ইস্টবেঙ্গলকে এখন সেরা মানছেন বিপক্ষ কোচেরাও
ইস্টবেঙ্গল-৫ (চিডি, পেন, লালরিন্দিকা, মননদীপ, রবিন)
ওএনজিসি-০
যা চলছে, এ রকম আরও হবে!
‘সবই তো দেখছেন’ গোছের ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি দিয়ে যুবভারতী থেকে নিজেদের গাড়ির দিকে যাওয়ার আগে প্রয়াগ কোচ এলকো সাটোরি এবং সালগাওকর কোচ ডেভিড বুথ বলে গেলেন, “ইস্টবেঙ্গল এখন সেরা সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ওদের আটকাতে গেলে সবাইকেই পরিশ্রম করতে হবে।”
ইস্টবেঙ্গলের স্বর্ণযুগ যে শুরু হয়ে গিয়েছে, তা বোঝার জন্য সাটোরি বা বুথের বিশেষজ্ঞ মত না নিলেও চলে। পরিসংখ্যানের পাতা ওলটালেই সব ফুটে উঠবে। ফেড কাপ জিতে মরসুম শুরু। কলকাতা লিগে জর্জ ম্যাচ ড্র করা ছাড়া কোনও হোঁচট নেই। আর আই লিগ? আগের ম্যাচ থেকেই ‘ফার্স্ট বয়’ (৭ ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট)। গোল দিয়েছে চোদ্দোটা, হজম করেছে মাত্র একটা। টিমটার সাফল্যের রসায়ন কী? এএফসি কাপের ম্যাচগুলো সরিয়ে কারণ খুঁজতে বসলে চারটে ব্যাখ্যা উঠে আসবে—
নয়া অবতারে ওপারা: ইস্টবেঙ্গল রক্ষণে যাঁকে বেশির ভাগ সময়ই ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যেত, সেই ওপারা এখন বল নিয়ে তরতরিয়ে উঠছেন। নিটফল, মাঝমাঠ আর রক্ষণের মধ্যে দূরত্ব কমে যাওয়া। চিডি-মননদীপরা আরও সাবলীল ভাবে বিপক্ষের ছোট বক্সে তাণ্ডবলীলা চালানোর সুযোগ পাচ্ছেন। এ দিন ইস্টবেঙ্গলের প্রথম দু’টো গোলে চিডি আর পেনের নাম লেখা থাকলেও, অন্তরালে ওপারার ভূমিকাই বেশি। মাঝমাঠ থেকে তাঁর বাড়ানো দু’টো লম্বা বলের একটা ইসফাক সাজিয়ে দিলেন চিডি-র জন্য। শনিবাসরীয় দুপুরে নাইজিরিয়ান গোলমেশিনের গোলে আই লিগে পাঁচশো গোলের মাইলস্টোনও ছুঁয়ে ফেলল ইস্টবেঙ্গল। অন্যটা চিডি হেড করে নামালেন আর পেন লিখলেন গোলের ঠিকানা। মর্গ্যান বলছিলেন, “পেনের গোলটা ভুলতে পারব না।”
মশালের উত্তাপ আরও বাড়াল পেনের গোল। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
‘ধুমকেতু’র নাম ইসফাক: সঞ্জু-কেভিন-লালরিন্দিকাকে টপকে কেন এই কাশ্মীরি উইংগারকে ‘এগারোবর্তী’ পরিবারে রাখা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হয়েছে মর্গ্যানের। কিন্তু ইদানীং ইসফাক যে বিধ্বংসী মনোভাবের পরিচয় দিয়ে চলেছেন, তাতে তাঁর মধ্যে ‘ধুমকেতু’র ছায়া দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। যেখানেই পড়ছেন, বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছেন। সাহেব-কোচ ইসফাককে রেখেছেন শুধু বিপক্ষের খেলা ভণ্ডুল করার জন্য। তেড়েফুঁড়ে খেলো আর প্রতিপক্ষকে ধাঁধায় ফেলে দাও।
শিল্পী পেন: যত দিন এগোচ্ছে আরও যেন ধারালো হচ্ছেন লাল-হলুদের ‘ছোটবাবু’। নিখুঁত পাসিং এবং বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে খেলার প্রতিভা তো তাঁর মধ্যে ছিলই, এ বার তাতে বাড়তি সংযোজন গোল চেনার ক্ষমতা। এ দিন নিজে একটি করলেন, তিনটি করালেন মননদীপ, লালরিন্দিকা ও রবিনকে দিয়ে।
এবং মহাগুরু মর্গ্যান: লাল-হলুদের রত্নগর্ভে কী কী প্রতিভা আছে, তাঁদের কখন কোথায় কী ভাবে ব্যবহার করতে হবে, সবই মর্গ্যানের মস্তিষ্কপ্রসূত। ম্যাচ জেতা এখন তাঁর অভ্যাসের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। ভারতীয় ফুটবলে মর্গ্যান ‘৩০ নট আউট’।
গোয়ার পরে কলকাতাতেও পাঁচ গোলের লজ্জা। কাকে বেশি ধারালো লাগল? সুভাষ ভৌমিক না ট্রেভর মর্গ্যান? ওএনজিসি কোচ সুব্রত ভট্টাচার্যের (পটলা) এক বাক্যে উত্তর, “এ বছর ইস্টবেঙ্গল আই লিগ না জিতলেই অবাক হব।” কিন্তু প্রশ্ন হল, পটলার দল পাঁচ বারের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন ডেম্পোকে হারিয়ে এসে ইস্টবেঙ্গলের সামনে পড়তেই মুখ থুবড়ে পড়ল কেন? সহজ উত্তর, যে দল ম্যাচ শুরুর দশ মিনিটের মধ্যেই ডিফেন্স সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, তাদের জেতার কোনও অধিকার নেই। প্রাক্তন কিংবদন্তি ফুটবলার গৌতম সরকার যে জন্য বলছিলেন, “ওরা ভেবেছিল ডেম্পোকে হারিয়ে আই লিগের সর্বোচ্চ পুরস্কার পেয়ে গিয়েছে। এ রকম দল চমকই দেখাবে, ধারাবাহিকতা নয়।”
শনিবারের ম্যাচে ওএনজিসি কোচের সঙ্গে অবশ্য ভাগ্যও কিছুটা প্রতারণা করল। শুরুতেই প্রধান স্ট্রাইকার এরিক চোট পেয়ে বেরিয়ে গেলেন। বিরতির পরে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে এগোয়, প্রধান স্টপার সন্দেশ সঙ্ঘ লালকার্ড দেখায়। শেষ আধ ঘণ্টায় দশ জনে খেলে তিন গোল হজম করে তেল কোম্পানির দল। মর্গ্যান বললেন, “ওরা দশ জন হয়ে যাওয়ায় আমরা অনেক খালি জায়গা পেয়ে যাই। তবে সব ম্যাচেই যে এ রকম হবে, তা কিন্তু নয়।”

ইস্টবেঙ্গল: গুরপ্রীত, নওবা, অর্ণব, ওপারা, সৌমিক (রবার্ট), হরমনজিৎ, মেহতাব, পেন, ইসফাক (লালরিন্দিকা), চিডি (রবিন), মননদীপ।

রবিবারে আই লিগ ফুটবলে


মোহনবাগান: মুম্বই এফসি (পুণে ৭-০০)




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.