ফের সেই ৫.৫ শতাংশের ‘গেরো’তে আটকে যাবে বৃদ্ধির হার। চলতি অর্থবর্ষের প্রথমের পর দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকেও। সব মিলিয়ে, টানা তিন ত্রৈমাসিকে অব্যাহত থাকবে ছয় শতাংশের গণ্ডি পেরোতে তার ব্যর্থতা। শনিবার এই আশঙ্কা প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের দাবি, সে ক্ষেত্রে খাদের ধারে দাঁড়ানো দেশের অর্থনীতির মোড় ঘোরাতে প্রবল চাপে পড়বে কেন্দ্র। বাধ্য হবে সংস্কারের নীতি কার্যকর করতে প্রয়োজনে কিছু কড়া, অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে।
অর্থমন্ত্রীর আশঙ্কা, তা না-হলে, অর্থবর্ষ শেষেও বৃদ্ধি পড়ে থাকবে সেই ৫.৫ শতাংশের তলানিতে। ২০০২-’০৩ সালের পর গত এক দশকে যা সর্বনিম্ন।
পুণের এক ব্যাঙ্কিং সম্মেলনে যখন চিদম্বরম এ কথা বলছেন, সে দিনই কলকাতায় পা রেখে দেশের অর্থনীতির এই সঙ্কটের ‘ডিএনএ বিশ্লেষণ’ করে গেলেন সি রঙ্গরাজন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টার দাবি, এই মুহূর্তে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর অন্যতম শর্ত উৎপাদন শিল্প (কল-কারখানায় উৎপাদন) ফের চাঙ্গা হওয়া। কিন্তু তার
|
সি রঙ্গরাজন
-নিজস্ব চিত্র |
|
পি চিদম্বরম।
ছবি: পিটিআই |
জন্য সুদ কমা জরুরি। মূল্যবৃদ্ধি এখনও চড়া থাকায় যা এখনও পর্যন্ত করতে পারেনি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
এ দিন মার্চেন্টস চেম্বার অফ কমার্সের সভায় রঙ্গরাজন বলেন, মুল্যবৃদ্ধির নাছোড় সমস্যা যুঝতে গিয়ে সুদ কমানো যাচ্ছে না। ফলে খরচ বাড়ছে মূলধন সংগ্রহের। ভাটা পড়ছে লগ্নির উৎসাহে। এর জেরে থমকে যাচ্ছে উৎপাদন শিল্পের বৃদ্ধি। হোঁচট খাচ্ছে দেশের অর্থনীতিও। যে কারণে ‘সব নষ্টের মূল’ মূল্যবৃদ্ধিকে কাবু করতে ভর্তুকি ছাঁটাইয়ে জোর দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, রাজকোষ ঘাটতিতে রাশ টানতে ইতিমধ্যেই পেট্রোল, ডিজেল ও রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি কমানোর মতো সাহসী পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্র। জোর দিচ্ছে সংস্কার রূপায়ণেও। এ সবের দৌলতে এই অর্থবর্ষের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে উৎপাদন শিল্প মাথা তুলতে শুরু করবে বলে আশাবাদী তিনি।
কিন্তু রঙ্গরাজনের মতো অন্তত এ দিন তেমন আশার কথা শোনাননি চিদম্বরম। বরং জানিয়েছেন, আগামী ৩০ নভেম্বরই বেরোবে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) জাতীয় আয়। সেই পরিসংখ্যানেও বৃদ্ধির হার প্রথম ত্রৈমাসিকের মতো ৫.৫ শতাংশেই আটকে থাকবে বলে আশঙ্কা তাঁর।
এই গাড্ডা থেকে উঠে আসতে তিনি যেমন সংস্কারের রথ ছোটানোয় জোর দিয়েছেন, তেমনই বিশেষ দায়িত্ব নিতে বলেছেন ব্যাঙ্কগুলিকে। তাঁর ধারণা, অর্থনীতির চাকায় গতি ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে। অন্তত দু’তিনটি আন্তর্জাতিক মাপ এবং মানের ব্যাঙ্ক গড়ে তোলার জন্য আহ্বান জানান তিনি। এই প্রসঙ্গে ফের তুলে আনেন ব্যাঙ্ক গড়তে ইচ্ছুক সংস্থাগুলিকে দ্রুত লাইসেন্স দেওয়ার কথা।
এই নয়া ব্যাঙ্কিং লাইসেন্স নিয়েই সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ডি সুব্বারাওয়ের সঙ্গে চিদম্বরমের মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। অর্থমন্ত্রীর মতে, দ্রুত এই লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করুক শীর্ষ ব্যাঙ্ক। আর সংসদে সংশোধিত ব্যাঙ্কিং আইন পাশের আগে তা করতে নারাজ সুব্বারাও। এ দিনও নিজের পুরনো অবস্থানেই অনড় থেকেছেন চিদম্বরম। বলেছেন, বর্তমান আইনে স্বচ্ছন্দে তা করতে পারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তার পর সংসদে সংশোধিত আইনও দ্রুত পাশ করিয়ে নেবে সরকার। |