সাবেরী প্রামাণিক • কলকাতা |
ইংরেজি তাঁর প্রিয় বিষয়। ঠিক করে রেখেছিলেন, উচ্চ মাধ্যমিকের পরে ইংরেজি অনার্স নিয়েই পড়বেন। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মার্কশিট দেখেই চক্ষু চড়কগাছ! যে-বিষয়ের প্রতি তাঁর এত টান, সেই ইংরেজিতে তিনি পেয়েছেন মাত্র ৩০। ফলে ইংরেজি অনার্স পড়ার সুযোগ হয়নি হুগলির অমৃক চট্টোপাধ্যায়ের।
হালও ছাড়েননি ওই ছাত্র। তাঁর স্থির বিশ্বাস, ইংরেজিতে এত কম নম্বর কিছুতেই পেতে পারেন না তিনি। নিশ্চিত ছিলেন, কোথাও একটা ভুল হয়েছে! হলও তা-ই। পুনর্মূল্যায়নে অমৃকের ইংরেজির নম্বর বেড়ে হয়েছে ৮৩। ওই বিষয়ে অনার্স পড়ার পক্ষে নম্বরটা যথেষ্টই। কিন্তু কলেজে তো ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই। অগত্যা অমৃককে ভর্তি হতে হয়েছে অন্য বিষয়ে। তাঁর ইংরেজি অনার্স পড়ার দরজা আপাতত বন্ধ। হুগলির দিগরা মল্লিকহাটি দেশবন্ধু বিদ্যাপীঠ থেকে এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন অমৃক। গত ৪ জুলাই ফল বেরোতে দেখা যায়, অন্যান্য বিষয়ে মোটের উপরে ভাল নম্বর পেলেও ইংরেজিতে তিনি পেয়েছেন ৩০। অমৃক বলেন, “বুঝতে পারছিলাম, নিশ্চয়ই কোথাও একটা ভুল হয়েছে। তাই পুনর্মূল্যায়নের আবেদন জানাই। বছর নষ্ট করব না বলে বাংলায় অনার্স নিয়ে উত্তরপাড়া রাজা প্যারীমোহন কলেজে ভর্তিও হয়ে যাই।” অগস্টের প্রথম সপ্তাহে যখন পুনর্মূল্যায়নের ফল বেরোয়, তখনও কিন্তু সংশোধিত ফল হাতে পাননি অমৃক। ৮ সেপ্টেম্বর তিনি জানলেন, ইংরেজিতে ৩০ নয়, পেয়েছেন ৮৩ নম্বর। ইংরেজিতে এত নম্বর বাড়ায় তাঁর সার্বিক গ্রেডও এক লাফে অনেকটা উন্নীত হল। ‘বি+’ গ্রেড হয়ে গেল ‘এ’। আর মোট নম্বর ৩০৮ থেকে বেড়ে হয়ে গেল ৩৬১।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রের খবর, অমৃক একাই নন। এ বছর এই ধরনের ঘটনা আরও ঘটেছে। সংসদের এক কর্তা বলেন, “কারও নম্বর ১৭ থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৬, কারও বা ৩৪ থেকে বেড়ে ৮৪ হয়েছে। পরীক্ষক ও স্ক্রুটিনিয়ারদের গাফিলতিতেই এমনটা হয়। ওঁরা নম্বর লেখার সময় ভুল করে ফেলেন। যার জেরে ভুগতে হয় পরীক্ষার্থীদের।”
সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ধরনের বিভ্রাট শুধু যে এ বছরেই হয়েছে, তা নয়। কয়েক বছর ধরেই এমন গোলমাল ধরা পড়ছে উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে। সংসদের সভাপতি মুক্তিনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এ ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছে, দেখতে হবে। শিক্ষকদের গাফিলতি থাকলে যাতে ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তার জন্য স্কুলশিক্ষা দফতরের কাছে আবেদন জানিয়েছি। মার্কশিট তৈরির সময়েও ভুল হয়ে থাকতে পারে। সে-ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে যাতে ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা দেখা হবে।” কিন্তু অমৃক যে তাঁর প্রিয় বিষয় ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে ভর্তি হতে পারলেন না, পুনর্মূল্যায়নের ফল দেরিতে পাওয়াটাও তো তার অন্যতম কারণ। ওই পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্রের পুনর্মূল্যায়নের ফল সময়মতো বেরোল না কেন? সভাপতি বলেন, “সেটা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।”
ফল-বিভ্রাটের কারণ বিস্তারিত ভাবে জানিয়ে কলেজের অধ্যক্ষের কাছে আবেদন-নিবেদন করেও লাভ হয়নি। তাই পছন্দের বিষয় পড়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য অমৃক শেষ পর্যন্ত খোদ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কাছে আর্জি জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “দায় যাঁরই হোক, ভুগতে হল আমাকে। অথচ আমার তো কোনও দোষ নেই!” শিক্ষামন্ত্রী বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। |