দুপুর-দুপুর ওয়াংখেড়েতে জনৈক ক্রিকেটভক্ত ভাসিয়ে দিলেন টুইটটা।
‘মিস্টার অনিল কুম্বলে। উই আর মিসিং ইউ ব্যাডলি! এই পিচে যদি আপনি থাকতেন...।’
সহজ চোখে আশ্চর্যই ঠেকবে। যে পিচে বাউন্স আছে, শেন ওয়ার্ন রায় দিচ্ছেন বল নাকি ঘুরবে লাট্টুর মতো, ধোনির হাতে তিন স্পিনার, সেখানে অনিল কুম্বলে কেন! হরভজন আছেন। বাউন্স কী ভাবে আদায় করতে হয়, দীর্ঘ ক্রিকেটজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে নিশ্চয়ই জানেন। আর বল ঘোরানো? কেন, রবিচন্দ্রন অশ্বিন? তাঁর ক্যারম বল?
আর ক্যারম বল! চা-বিরতিতে দেখা গেল প্রেসবক্সের বাইরে ব্রিটিশ সাংবাদিকদের আড্ডা বসেছে। জটলায় মাইক আথারটনও দাঁড়িয়ে। আলোচ্য বিষয়: মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এ বার কী বলবেন? টার্নার চেয়েছিলেন, পেয়েছেন। এক নয়, দুই নয়, ন’টা উইকেট তুলেছেন মন্টি পানেসর-গ্রেম সোয়ান মিলে। আর তিন স্পিনার লেলিয়ে ধোনির ইংরেজ-শিকারের সংখ্যা? দুই। স্রেফ দুই!
আধ-এক ঘণ্টায় নয়, দু’টো সেশন ধরে অক্লান্ত খাটাখাটনির পর। কোথায় প্রবাসে ০-৪-এর বদলায় ব্রিটিশ-শাসন রোজনামচা হবে এ দেশে, উল্টে দিনভর ওয়াংখেড়েকে শুনতে হল দুই ব্রিটিশের সিংহগর্জন। ক্যাচ পড়ল, কুকের সপাট সুইপে মাঠে লুটিয়ে পড়লেন পূজারা, ওঝা ছাড়া বাকি দুই স্পিনার পাসমার্ক পর্যন্ত পেলেন নামাঠের চতুর্দিকে শুধু লাঞ্ছনার ছবি। অ্যালিস্টার কুককে তবু বিব্রত করা গিয়েছে, কিন্তু কেভিন পিটারসেন? তাঁর দুর্গে তো সামান্য আঁচড়ও কাটা গেল না। বরং চরম ঔদ্ধত্য নিয়ে দুই ইংরেজ দেখিয়ে দিলেন, ভারতে সফরে স্পিনের হাঁড়িকাঠে মাথা দেওয়ার আঠাশ বছরের বদনাম তাঁরা অন্তত মোছার চেষ্টা করবেন। কুক-পিটারসেনের জন্যই টেস্টের স্টিয়ারিং আচমকা ধোনির হাতছাড়া। এবং অশ্বিন-হরভজনদের থেঁতলানি খাওয়া যদি রবিবাসরীয় মুম্বইতেও চলে, তা হলে ফলাফল অন্য রকম হতেও পারে। |
কিং পিটারের শাসনে ওয়াংখেড়ে। ছবি: উৎপল সরকার |
মুম্বইয়ের তাজ হোটেলে নিজের জন্য আলাদা ‘রয়্যাল স্যুইট’-এর ব্যবস্থা করেছেন পিটারসেন। সোয়ানদের মতো গড়পড়তা রুম তাঁর জন্য নয়। তাঁর এই রাজকীয় হালচাল নিয়ে ফের বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারত, কিন্তু উঠছে না। কারণ, বাইশ গজেও রাজকীয় প্রত্যাবর্তন ঘটে গিয়েছে কিং পিটারের। ব্যাটিংয়ের স্বভাবসিদ্ধ ক্যারিশমা নিয়ে আপাতত ৭৯ বলে ৬২ নট আউট। যে ইনিংস পরে মহীরূহে বদলে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। স্ট্রাইড ব্যবহার করে পিটারসেনের স্পিন সামলানোর পদ্ধতি এখানে কাজ করছে। একটা রিভার্স সুইপ এমন চকিতে বাউন্ডারির দিকে ছুটল যে, অবাক বিস্ময়ে রোদচশমা খুলে ফেলতে হল রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে। অ্যালেস্টার কুকও কম কী? স্পিনটা বরাবরই অসম্ভব ভাল খেলেন। আমদাবাদের ১৭৬-এর পর খুব সম্ভবত আরও একটা রূপকথা আসছে। চলতি সিরিজে কুকের গড় তিনশো পেরিয়েছে। ইংরেজ অধিনায়কের আর ১৩ রান দরকার ২২ নম্বর টেস্ট সেঞ্চুরি পেতে।
ধোনি চেষ্টা কম করেননি। অশ্বিন-ওঝা দিয়ে প্রথম ইনিংসে বোলিং ওপেন করিয়ে ক্রিকেটমহলে বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন। ওয়াড়েকর বলছিলেন, “হাতে চার বাঘা স্পিনার নিয়েও আমি এটা ভাবতে পারিনি।” কিন্তু স্পিনাররা না পারলে আর কী করা যাবে? যে দিকে ফিল্ড সাজানো, মাঝেমধ্যেই তার উল্টো বরাবর বল পড়ল অশ্বিনের। দীর্ঘ দিন জাতীয় দলের বাইরে থাকা সর্দারের থেকেও পুরনো বিষ পাওয়া গেল না। মন্দের ভাল ওঝা। কিন্তু পানেসর হাওয়ায় যে গতিটা মিশিয়ে দিতে পারেন, ওঝার গতি তত নয়। ওয়াংখেড়েতে যেটা দরকার ছিল।
দিনের শেষে ভারতীয় শিবির থেকে দোষ চাপানো হল আম্পায়ারিংয়ের উপর। কয়েকটা সিদ্ধান্ত নাকি বিপক্ষে গিয়েছে। সান্ত্বনার খোঁজ? কে জানে। অশ্বিনের ৬৮, পূজারার মহাকাব্য না থাকলে হাল আরও খারাপ হতে পারত ভারতের। ১৭ ঘণ্টা, ৭৯২ বল খেলে শেষ পর্যন্ত থামলেন পূজারা। দু’বার আউট হওয়ার ফাঁকে ভারতীয়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড সচিনের। ৪৯৭। পূজারা থামলেন ৩৯২-তে।
ধোনির সংসারে ওই এক বারই যা সূর্য উঠল।
|
খেলার স্কোর |
ভারত
প্রথম ইনিংস
(আগের দিন ২৬৬-৬) |
পূজারা স্টাম্পড প্রায়র বো সোয়ান ১৩৫,
অশ্বিন এলবিডব্লিউ পানেসর ৬৮,
হরভজন এলবিডব্লিউ সোয়ান ২১,
জাহির ক বেয়ারস্টো বো সোয়ান ১১,
প্রজ্ঞান নঃআঃ ০,
অতিরিক্ত ২,
মোট ৩২৭।
পতন: ৪, ৫২, ৬০, ১১৮, ১১৯, ১৬৯, ২৮০, ৩১৫, ৩১৬।
বোলিং: অ্যান্ডারসন ১৮-৩-৬১-১, ব্রড ১২-১-৬০-০,
পানেসর ৪৭-১২-১২৯-৫, সোয়ান ৩৪.১-৭-৭০-৪, সমিত ৪-১-৬-০।
|
ইংল্যান্ড
প্রথম ইনিংস |
কুক ব্যাটিং ৮৭,
কম্পটন ক সহবাগ বো প্রজ্ঞান ২৯,
ট্রট এলবিডব্লিউ প্রজ্ঞান ০,
পিটারসেন ব্যাটিং ৬২,
অতিরিক্ত ০,
মোট ১৭৮-২।
পতন: ৬৬, ৬৮।
বোলিং: অশ্বিন ২২-৫-৫৪-০, প্রজ্ঞান ২১-৩-৬৫-২,
জাহির ৮-৪-১২-০, হরভজন ১৪-০-৪৭-০। |
|
|