’৭১-এর ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের অন্যতম স্থপতি ছিলেন তিনি। তাঁর অধিনায়কত্বেই ব্রিটিশ সিংহের ডেরায় ভারতের প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়।
একান্ন বছর পর, আবার এক ভারত বনাম ইংল্যান্ড টেস্ট-যুদ্ধ। তাঁর নিজের শহরেই। এবং মুম্বইয়ে বসে অজিত ওয়াড়েকরের আফসোস হচ্ছে!
কেন? চেতেশ্বর পূজারা তখন ছিলেন না যে! প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের মনে হচ্ছে, তিনি যদি ঐতিহাসিক ’৭১-এর টিম লিস্ট তৈরি করার ফের সুযোগ পেতেন, তা হলে শুরুর দিকেই থাকতেন পূজারা!
ওয়াংখেড়ের প্রেসবক্স থেকে ওয়াড়েকরকে যখন ধরা গেল, তার একটু আগে শেষ হয়েছে পূজারার এই সিরিজের আরও একটি মহাকাব্য। সতেরো ঘণ্টা পর সিরিজে তাঁকে প্রথম আউট করতে পেরেছে ইংল্যান্ড! “শুধু টেকনিক, টেম্পারামেন্ট নয়, ছেলেটা সব সময় যেন রানের প্রবল খিদে নিয়ে ঘুরছে। এক বার ব্যাট করতে নামলে, উইকেট ছেড়ে নড়তে চায় না। অসম্ভব ধৈর্য। আমি একাত্তরের টিমটা আবার করার সুযোগ পেলে ওকে নিঃসন্দেহে রাখতাম।”
কিন্তু যে টিমে গাওস্কর-সরদেশাই-বিশ্বনাথ ছিলেন, সেখানে পূজারা? উত্তরে ফোনের ও পার থেকে পালটা প্রশ্ন উড়ে আসে। “কেন নয়? আমি গাওস্কর-বিশ্বনাথদের দেখেছি। পরে দ্রাবিড়কেও দেখেছি। কারও সঙ্গে তুলনায় যাচ্ছি না। কিন্তু পূজারাও অ্যাসেট। আমার টিম শুধু নয়, ভারতের যে কোনও টেস্ট টিমে ও হাসতে হাসতে ঢুকবে।”
ক্রিকেটবিশ্বে ইতিমধ্যেই দ্রাবিড়ের সঙ্গে দাঁড়িপাল্লায় তোলা হচ্ছে পূজারাকে। ‘দ্রাবিড় বনাম পূজারা’ এখন ভারতীয় মিডিয়ারও পছন্দের ‘মেনু’-তে এক নম্বরে। ওয়াড়েকরও বা ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন নক্ষত্রকে ঘিরে আবেগ-সাগরের বাইরে থাকতে পারছেন কই? তাঁর কাছে রাহুল দ্রাবিড় এখনও মোটেই ‘অতীত’ নন। বরং সশরীরে ‘বর্তমান’। “পূজারা ছেলেটার সঙ্গে দ্রাবিড়ের অনেক মিল আছে। অনেকেই হয়তো বলবেন যে, বিদেশে পূজারা পরীক্ষায় বসল কোথায়? আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, বিদেশেও পূজারার কোনও সমস্যা হবে না। ঠিক পেরে যাবে। ছেলেটা এক কথায় দ্রাবিড়ের সঠিক রিপ্লেসমেন্ট,” সোজাসাপ্টা উত্তর ওয়াড়েকরের। বয়স হয়েছে, কথা বলতে-বলতে একটু থামতেও হয়। আবার শুরু করলেন, “ওর সামনে কতগুলো বছর এখনও পড়ে আছে, ভাবুন তো? সবে এসেছে, বিদেশে পারবে না, এটাই বা বলা হবে কেন? রাহুলের শুরুটা কিন্তু এত ভাল হয়নি। ও যেটা করেছে।”
আর নায়ক নিজে? ম্যাচের পর তাঁকে ওয়াড়েকরের বক্তব্য নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে পূজারার সলজ্জ উত্তর, “বিশাল কমপ্লিমেন্ট।” দ্রাবিড়ের সঙ্গে তাঁর তুলনা টানা যে চরম অপছন্দের সেটা বুঝিয়ে দিলেন বারবার। “আরে, কোথায় রাহুল আর কোথায় আমি? ওর টেস্টে দশ হাজার রান আছে। আর আমি এখন সবে হাঁটা শুরু করেছি। খামোখা এ সব ভেবে নিজের উপর চাপ সৃষ্টিতে যাব কেন?” আমদাবাদের ডাবল সেঞ্চুরি তাঁকে এত তৃপ্তি দেয়নি, ওয়াংখেড়ের সেঞ্চুরি যা দিয়েছে। বলে দিচ্ছেন, “দু’টো টেস্টের পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল। আমার রান দু’টোর গুরুত্বও তাই আলাদা। মোতেরায় অনেক খোলা মেজাজে ব্যাট করতে পেরেছিলাম। কিন্তু মুম্বইয়ে সেটা হয়নি। ওরা এখানে অনেক ভাল বল করেছে। তা ছাড়া আমার এখানকার রানটাও টিমের পক্ষে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। চাপও অনেক বেশি ছিল। মোতেরার চেয়ে তাই আমার কাছে এগিয়ে মুম্বই।” আপনার পরের লক্ষ্য কী? মৃদু গলায় এ বার সহজ উত্তর, “কেন? এই ধারাবাহিকতাটা রেখে যাওয়া। যেটা ক্রিকেটে সবচেয়ে জরুরি।”
পূজারার আকাশের সীমানাটা বোঝা যাচ্ছে? |