সংখ্যালঘুদের গৃহনির্মাণ প্রকল্প ‘গীতাঞ্জলি’ থমকে গিয়েছে উত্তর ২৪ পরগণায়। মুখ্যমন্ত্রী ঘটা করে ঘোষণা করার এক বছর পর টাকা এসে পড়ে রয়েছে ২২টি ব্লকের জন্যই। কিন্তু কাজে রাজি নন কোনও ঠিকাদার। কোথাও বা টেন্ডারই ডাকা হয়নি এখনও।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘গীতাঞ্জলি’ প্রকল্পে এক একটি গৃহ নির্মাণের জন্য সরকারি বরাদ্দ ১ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা। ২০১১-’১২ অর্থবর্ষে প্রথম পর্যায়ের অনুদান (মাথাপিছু ৮৩.৫ হাজার টাকা) ব্লকে ব্লকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে টেন্ডার ডাকার পরে কোনও ঠিকাদার তাতে অংশ নেননি। কেন এই অনাগ্রহ? প্রশাসনের একাংশ মনে করছেন, যে টাকা ধার্য হয়েছে, তার মধ্যে বাড়ি তৈরি বেশ কঠিন। বিশেষত, উপভোক্তারা তাঁদের পছন্দমত মালপত্র সরবরাহ করার দাবি করতে পারেন। কম দামের মালপত্র দেওয়া হলে প্রতিবাদ উঠবে। ইমারতি দ্রব্যে মূল্যও অনেক বেড়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদারের কথায়, “কম টাকার কাজ। তার উপর এ কাজে লাভ থাকবে সামান্যই। সেই কারণেই টেন্ডারে অংশ নিইনি।”
জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল বলেন, “জেলার ২২টি ব্লকেই প্রকল্পের প্রথম কিস্তির টাকা এসে গিয়েছে। কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে এটা ঠিক। এই ব্যাপারে বিডিওদের সঙ্গে কথা বলা হবে।”
বনগাঁ ব্লকে ৪১ জন উপভোক্তার জন্য ইতিমধ্যেই টাকা এসে গিয়েছে। কিন্তু ই-টেন্ডারিংয়ে দু’মাস ধরে কোনও সাড়া মেলেনি। বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৌমেন দত্তের দাবি, “তিন বারেও কোনও ঠিকাদারই টেন্ডারে যোগ দেয়নি। তাই আমি জেলাশাসককে বলেছিলাম, গৃহনির্মাণের জন্য বরাদ্দ টাকা সরাসরি উপভোক্তাদের হাতে দেওয়া হোক। কিন্তু তিনি তার অনুমতি দেননি।”
হাবরা ১ ও হাবরা ২ ব্লকে নির্দিষ্ট প্রাপক আছেন যথাক্রমে ৩৩ জন এবং ৪২ জন। প্রথম কিস্তির টাকা এসে পড়ে থাকলেও এখনও টেন্ডার হয়নি। বাগদা ব্লকেও তিনজনের জন্য বরাদ্দ এসে পড়ে থাকলেও টেন্ডার হয়নি।
তাজমিরা বিবি, নিজাম মণ্ডল, জামাদ আলি, ইব্রাহিম মণ্ডলরা বললেন, “একটা পাকা ঘর হবে তার স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু টাকা এসে পড়ে থাকলেও আমাদের ঘর তৈরি হচ্ছে না। জানি না আর ঘর পাব কি না? তবে দরকার হলে আদালতেও যাব।” সমাধানের আশ্বাস দিয়ে অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ই-টেন্ডারিংয়ের বদলে সাধারণ টেন্ডার ব্যবস্থার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা যায় কি না তা নিয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে আলোচনা করব।” |