জমি বা পরিকাঠামো সমস্যা কী ভাবে মিটবে, এখনও দিশা নেই। কিন্তু তার মধ্যেও শিল্প নিয়ে রাজ্যের যে নেতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে, তা মোছার চেষ্টায় আরও এক বার আসরে নামলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
শিল্পমহলের অভিযোগ, রাজ্যের জমি-নীতি স্বচ্ছ নয়। পরিকাঠামো উন্নয়নও নেই। তার উপরে রয়েছে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, যার ফলে শিল্পসংস্থার মধ্যে তৈরি হচ্ছে নিরাপত্তাহীনতা। এই পরিস্থিতির মোকাবিলাতেই এ বার দিল্লিতে সক্রিয় হতে চাইছে রাজ্য সরকার। ১৫ ডিসেম্বর ফিকি-র অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে জন্য দিল্লি আসবেন তিনি। তার পরপরই একটি শিল্প সম্মেলন করে দেশের বড় শিল্পপতিদের রাজ্যে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানাবে সরকার।
ভাবমূর্তি গড়ার সেই প্রক্রিয়ায় আজ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মঞ্চকেও ব্যবহার করতে চাইলেন অমিত মিত্র। বোঝাতে চাইলেন, রাজ্যে বিনিয়োগ আসছে। শুধু জাতীয় নয়, আন্তর্জাতিক মহল আগ্রহ দেখাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে।
রাজ্যে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে বলে আজ অমিতবাবু এই দাবি করলেও বাস্তব কিন্তু বলছে অন্য কথা। ইনফোসিস নিয়ে জট এখনও কাটেনি। সরকারের জমি-নীতির কারণে রাজ্যে ভারী শিল্প গঠনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। নিরাপত্তার অভাবে হলদিয়া ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে এবিজিকে। যা নিয়ে শুধু রাজ্যেই নয়, জাতীয় স্তরে সমালোচনার মুখোমুখি পড়তে হয় তৃণমূল সরকারকে। গোটা বিষয়টি গড়ায় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত। মুখ পোড়ে সরকারের। এই পরিস্থিতিতে আজ ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’-এ নেমে অমিতবাবু দাবি করেন, “অর্থমন্ত্রী হওয়ায় সব দফতরের ফাইল আমার হাত ঘুরেই যায়। তাই আমি জানি, গত দু’বছরে রাজ্য ভাল পরিমাণে আর্থিক বিনিয়োগ হয়েছে।”
কী সেই বিনিয়োগ? অমিতবাবুর দাবি, পর্যটন শিল্পে ছ’টি প্রকল্পে কয়েক হাজার টাকার বিনিয়োগ আসছে রাজ্যে। তাঁর কথায়, “এর মধ্যে গজলডোবায় ২০৭ একর জমিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিতে প্রায় ২৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ হচ্ছে। দার্জিলিঙের সোনাদাতেও পর্যটনের উন্নতিতে ৪৪০ কোটি টাকার বিনিয়োগ হচ্ছে। আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যেই বিনিয়োগের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে যাবে।”
কিন্তু জমি জটে আটকে থাকা ভারী শিল্পের ভবিষ্যৎ কি? খুব একটা আশার কথা শোনাতে পারেননি অর্থমন্ত্রী। তিনি শুধু জানান, কিছু সংস্থা রাজ্যের মিথেন বেস কয়লা খনিতে লগ্নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে।
পাশাপাশি, বহু ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে তৃণমূলের রাজনৈতিক দাদাগিরিও যে রয়েছে, তা-ও কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন অমিতবাবু। তিনি বলেন, “সমস্যা যে একেবারে নেই, তা নয়। সময় লাগবে। যদি আমরা ঠিক ভাবে কাজ করতে পারি, তা হলে শিল্পের অনুকূলে বাতাবরণ গড়ে উঠবে।”
একই সঙ্গে অমিতবাবুর দাবি করেন, শুধু দেশীয় সংস্থাই নয়, আমেরিকা ও বিট্রেনের বিভিন্ন বাণিজ্যগোষ্ঠী তাঁর কাছে ব্যক্তিগত ভাবে পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাঁর লন্ডন ভ্রমণের সময়ে বিট্রেনের ভারত বিষয়ক মন্ত্রী গ্রেগরি বার্কার বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ছাড়াও সৌর ও বায়ু শক্তিকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র গঠনে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
তা ছাড়া পশ্চিমবঙ্গ যে বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করছে, তা বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, ইয়ং প্রেসিডেন্ট অর্গানাইজেশন (ওয়াইপিও) সম্মেলন ছাড়াও ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে আইআইটি-র প্রাক্তনীরাও সম্মেলনের জন্য রাজ্যকেই বেছে নিয়েছেন।
|
কেন্দ্রের কাছে এ বার ২০ বছরের মেয়াদি ঋণ চাইলেন পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। এ দিন দিল্লিতে তিনি বলেন, তিন বছর সুদ ছাড়, বিশেষ আর্থিক সাহায্য-সহ নানা দাবি তাঁরা কেন্দ্রের কাছে করেছেন। কিন্তু সাড়া পাননি। কেন্দ্র অন্তত ২০ বছরের মেয়াদি ঋণের বিষয়টি বিবেচনা করতেই পারে। তবে, মিত্র বলেন, রাজ্য কখনওই দিল্লির কাছে ভিক্ষা চাইবে না। |