মুখ্যমন্ত্রীর কথা বিভ্রান্তিকর, ব্যাখ্যা চাইলেন অসীম |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
টাকার অভাব নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য অসম্পূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর বলে মন্তব্য করলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত। রাজ্যের বর্তমান অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের পেশ করা ২০১২-১৩ বাজেটের উল্লেখ করে অসীমবাবু বলেন, “রাজ্য সরকারের আর্থিক বক্তব্য রাখার ক্ষেত্রে স্ববিরোধিতা লক্ষ্য করছি। বাজেট ঘোষণা অনুযায়ী টাকার অভাব থাকার কথা নয়।” তা সত্ত্বেও কেন সরকারের হাতে টাকা নেই, সেই ব্যাখ্যাও দাবি করেন তিনি। এ ব্যাপারে অমিতবাবুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে জানানো হয়, তিনি ব্যস্ত আছেন।
বৃহস্পতিবার আলিমুদ্দিনের সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্য সরকারের সমালোচনা করলেও মমতা বা অমিত মিত্র, কারও নামই এক বারের জন্য উচ্চারণ করেননি অসীমবাবু। তিনি বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে এক জন বলছেন, ঋণ শোধ করার পরে রাজ্যের হাতে কোনও অর্থ থাকছে না। কিন্তু বাজেটে দেখা যাচ্ছে, সুদ-সহ কেন্দ্রীয় ঋণ, সরকারি কর্মচারিদের মাইনে, পরিকল্পনা খাতে খরচের পরেও সরকারের হাতে উদ্বৃত্ত অর্থ থাকছে।” অসীমবাবুর প্রশ্ন, তা হলে কি রাজস্ব আদায় কমে গিয়েছে? নাকি পরিকল্পনা বর্হিভুত খরচ বহু গুণ বেড়ে গিয়েছে?
প্রতিটি সভাতেই মমতা নিয়ম করে আর্থিক অনটনের প্রসঙ্গ তুলছেন। আগের বামফ্রন্ট সরকার ও বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার দু’পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগের তির শানাচ্ছেন তিনি। মমতার অভিযোগ, ৩৪ বছরের বাম আমলে রাজ্য ঋণের ফাঁদে জড়িয়েছে। কেন্দ্রের কাছে দরবার করেও অর্থ বরাদ্দ মেলেনি। ফলে রাজ্য সরকারের নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও মেলা, ক্লাবকে টাকা দেওয়া, ইমাম-ভাতা, ত্রিফলা বাতি, নীল সাদা রং-সহ সৌন্দর্যায়ন, কিছুই বন্ধ হয়নি। এই অপচয় নিয়ে ইতিমধ্যেই আপত্তি তুলেছে কংগ্রেস।
অসীমবাবু এ দিন বলেন, বাজেট অনুযায়ী সরকারের কাছে পরিকল্পনা খাতে ২৩ হাজার ৩৭১ এবং পরিকল্পনা বর্হিভুত খাতে ১০ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা থাকার কথা। কিন্তু সরকারের পক্ষে থেকে বলা হচ্ছে টাকা নেই। কেন্দ্রীয় অনুদানের টাকা রাজ্য পাচ্ছে না, এমন অভিযোগ তিনি শোনেননি এ কথা জানিয়ে অসীমবাবু বলেন, “রাজ্যের নিজস্ব কর আদায় কমেনি। বরং বলা হচ্ছে, তা বেড়েছে। তা হলে সরকারের হাতে টাকা নেই কেন?” কেন্দ্রীয় অনুদানের টাকা কিস্তিতে দেওয়া হয়। একটি কিস্তির খরচের শংসাপত্র (ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট) জমা দেওয়ার পরেই পরের কিস্তির টাকা পাওয়া যায়। অসীমবাবুর প্রশ্ন, “তা হলে কি ঠিক মতো খরচের হিসাবপত্র জমা দেওয়া হচ্ছে না?” ২০১১ সালে মোট ঋণের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের উপরে ছিল মহারাষ্ট্র এবং উত্তরপ্রদেশ। মাথাপিছু ঋণের ক্ষেত্রে এই দু’ রাজ্য তো বটেই গুজরাতও পশ্চিমবঙ্গের উপরে ছিল। বামেরা যখন তৃণমূলের হাতে রাজ্যের ভার ছাড়ে তখন সরকারের মোট ঋণ ছিল ১ লক্ষ ৯২ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লক্ষ ২৬ হাজার কোটি। ঋণ কেন এত বাড়ল, অসীমবাবু সে প্রশ্নও তুলেছেন। |