কাল গোল করলে সেটা কি উৎসর্গ করবেন করিম বেঞ্চারিফাকে? স্টেডিয়াম ছেড়ে টিম বাসের দিকে হাঁটতে হাঁটতে ওডাফা ওকোলি বলে দেন, “কেউ বলতে পারে কাল কী হবে? ঈশ্বর চাইলে গোল হবে। আগে তো গোল করি। তার পর ওসব নিয়ে ভাবা যাবে।”
স্টেডিয়াম থেকে মাইলখানেক দূরের এক হোটেলে বসে ‘বৃদ্ধ সিংহ’ কিন্তু গজরাচ্ছেন! “মোহনবাগানের বিরুদ্ধেই আমার সবথেকে বেশি গোল আছে। মনে হচ্ছে দু’টো হ্যাটট্রিকও করেছি। আমি যে ইয়াকুবু এটা প্রমাণ করতে চাই। ইনসাল্লাহ,” বলার সময় শান্ত ইউসিফ ইয়াকুবুর গলায় জেদ।
ভারতীয় ফুটবলের দুই গোলমেশিননাইজিরিয়ান আর ঘানাইয়ানের সঙ্গে অদ্ভুত এক রসায়ন রয়েছে করিম বেঞ্চারিফার। ওডাফার সঙ্গে ছ’বছর আগে ঝামেলার জেরে চার্চিল ছেড়েছিলেন মরক্কান কোচ। আবার দু’বছর আগে করিমের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ইয়াকুবু ছেড়েছিলেন সালগাওকর। ‘বিশ্বের কোনও কিছুই স্থিতিশীল নয়’ এই ফর্মুলায় সবুজ-মেরুনে এসে করিম-ওডাফা আপাতত মিলেমিশে একাকার। অনেকটা নিজেদের স্বার্থে। এতটাই যে, বুট পরা থেকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলাসব বিষয়েই কোচের ‘নির্দেশ’ চাইছেন মোহন-অধিনায়ক। ইয়াকুবু কিন্তু রয়ে গিয়েছেন দূরেই। রবিবার পুণেতে ওডাফা বনাম ইয়াকুবু নয়, লড়াইটা কিন্তু করিমের স্ট্র্যাটেজি বনাম ইয়াকুবুর জেদের। |
|
|
আজ যুযুধান: ঘানার ইয়াকুবু, মরক্কোর করিম। |
|
আই লিগে ইয়াকুবুই একমাত্র ফুটবলার যাঁর বয়স দলের কোচের চেয়ে বেশি। মুম্বই এফসি কোচ খালিদ জামিলের বয়স ৩৫। আর তাঁর সেরা স্ট্রাইকারের ৩৭। তবুও এই ‘বৃদ্ধকে’ নিয়েই সবথেকে বেশি চিন্তা করিমের। আসলে পোড়খাওয়া মোহন-কোচ জানেন গোলের সামনে ওডাফার মতোই এখনও ভয়ঙ্কর ইয়াকুবু।
কিন্তু মুম্বই স্ট্রাইকারের উপযুক্ত ওষুধ যিনি হতে পারতেন করিমের, সেই অস্ত্রই তো ভোঁতা। চোটের জন্য নাইজিরিয়ান ইচে-নেই ম্যাচে! শনিবার সকালের অনুশীলনে দুই চোট পাওয়া স্টপার ইচে এবং মেহরাজউদ্দিনকে নিয়ে সারাক্ষণ পড়ে থাকলেন দলের রিহ্যাব স্পেশালিস্ট জোনাথন। দিনের শেষে তার কোনও ফল অবশ্য পাওয়া যায়নি। করিমের সহকারী মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায় যে রক্ষণকে খেলিয়ে চার ম্যাচে ১০ পয়েন্ট এনেছিলেন, হজম করেছিলেন মাত্র এক গোল, ইচ্ছে না থাকলেও সেটাই বদলাতে হচ্ছে নতুন মোহন-কোচকে। ইচে না খেলায় স্টপারে চলে যাচ্ছেন রাইট ব্যাক নির্মল ছেত্রী। নির্মলের জায়গা নিচ্ছেন করিমের ‘এসিয়েন’ রহিম নবি। তাঁর জায়গায় মাঝমাঠে মণীশ ভার্গব। “ওদের ইয়াকুবু-ওপারা আছে। রক্ষণটা পুরো থাকলে আমাদের ভাল হত।” চিন্তার বলিরেখা ফুটে বেরোয় বাগানে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করতে যাওয়া করিমের মুখে।
রক্ষণের ভারসাম্যে পরিবর্তন ছাড়া মোহনবাগান রয়েছে ফুরফুরে মেজাজে। এবং সেটা করে রেখেছেন ওডাফা। মাথায় নতুন একটা ফেজ টুপি পরে ঘুরছেন হোটেল থেকে মাঠ। হাসতে হাসতে বলছেন, “এটা আমার নতুন স্টাইল। ভাবছি এটা পরে ফ্যাশন শো-তে যাব।” ওয়ান স্ট্রাইকারে খেলাচ্ছেন কোচ। কুছ পরোয়া নেই। লাঞ্চ বা ডিনার টেবিলে নবি-স্নেহাশিসদের সঙ্গে নানা খুনসুটি করছেন। টিম মিটিংয়ে বসার আগে ঘাড়ে চোট পাওয়া মেহরাজকে স্টপারে দাঁড় করালে কী হবে, নকল করে দেখাচ্ছেন। হাসিতে ফেটে পড়ছে পুরো দল। ওডাফার ভ্রু কুঁচকে যাচ্ছে শুধু অস্ট্রেলিয়া চলে যাওয়া সতীর্থ টোলগের নাম শুনলে “আমি আমাদের টিমের জেতার কথা ভাবছি। অন্য কিছু নয়।”
মরক্কো থেকে এসএমএসে মৃদুল-হেমন্তদের যে ফর্মেশন বলতেন, সেই ৪-৪-১-১-এ কাল দল নামাচ্ছেন করিম। ওডাফার পিছনে স্ট্যানলি পেন্ডুলামের মতো দুলবেন। মোহনবাগানে প্রথম ইনিংসে ভাইচুংয়ের পিছনে যেমন খেলাতেন ব্যারেটোকে। তখনকার ভাইচুংয়ের মতো এখনকার ওডাফার উপরই গোলের জন্য নির্ভর করছেন করিম। মুম্বই কোচও মানছেন বাগানের ওডাফাই সব। “ওডাফাকে আটকাতে পারলেই অর্ধেক কাজ শেষ। ওকে ক্লোজ মার্কিংয়ে রাখতে হবে।” সেই দায়িত্ব দিচ্ছেন ওডাফারই স্বদেশীয় ইভান্সকে। করিম দুই বিদেশি নামালেও মুম্বই নামছে ইয়াকুবু-সহ চার বিদেশি নিয়ে।
করিম-বাগান রসায়নের আগের এপিসোডে সাফল্য ছিল চমকে দেওয়ার মতো। ৭৮ ম্যাচে ৪৫ জয়। করিম-পরবর্তী বাগানে বড় ট্রফি নেই। আবার করিম। বাগানে আবার ফুল ফুটবে কি? |