর্যায়ে ১৩ জন। পরে আরও বেশি বিধায়ককে ঠাঁই দেওয়ার রাস্তা খোলা রেখেই পরিষদীয় সচিব নিয়োগ শুরু করল রাজ্য সরকার।
বিধানসভার নৌসর আলি কক্ষে বৃহস্পতিবার তৃণমূলের ১৩ জন বিধায়ককে পরিষদীয় সচিব হিসাবে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভায় পাশ হওয়া এই সংক্রান্ত বিল অনুযায়ী, রাজ্যের ৪৪ জন মন্ত্রী পিছু এক জন করে পরিষদীয় সচিব রাখা যেতে পারে। তা হলে কি এই সচিবের সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে? মুখ্যমন্ত্রীর নিজের কথায়, “এটা ২০১৩ সাল। তাই ১৩ জনকে করেছি! অসুবিধা কোথায়?” তাঁর আরও বক্তব্য, “সংস্থান তো আমাদের হাতে আছে। অন্য রাজ্যে এই ধরনের পরিষদীয় সচিব আছে। পঞ্জাবে আছে, অরুণাচল প্রদেশে ২০ জন আছে। আমরা তো এখনও অতটা করিনি।” প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধী প্রথম অস্কার ফার্নান্ডেজকে এই পদে নিয়োগ করে পথ দেখিয়েছিলেন বলেও দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
পরিষদীয় সচিব হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাপস রায়ের শপথ। পাশে
শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব ঠেকাতে আরও বেশি বিধায়ককে পদ পাইয়ে দেওয়াই পরিষদীয় সচিব নিয়োগের উদ্দেশ্য। তার জন্য সরকারি কোষাগারের খরচ বা সাংবিধানিক জটিলতার পরোয়া করছে না শাসক দল। এর আগে আরও বেশি সংখ্যক প্রত্যাশীদের ঠাঁই দেওয়ার জন্যই বিধান পরিষদ করার কথা ভেবেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেই উদ্যোগ থেকে অবশ্য পিছিয়ে আসেন তিনি। কিন্তু তৃণমূল যে ‘পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি’ থেকে সরছে না, মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের বক্তব্যের পরে তা আরও স্পষ্ট বলেই বিরোধীদের অভিমত। পরিষদীয় সচিব হিসাবে শপথের অব্যবহিত পরেই দু-এক জনকে লাল বাতির গাড়িতে বিধানসভা ছাড়তে দেখা গিয়েছে এ দিন! বস্তুত, যাঁরা পরিষদীয় সচিব হয়ে গেলেন, তাঁদের বদলে বিধানসভার স্থায়ী কমিটিগুলিতে তৃণমূলের অন্যান্য বিধায়ককে নিয়ে আসার প্রক্রিয়াও এ দিনই শুরু হয়েছে। যেমন, তাপস রায়ের জায়গায় স্বরাষ্ট্র সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হচ্ছেন কে পি সিংহ দেও। উচ্চ শিক্ষার কমিটির চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের জায়গায় আসছেন জীবন মুখোপাধ্যায়।
শপথ পাঠ করানোর পরে পরিষদীয় সচিবদের নিয়ে বিধানসভায় নিজের ঘরে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। মন্ত্রিসভার সদস্যেরা সরকারি কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় দলের কাজে সব সময় মনোনিবেশ করতে পারছেন না। পরিষদীয় সচিবদের সংগঠনে কাজ করে দলীয় কর্মী ও মানুষের মনোভাব সরকারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সদ্যনিযুক্ত এক পরিষদীয় সচিবের কথায়, “আমাদের সংগঠনের কাজ করতে হবে। তার সঙ্গে সঙ্গেই বিধানসভা ও মন্ত্রিসভার মধ্যে সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ মেনেই আমরা চলব।”
কে কোন দফতর বা মন্ত্রীর পরিষদীয় সচিব হবেন, তার একটি প্রাথমিক তালিকাও তৈরি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এই ব্যাপারে সরকারি বিজ্ঞপ্তি এখনও জারি না-হওয়ায় দায়িত্ব বণ্টনের কোনও ঘোষণা হয়নি। বিরোধী সিপিএম এবং কংগ্রেস অবশ্য মনে করে, পরিষদীয় সচিব নিয়োগের গোটা প্রক্রিয়াই সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। যা আদালতে যে কোনও সময় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
শপথ নিচ্ছেন শশী পাঁজা।
ইটাহারের অমল আচার্য, হরিরামপুরের বিপ্লববাবু, নাটাবাড়ির রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, ওন্দার অরূপ খাঁ, মানবাজারের সন্ধ্যারানি টুডু, শ্যামপুকুরের শশী পাঁজা, ধনেখালির অসীমা পাত্র, রামপুরহাটের আশিসবাবু, ডেবরার রাধাকান্ত মাইতি, বরাহনগরের তাপসবাবু, বজবজের অশোকবাবু, কালীগঞ্জের নাসিরুদ্দিন আহমেদ এবং বসিরহাটের (উত্তর) এ টি এম আবদুল্লা এ দিন পরিষদীয় সচিব হিসাবে শপথ নিয়েছেন। এর মধ্যে শশীদেবী দু’বার মন্ত্রিত্বের কাছাকাছি এসেও বাদ পড়েছিলেন! শেষ পর্যন্ত তিনি হলেন পরিষদীয় সচিব। যাঁরা প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর সমান বেতন ও মর্যাদা পাবেন। ১৩ জনের তালিকার ব্যাখ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “এঁদের মধ্যে সংখ্যালঘু আছেন, মহিলা আছেন। তিন জন মহিলার মধ্যে তফসিলি উপজাতি (সন্ধ্যারানি) এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (শশী) প্রতিনিধিও আছেন।” মিনিট কুড়ির অনুষ্ঠান এ দিন পরিচালনা করেন মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র। সব পূর্ণমন্ত্রীকে সেখানে দেখা যায়নি। ছিলেন না কংগ্রেস বা বামফ্রন্টের কেউ। মুখ্য সরকারি সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “বিরোধীদের না-আসা দুর্ভাগ্যজনক। আমরা সবাইকেই আমন্ত্রণ করেছিলাম।”
কংগ্রেস আগেই জানিয়েছিল, তারা অনুষ্ঠানে থাকবে না। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন জানান, আমন্ত্রণ জানিয়ে কোনও চিঠি বা
ফোন তাঁদের কাছে আসেনি। পাশাপাশিই সূর্যবাবুর মতে, “মুখ্যমন্ত্রীই সব কাজ করেন। মন্ত্রীদেরই কোনও কাজ নেই। তাঁদের উপরে ফের পরিষদীয় সচিবের বোঝা চাপল! আর এ সব কিছুর বোঝা শেষ পর্যন্ত চাপবে জনগণের কাঁধে!”

—নিজস্ব চিত্র



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.