এক কোটি বেকার, ৫০০ দক্ষ শ্রমিক পাচ্ছে না এনজেএমসি |
সুপ্রকাশ চক্রবর্তী • কলকাতা |
মুখ্যমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী রাজ্যে এখন বেকারের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি। অথচ এই বিপুল বেকারদের মধ্যে থেকে ৫০০ জন দক্ষ শ্রমিক পাচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকারের পরিচালনাধীন এক চটকল সংস্থা। ভারত সরকারের অধীন ন্যাশনাল জুট ম্যানুফ্যাকচারার্স কর্পোরেশনের (এনজেএমসি)-র এক কর্তা জানান, শ’পাঁচেক দক্ষ শ্রমিক না-মেলায় টিটাগড়ে এনজেএমসি-র কিনিসন ও খড়দহ জুট মিল দু’টিতে রাতের তৃতীয় শিফট চালু হচ্ছে না।
কয়েক বছর আগে রুগ্ণতার জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল চটকল দু’টি। বিআইএফআর-এর সুপারিশে বছর দেড়েক আগে ১৫০ কোটি টাকা খরচ করে দুটি চটকলেই পুনরুজ্জীবন প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু তৃতীয় শিফ্ট চালু করতে না-পারায় সেগুলি পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতায় পৌঁছতে পারছে না। চটকল সূত্রের খবর, শুধু এনজেএমসি-ই নয়, আপাতত রাজ্যে চালু ৫৯টি চটকলেই একই সমস্যা।
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের এক চটকল কর্তার কথায়, ১৫ হাজার কর্মীর মধ্যে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কর্মী কম নিয়ে তাঁদের কারখানা চালাতে হচ্ছে। পুরনো, অভিজ্ঞ শ্রমিকদের কাজে ফেরাতে তাঁরা বিহার, ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডে মিলের অফিসার ও সর্দারদের পাঠিয়েছেন। রাতের শিফ্ট-এ জরুরি কাজ তোলার জন্য শ্রমিক মহল্লা থেকে লোক তুলে আনতে হচ্ছে। কর্মীসঙ্কট এতটাই যে, বহু দিন কাজে না-আসা সত্ত্বেও শ্রমিকদের নাম তাঁরা মিলের খাতা থেকে বাদ দিচ্ছেন না। আশা, যদি কাজে ফেরেন! চটকলগুলিতে দক্ষ শ্রমিকের এই হাহাকারের কারণ কী?
এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্তাদের মতে, পুরনো দক্ষ শ্রমিকদের অনেকেই এখন কোনও একটি চটকলের স্থায়ী কর্মী হিসেবে বাঁধা থাকতে চাইছেন না। ঠিকাদারদের খাতায় নাম লিখিয়ে এক-একটি চটকলে চুক্তির ভিত্তিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ উৎপাদন করে বাড়তি মজুরি আদায় করাটাই তাঁদের পছন্দ। ওই কর্তাদের মতে, রাজ্যের চটকল শ্রমিকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ভিন্রাজ্যের বাসিন্দা। নতুন প্রজন্মের ছেলেরা আর চটকলে কাজ করতে চান না। কারণ মাঝে মাঝেই চটকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জীবিকার নিশ্চয়তা কমেছে। কাজও অত্যন্ত শ্রমসাধ্য। দেশে-গাঁয়ে বসেই আজকাল ১০০ দিনের কাজ বা অন্য কাজে বাড়তি রোজগার মিলছে।
সিটু অনুমোদিত বেঙ্গল চটকল মজদুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ গুহ চটকল শিল্পে শ্রমিক ঘাটতির এই কারণগুলির সঙ্গে একমত। তাঁর অভিযোগ, মালিকরা চুক্তিমতো বেতন না দেওয়াটাও একটা বড় কারণ। শেষ ত্রিপক্ষ চুক্তি অনুসারে, শ্রমিকদের ন্যূনতম দৈনিক মজুরি ১৫৭ টাকা হলেও অনেক মালিক তার সঙ্গে মহার্ঘ ভাতাটুকুও দিচ্ছেন না। পিএফ, ইএসআইও নেই। অন্য বহু কাজ করেই আজকাল দিনে ১৫৭ টাকার বেশি রোজগার করা যায়। তা হলে চটকলগুলি লোক পাবে কী?
শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু চটকলগুলিতে সাধারণ ভাবে দক্ষ শ্রমিকের অভাবের প্রসঙ্গ এড়িয়ে কর্মীসঙ্কটের জন্য এনজেএমসি-কেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, “এক জনও স্থায়ী কর্মী না-নিয়ে এনজেএমসি পুরোপুরি চুক্তির ভিত্তিতে শ্রমিক নিয়োগ করছে। শ্রমিকেরা তাই এনজেএমসি-তে কাজ করতে চান না। ঠিকাদারদের মাধ্যমে চুক্তিতে শ্রমিক নিয়োগ করে তারা দেশের শ্রম আইন ভঙ্গ করছে।” |